স্পোর্টস ডেস্ক:
লিওনেল মেসিকে নতুন মৌসুমের জন্য চুক্তি করাতে পারছে না স্প্যানিশ ক্লাবটি। ক্লাবের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে নিশ্চিত করা হয়েছে মেসির চলে যাওয়ার খবরটি।
শেষ মুহূর্তে বড় ধাক্কা খেয়েছে এফসি বার্সেলোনা। লিওনেল মেসিকে নতুন মৌসুমের জন্য চুক্তি করাতে পারছে না স্প্যানিশ ক্লাবটি। তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে নিশ্চিত করা হয়েছে মেসির চলে যাওয়ার খবরটি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম যখন মেসিকে বার্সেলোনায় আরও ৫ বছর দেখছে, তখনই বিস্ফোরক সংবাদ দিলো বার্সেলোনা। মেসির সঙ্গে চুক্তি করতে পারেনি স্প্যানিশ জায়ান্টরা।
আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে জানিয়ে দিয়েছে বার্সেলোনা।
পরের মৌসুমে বার্সেলোনার সঙ্গে খেলা হচ্ছে না আর্জেন্টাইন জাদুকরের।
বার্সেলোনার ওয়েবসাইটে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মেসি দলে থেকে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার পর ও নতুন চুক্তি সই নিয়ে দুই পক্ষ নিশ্চিত হওয়ার পরও লা লিগার প্লেয়ার্স রেজিস্ট্রেশন আইনের কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এমন অবস্থায় মেসি ক্লাবের সঙ্গে আর থাকছে না। দুই পক্ষই অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, মেসির ক্লাবে খেলার ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ’
গত ৩০ জুন মেসির সঙ্গে বার্সেলোনার চুক্তি শেষ হয়। অন্য কোনো ক্লাবে যোগ না দিয়ে কাতালানদের সঙ্গে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মেসি। কিন্তু বাধ সাধল লা লিগার নতুন ‘ফাইন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে’ নিয়ম। এর ফলে ১৭ বছর পর বার্সা ছাড়তে হচ্ছে ক্লাবের সবচেয়ে আইকনিক খেলোয়াড়কে।
কয়েক বছর ধরে মাঠে বার্সেলোনার খারাপ পারফরম্যান্স ও মাঠের বাইরে ক্লাবের খারাপ ব্যবস্থাপনার ওপর বিরক্ত হয়ে ২০১৯-২০ মৌসুম শেষে ক্লাব ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন মেসি। তৎকালীন ক্লাব সভাপতি হোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ তাকে আদালতে নেয়ার হুমকি দেয়ায় সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের।
সবশেষ মৌসুমও ভালো যায়নি বার্সেলোনার। কোপা দেল রে ছাড়া কোনো শিরোপা জিততে পারেনি মেসির দল। বরাবরের মতো ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স উজ্জ্বল থাকলেও দলীয় সাফল্যের স্বাদ পাননি মেসি।
নতুন মৌসুমে মেসি চেয়েছিলেন নতুন একটি ক্লাব প্রজেক্ট, যাতে করে ইউরোপে নিজেদের প্রাধান্য ফিরে পাবে বার্সেলোনা। ২০১৫ সালের পর জিতবে ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ। তবে আর্থিক সংকটের কারণে তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হওয়ায় নাখোশ হন তিনি।
বার্সার নতুন সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা মার্চে নির্বাচিত হয়ে সমর্থকদের কথা দেন, যে করেই হোক ক্লাবে রাখবেন মেসিকে। আর্থিক সংকট দূর করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ কোটি ইউরোর একটি তহবিলও জোগাড় করেন তিনি।
