চট্টলা ডেস্কঃ ১ বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে করোনাভাইরাস। মহামারির এই সময়ে সারাবিশ্বেই নানা ধরনের পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো জীবন-যাপন এখন আর স্বাভাবিক গতিতে নেই। সবকিছুতেই চলে এসেছে সীমাবদ্ধতা। এখন চাইলেই শিশুরা ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মন খুলে গল্প করতে পারছে না, খেলাধুলা করতে পারছে না।
এমনকি স্কুলেও যেতে পারছে না তারা। ফলে তাদের জীবন এখন ঘরবন্দি। ফিলিপাইনের ছয় বছর বয়সী শিশু অফেলিয়া অ্যাবো। সে প্রায় ১১ মাস ধরে ঘরে বন্দি। প্রতিদিন সকালে তাকে অনলাইন স্কুলে হাজিরা দিতে হয়। বাকি সময়টা তার এটা সেটা খেয়ে বা ঘরের লোকদের সঙ্গে খেলাধুলা করে কেটে যায়। সে তার মায়ের সঙ্গে খেলে অথবা বাড়ির ছাদে চলে যায়।
এসবে তার খুব একটা খারাপ লাগে না। কারণ সারাদিন তার খেলাধুলা করেই কেটে যাচ্ছে। কিন্তু কখনও কখনও এসবে তার একঘেয়েমি চলে আসে। তার খুব ইচ্ছা করে যদি কোনো শপিংমল বা বীচে যেতে পারত! অফেলিয়ার মতো ১৫ বছরের কম বয়সী আরও প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ শিশু এখন নিজ নিজ ঘরে বন্দি সময় কাটাচ্ছে। করোনা মহামারির বিস্তার ঠেকাতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, শিশুদের বাড়ির বাইরে বের হওয়া নিষেধ।
ফলে ২৪ ঘণ্টাই শিশুরা এখন বাড়িতে থাকছে। করোনা মহামারিতে সবচেয়ে ঝুুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন বয়স্করা। সে কারণে তাদের এখনও ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি মিলছে না। প্রাপ্ত বয়স্ক কর্মজীবীদের জন্য বেশ কিছু বিধি-নিষেধ শিথিল করা হলেও বয়স্ক এবং শিশুদের জন্য নিষেধাজ্ঞা এখনও জারি রয়েছে। অফেলিয়ার মা ইরিস বলছেন, তার মেয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। তবে তিনি সরকারের নির্দেশনা মেনে নিজের সন্তানের সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। এই ভাইরাস প্রাণঘাতী।
তাই তিনি সরকারের জারি করা বিধি-নিষেধকে যুক্তিসঙ্গত এবং সঠিক বলেই মনে করেন।গত বছরের আগস্টে দেশটিতে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। সে সময় প্রতিদিন ৪ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে এই সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছে। এখন দৈনিক নতুন সংক্রমণ প্রায় ১ হাজার ৬শ। শুধুমাত্র ফিলিপাইনেই শিশুরা ঘরবন্দি তা নয়। অনেক দেশই এ বিষয়ে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছে। স্পেনেও একই ধরনের সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে।
সেখানেও করোনা মহামারি শুরু পর থেকেই শিশুদের বাড়ির বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে শিশুদের এভাবে ঘরবন্দি করে রাখার বিষয়ে অনেকেই নেতিবাচক প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব ফিলিপাইনের চাইল্ড প্রটেকশন ইউনিটের বার্নাদেতে মাদ্রিদ বলেন, প্রত্যেকেই এটা স্বীকার করেন যে এর ফলে শিশুদের মনো-সামাজিক ক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব পরতে পারে। তবে তিনিসহ বহু চিকিৎসক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মহামারি বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং বাবা-মায়েরা বিশ্বাস করেন যে, ফিলিপাইনের অনেক পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন আচরণের কারণে বাচ্চাদের বাড়িতে রাখাটা সুবিধার চেয়ে বরং ঝুুঁকিই বেশি হতে পারে। এখনও পর্যন্ত করোনা মহামারিতে শিশুদের গুরুতর অসুস্থতার খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু তাদেরও আক্রান্ত হওয়া এবং অন্যদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফলে কিছুটা ঝুঁকি রয়েই যাচ্ছে। দেশটিতে ১০ শতাংশের বেশি ৬০ ঊর্ধ্ব লোকজন তাদের নাতি-নাতনির সঙ্গে থাকে। তাদের ছেলে-মেয়েরা বেশিরভাগই কাজের জন্য বাড়ি থেকে দূরে অন্য কোথাও বাস করে। ফলে শিশুরা ঘরে থাকলেই বরং তারা আরও বেশি নিরাপদ বোধ করেন।