নিউজিল্যান্ডকে বদ করে বাংলাদেশের সিরিজ জয়: নায়ক মাহমুদউল্লাহ

স্পোর্টস ডেস্ক :

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের ৪র্থ ম্যাচে জিতে মিরপুরের রাতের আকাশ রঙিন করলো বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার পর এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও প্রথমবারের মতো কুড়ি ওভারের সিরিজ জিতে আরও একটি ইতিহাস রচনা করলো টাইগাররা।

বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের বোলিং তোপে একেবারেই সুবিধা করেত পারেনি নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা।

কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজ শুরু হয় গত ১ সেপ্টেম্বর। প্রথম দুই ম্যাচে দাপট দেখিয়ে জেতে স্বাগতিকরা।

গত ৫ সেপ্টেম্বর সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ জিতলে ইতিহাস লেখা হতো সেদিনই, তবে অপেক্ষা বাড়লেও আক্ষেপে পুড়তে হয়নি স্বাগতিকদের। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে কিউইদের ৯৩ রানে বেধে দিয়ে ৯৪ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে ৬ উইকেটের জয়। এতেই লেখা হয়েছে ইতিহাস!

মাত্র ৯৩ রানেই গুঁটিয়ে যায় কিউইদের ইনিংস। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটাও ছিল বেশ নড়বড়ে। প্রথম দুই ওভার থেকে স্কোর বোর্ডে ৪ রান তুলতে পারেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও নাঈম শেখ। দলীয় তৃতীয় ওভারে ব্যক্তিগত ৬ রানে কোল ম্যাককোঞ্চির বলে বিদায় নেন লিটন দাস। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ২৪ রানের পার্টনারশিপ গড়েন আরেক ওপেনার নাঈম শেখ।

কিন্তু মারমুখী খেলতে যাওয়া সাকিব ষষ্ঠ ওভারে আজাজ প্যাটেলের শিকার হন। ব্যক্তিগত ৮ রানে তিনি উইকেটরক্ষক টম ল্যাথামের কাছে স্টাম্পিং হন। একই ওভারের শেষ বলে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমেরও বিদায় হয়। বোল্ড হয়ে শূন্য রানে ফেরেন তিনি।চতুর্থ উইকেট জুটিতে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৫০ বলে ৩৪ রান করেন নাঈম। এই জুটি দলকে জেতানোর লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে রান আউটে কাঁটা পড়ে মাঠ ছাড়তে হয় নাঈমকে। ১৫তম ওভারে দলীয় ৬৭ রানে দুই রান নিতে গিয়ে আউট হন নাঈম। ৩৫ বলে ১টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৯ রান করেন এই বাঁহাতি।নাঈম ফেরার পর শেষ পর্যন্ত আফিফকে নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন মাহমুদউল্লাহ। ইনিংস শেষে ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

টস জিতে এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। নাসুম আহমেদের বল তুলে মারতে গিয়ে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ক্যাচে পরিণত হন রচিন রবীন্দ্র। দলীয় তৃতীয় ওভারে আরেক ওপেনার ফিন অ্যালেনকেও সাইফের ক্যাচে ফেরান নাসুম। ব্যাক্তিগত ১২ রানে মাঠ ছাড়েন তিনি।তৃতীয় উইকেট জুটিতে উইল ইয়ংকে নিয়ে ৩৫ রান করে বিপদ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক টম ল্যাথাম।

তবে মেহেদী হাসানের ঘূর্ণিতে ইনিংস বড় করা হয়নি ল্যাথামের। উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান স্টাম্পিং করে বিদায় করেন ২১ রান করা এই ব্যাটসম্যানকে।

কিউইদের ইনিংসে এরপর ঘূর্ণির জাদু দেখান নাসুম। ১২তম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে হেনরি নিকোলস ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগান এই বাঁহাতি।

সফরকারীদের ব্যাটিংয়ে একাই লড়ে যান উইল ইয়ং। তবে মোস্তাফিজুর রহমানের কাটারের সামনে বাকিরা আর কেউ দাঁড়াতেই পারেননি। তার শিকারে মাঠ ছাড়েন টম ব্লান্ডেল, কোল ম্যাককোঞ্চি, ব্লাইর থিকনার ও ইয়ং। ম্যাককোঞ্চিকে তো নিজেরই করা বলের ফিরতি শটে দারুণ এক ক্যাচে ফেরান। কিউই ইনিংসে ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ ৪৬ রান করা ইয়ংও তার বলে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দেন।

মাঝে আজাজ প্যাটেলকে ফিরিয়ে উইকেটে ভাগ বসান সাইফ।বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে নাসুম ও মোস্তাফিজ ৪টি করে উইকেট দখল করেন। একটি করে উইকেট পান মেহেদী ও সাইফ।এদিকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে টাইগারদের অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

নিউজিল্যান্ড : ১৯.৩ ওভারে ৯৩/১০ (রবীন্দ্র ০, অ্যালান ১২, ল্যাথাম ২১, ইয়ং ৪৬, দি গ্র্যান্ডহোম ০, ব্লান্ডেল ৪, ম্যাকনকি ০, হেনরি ১, অ্যাজাজ ৪,
টিকনার ২ ; মেহেদী ৪-০-২১-১, নাসুম ৪-২-১০-৪, সাইফউদ্দিন ৩-০-১৬-১, মুস্তাফিজ ৩.৩-০-১২-৪, সাকিব ৪-০-২৫-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৭-০)।

বাংলাদেশ : ১৯.১ ওভারে ৯৬/৪ (নাঈম ২৯, লিটন ৬, সাকিব ৮, মুশফিক ০, মাহমুদউল্লাহ ৪৩*, আফিফ ৬*; বেনেট ৩-০-১৭-০, ম্যাকনকি ৩.১-০-৩৪-১, রবীন্দ্র ৪-০-৮-০, দি গ্র্যান্ডহোম ৯-০-১৩-০, অ্যাজাজ ৪-০-৯-২, টিকনার ২-০-)।ফল : ছয় উইকেটে বাংলাদেশ জয়ী।

সিরিজ : ৩-১ ব্যবধানে জিতল বাংলাদেশ।