সেটা দিয়ে খেলোয়াড়দের বেতনসহ ক্লাবের অন্যান্য বকেয়া শোধ করেছে বার্সেলোনা।তবে বার্সাকে বিশ্বসেরা ক্লাবে পরিণত করার পাশাপাশি মেসিকে পূর্ণ পারিশ্রমিক দিয়ে নতুন চুক্তি প্রস্তাব করার মতো বাজেট ছিল না তাদের কাছে।
গত পাঁচ মৌসুমের চুক্তিতে বেতন-বোনাস মিলিয়ে প্রায় ৫৫ কোটি ইউরো বেতন পেয়েছেন মেসি, প্রতি মৌসুমে যা প্রায় ১০.৫ কোটি ইউরো। এর মধ্যে শুধু বেতন ছিল বছরে প্রায় ৫ কোটি ইউরো।
এবার অর্ধেক বেতনে বার্সায় থাকতে চেয়েছিলেন মেসি। তারপরও ক্লাবের আর্থিক দুরাবস্থা ও লা লিগার শর্তের বেড়াজলে আটকে গেল বার্সার জার্সিতে মেসির খেলা।
২০০০ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আর্জেন্টিনার রোসারিও থেকে বার্সেলোনার বিখ্যাত লা মাসিয়া অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন মেসি। গ্রোথ হরমোনের সমস্যা নিয়ে জন্ম হওয়া মেসির চিকিৎসার সব খরচ বহনের শর্তে তাকে নিয়ে আসেন বার্সেলোনার তখনকার স্পোর্টিং ডিরেক্টর চার্লি রেক্সাচ।
মেসিকে যেন অন্য ক্লাব টেনে নিতে না পারে, সে জন্য একটি রেস্তোরাঁয় বসে ন্যাপকিনের ওপর সই নিয়ে রাখেন তিনি মেসির। তারপর থেকেই কাতালুনিয়ার বিখ্যাত ক্লাবটির সঙ্গে আছেন মেসি।
২০০৪ সালে ১৭ বছর বয়সে তার সিনিয়র দলে অভিষেক হয়। তারপর থেকে টানা ১৭ বছর খেলেছেন দলে।
৭৭৮ ম্যাচে মেসি করেছেন ৬৭২ গোল ও ৩০৫ অ্যাসিস্ট। এক ক্লাবের পক্ষে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড তার। জিতেছেন ছয়টি ব্যলন ডর।
চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ১০টি লিগ শিরোপাসহ ক্লাবের হয়ে ৩৫টি ট্রফি জিতেছেন এ কিংবদন্তি।
লা লিগার গত ১৬ মে সেলতা ভিগোর বিপক্ষে খেলা ম্যাচটিই বার্সেলোনার জার্সিতে খেলা মেসির শেষ ম্যাচ হয়ে রইল।
কোপা আমেরিকা জয় করে নতুন চুক্তি সইয়ের কথা বলেছিলেন মেসি। ফুটবলভক্তরা আশায় বুক বাঁধেন বার্সার হয়ে আবারও মেসির পায়ের ঝলক দেখার। তেমনটা হলো না।
বার্সেলোনা ছেড়ে মেসি কোথায় যাবেন সেটা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ঝড় চলবে আগামী দিনগুলোতে। ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি ও ফ্রান্সের প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) লিওনেল মেসিকে নিতে চাইছে দুই বছর ধরে। সুপারস্টারকে যেকোনো পারিশ্রমিকে নিয়ে আসতে রাজি তারা।
ক্রীড়া বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় এখন লিওনেল মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার খবর। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে বার্সা। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা আগেও মেসির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন প্রায় নিশ্চিত ছিল কাতালান জায়ান্টদের।
শেষ মুহূর্তে কী এমন ঘটে গেল যে মেসির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে ব্যর্থ হলো বার্সেলোনা? ইতি ঘটল মেসি-বার্সার ১৭ বছরের সম্পর্কের?
সেজন্য ফিরে যেতে হবে খানিকটা আগে। ২০২০ সালে তৎকালীন বার্সেলোনা সভাপতি হোসেপ মারিয়া বার্তোমেউয়ের সময়ে।
২০১৯-২০ মৌসুম শেষে ক্লাব ছাড়ছেন এমন বার্তা দিয়ে বার্সা বরাবর ফ্যাক্স পাঠান মেসি। হতবাক হয়ে পড়ে বিশ্ব!
