নগর প্রতিবেদক :
স্ত্রীকে তালাবন্দি করে দুই মাস বয়সী শিশুকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নুরজাহান আক্তার কলি নামের এক নারী।
সোমবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে নুরজাহান আক্তার কলি (২০) নামে ওই গৃহবধূ চট্টগ্রামের মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে মামলাটি করেন।
মামলায় আসামি করা হয়েছে শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবব এবং এক খালা শাশুড়িকেও। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে খুলশী থানাকে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীর আইনজীবী এডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, স্বামী দীর্ঘদিন ধরে বেকার থাকায় স্ত্রীর উপর যৌতুকের দাবিতে মারধোর করতো। আর তাতে সায় দিয়ে স্ত্রীর উপর নির্যাতনে সহায়তা করতো শ্বশুর বাড়ির লোকজন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে খুলশী থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, এতিম নুরজাহান আক্তার কলিকে আশপাশের লোকজন ধারদেনা করে টাকা জোগাড় করে বিয়ে দেন আরাফাতুল ইসলাম মোর্শেদ নামের লালখানবাজারের মতিঝর্ণা এলাকার এক ছেলের সাথে। বিয়ের পর থেকেই কলিকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করতে থাকে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গর্ভে সন্তান আসলে স্বামী একদিন যৌতুকের দাবিতে সন্তান নষ্ট করে ফেলার উদ্যোগ নেন। স্ত্রী রাজী না হওয়ায় তার উপর নির্যাতন নেমে আসে। ৯৯৯ এ ফোন করে সে যাত্রায় বেচে যান ওই নারীসহ তার গর্ভের সন্তান। সামাজিকভাবে বিচারে স্ত্রীর উপর আর নির্যাতন হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলে বেকার স্বামী মোর্শেদ প্রায়ই স্ত্রীকে মারধর করতো। বাবা-মা না থাকায় সন্তান আর নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কখনো উচ্চবাচ্য করতেন না কলি।
গত ১০ জুলাই গর্ভের সন্তান ইয়াসিন পৃথিবীর আলো দেখলে কলির উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। বাড়িভাড়ার টাকাসহ যৌতুক দিতে না পারলে মেরে ফেলার হুমকির মধ্যেই চলতে থাকে কলির যন্ত্রনার জীবন। একদিন কলিকে মারধর করে শিশু সন্তানসহ ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় শ্বাশুড়িসহ স্বামী মোর্শেদ।
শুধু তাই নয়, গরম ভাতের মাড় ঢেলে দেয় মাটিতে পড়ে থাকা কলির গায়ে এবং পায়ে। সন্তানের বয়স যখন দুই মাস ছুঁই ছুঁই এমন সময়ে গত ৫ অক্টোবর স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকজন আবারো মারধর করে কলিকে।
কথাকাটাকাটির জের ধরে ঘরের ভিতর তালাবদ্ধ করে রেখে প্রায় ২ মাস বয়সী শিশুটিকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে স্বামী মোর্শেদ। স্ত্রীর কলির চিৎকারে আশপাশের লোকজনসহ কলির দূর সম্পর্কের আত্মীয় স্বজন এসে ৯৯৯ এ ফোন করলে পালিয়ে যায় স্বামী মোর্শেদ।
আহত কলিকে সেখান থেকে কোন রকমে রক্ষা করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
