নিজস্ব প্রতিবেদক :
সন্তান সম্ভবা হয়েও বারবার স্বামী আর শ্বশুর বাড়ির লোকজনের চাপের মুখে ভ্রুণ নষ্ট করতে বাধ্য হন সাজু আক্তার নামে এক নারী। অবশেষে আর সহ্য করতে না পেরে ভ্রুণ হত্যার অভিযোগ এনে দুবাই প্রবাসী স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ওই স্ত্রী সাজু আক্তার।
অভিযুক্ত স্বামীর নাম সফিউল আলম। তিনি একজন দুবাই প্রবাসী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ। তিনি বলেন, ভ্রুণ হত্যা একটি অমানবিক গুরুতর অপরাধ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি একজন ভুক্তভোগী নারীর মাধ্যমে আদালতের নজরে আনা হয়েছে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে চান্দগাঁও থানা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সন্তান সম্ভবা হয়েও স্বামী আর শ্বশুর বাড়ির লোকজনের অসহযোগিতায় মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হন রাঙ্গুনীয়ার উত্তর পদুয়া পশ্চিম খুরুশিয়ার সাজু আক্তার। কখনও জ্বর—সর্দির ওষুধ, কখনও ভিটামিনের নামে জন্মনিরোধক ওষুধ খাইয়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট করতেন তারা।অভিযোগে বলা হয়, চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকেরা নিজ দায়িত্বে ওই নারীর গর্ভপাত করিয়েছেন। সর্বশেষ সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর আবারও ওই নারীকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য তার প্রবাসী স্বামী চাপ দিলে সন্তান নষ্ট করতে অস্বীকার করেন সাজু আক্তার। ক্ষিপ্ত হয়ে তালাকের হুমকিসহ পরিবারের লোকজনকে দিয়ে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করেন স্বামী।
আরও জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনীয়া থানার খিলমোগল খামারিপাড়া হোসনাবাদ এলাকার কাজী সফিউল আলমের সাথে পারিবারিক পছন্দেই বিয়ে হয় উত্তর পদুয়া পশ্চিম খুরুশিয়ার সাজু আক্তারের। বিয়ের কিছু দিন পরেই জানা যায় স্বামী তার পাশের গ্রামের এক নারীর প্রেমে আসক্ত। বিয়ের একমাস পরে বিদেশ পাড়ি দেন স্বামী সফিউল আলম। সেখান থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন ওই নারীর সাথে।বিদেশ থেকে আসা—যাওয়ার মাঝে স্ত্রী সাজু সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়লে সফিউল আলমের পরামর্শে মা নুর আয়েশা এবং বোন তাসলিমা ও পারভিন মিলে চন্দ্রঘোনায় ডা. পাপড়ি দাশের কাছে নিয়ে যান সাজু আক্তারকে।
ডা. পাপড়ি রাজি না হওয়ায় বাসায় এসে ভিটামিনের কথা বলে অজ্ঞাত ওষুধ খাওয়ানো হয় সাজু আক্তারকে।পরদিন থেকে বমি ও রক্তক্ষরণ শুরু হলে আবারো নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক দ্রুত ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য বললেও পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি নিয়ে আসে। অসুস্থ অবস্থাতেই জ্বরের ওষুধের কথা বলে আবারও সাজু আক্তারকে ভ্রূণ হত্যার ওষুধ খাওয়ানো হয়। এভাবে তার প্রথম সন্তান পৃথিবীর আলো দেখা থেকে বঞ্চিত হয়।
এখানেই কিন্তু ঘটনার শেষ নয়। বিষয়টি পরিবারের কাউকে না জানানোর জন্য চাপ দিতে থাকে সফিউল আলমের পরিবার।
শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে সাজু আক্তার ২০২০ সালের জুলাই মাসে তার বোনের বাসা বহদ্দারহাটের ফরিদার পাড়ায় চলে আসেন।
ইতোমধ্যে ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট সাজুর স্বামী সফিউল বিদেশ থেকে দেশে এসে সাজুর বোনের বাসায় উঠে। সাজুকে আগের সব কিছু ভুলে গিয়ে আবার নতুন করে সব শুরু করার জন্য বললে সাজুও সব ভুলে আবার নতুন জীবন শুরুর আশায় স্বামীর কথায় রাজি হয়।
এক পর্যায়ে আবারও সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়েন সাজু। এবারও আগের মতোই সফিউল তার স্ত্রীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে চান। কিন্তু সাজু রাজি না হওয়ায় তার উপর অত্যাচার করতে শুরু করেন সফিউল।