আদালতের ভয় দেখিয়ে মেসিকে ক্লাবে রাখেন বার্তোমেউ। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে।
উসমান ডেম্বেলে, ফিলিপে কোতিনিয়ো, মিরালেম পিয়ানিচের মতো একের পর এক খরুচে ও বেশি পারিশ্রমিকে ফ্লপ তারকার আমদানী বার্সেলোনাকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে দেয়।
ক্লাবের কাঁধে ঋণের বোঝা চাপানো বার্তোমেউয়ের স্ক্যানডালে হতবাক তখন পুরো বিশ্ব। ক্ষমতাচ্যুত হন বার্তোমেউ। দ্বিতীয়বার ক্লাবের হাল ধরলেন ভরসার মুখ হোয়ান লাপোর্তা।
ততদিনে ক্লাবের আর্থিক অবস্থার ১২টা বাজিয়ে সরে গেছেন বার্তেমেউ। ঋণে জর্জরিত ক্লাব। পরের মৌসুমে দলকে সাজাতে হিমশিম খায় নতুন ম্যানেজমেন্ট।
এর মধ্যে গত ৩০ জুন ফ্রি এজেন্টে পরিণত হন মেসি। তার পর থেকেই আলোচনা- মেসির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে পারবে তো ঋণের পাহাড়ে চাপা পড়া বার্সা?
আশ্বস্ত করলেন মেসি। অন্য কোনো ক্লাবে যোগ না দিয়ে কাতালানদের সঙ্গে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মেসি। প্রয়োজনে অর্ধেক বেতনে ক্লাবে খেলার ব্যাপারে তার রাজি হওয়ার খবর তখন বার্সা সমর্থকদের শান্ত করে।
আর্থিক সংকট দূর করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ কোটি ইউরোর একটি তহবিল জোগাড় করেন লাপোর্তা।
চুক্তি শেষে ফ্রি-এজেন্ট হওয়ার পর গত এক মাসে নতুন সমস্যা সামনে আসে। লা লিগার নতুন ‘ফাইন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে’ নিয়ম। মেসিকে দলে নিতে হলে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন ইউরোর যে ঋণ আছে তা ব্যালান্স করতে হবে ক্লাবকে। সেজন্য খেলোয়াড়দের বেতন ক্লাবের আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। যা প্রায় অসম্ভব।
এই অসম্ভবকে সম্ভব করা সম্ভব হয়নি ক্লাবের।
ফলে মেসিকে নিয়ে ইদুর দৌঁড় চলেছে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার খবর এলো, চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতার ঘোষণা মাত্র। সবাইকে হতবাক করে ক্লাবের ঘোষণা, মেসি বার্সা ছাড়ছেন।
বার্সেলোনার ওয়েবসাইটে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মেসি দলে থেকে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার পর ও নতুন চুক্তি সই নিয়ে দুই পক্ষ নিশ্চিত হওয়ার পরও লা লিগার প্লেয়ার্স রেজিস্ট্রেশন আইনের কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এমন অবস্থায় মেসি ক্লাবের সঙ্গে আর থাকছে না। দুই পক্ষই অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, মেসির ক্লাবে খেলার ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
ফলে ১৭ বছর পর বার্সা ছাড়তে হচ্ছে ক্লাবের সবচেয়ে আইকনিক খেলোয়াড়কে।
অন্য খবরও রটছে ফুটবল বিশ্বে। লা লিগা কর্তৃপক্ষকে চাপে রাখতে বার্সেলোনা মেসিকে নিয়ে এমন ঘোষণা দিয়েছে এমনটাও অনুমান করছেন অনেকে। এটা খুব যৌক্তিক নয় এ কারণে যে মেসি স্পেন ছাড়লে আয় নিয়ে বড় একটা সংকটে পড়তে যাচ্ছে লা লিগা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
গুঞ্জন পাশে রাখলে বার্সার সঙ্গে মেসির সম্পর্ক ভেঙেছে এটাই জরুরি খবর।
২০০৪ সালে বার্সার মূল দলে সুযোগ পান মেসি। এরপর প্রায় ১৭ বছর এক ক্লাবেই আছেন মেসি। প্রায় দেড় যুগে বার্সার জার্সিতে ৭৭৮ ম্যাচে ৬৭২ গোল করেছেন। সাফল্যে মোড়ানো ক্লাব ক্যারিয়ারে মেসি জেতেন ৪টি ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ১০টি লিগ শিরোপাসহ ৩৫টি শিরোপা।