আগামী বাজেটে প্রতিবন্ধীদের ভাতা ২ হাজার টাকা করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা ২০০০ টাকা এবং চাকরিতে সমঅধিকার সহ ৭ দফা দাবিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠন (ডিপিও) এর উদ্যোগে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সকালে চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড়ের মোড়ে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কৃষ্টি- প্রতিবন্ধী মানুষের স্বাধীন জীবনযাত্রা কেন্দ্র ও বি-স্ক্যান এর সভাপতি সাবরিনা সুলতানা। কৃষ্টির সাধারন সম্পাদক তাসনিন সুলতানা নীলার সঞ্চালনায় সমাবেশে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠন (ডিপিও)এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মরত সংগঠন সমূহ এর নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশের শুরুতে লিখিত বক্তব্য ও ৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।

সমাবেশে উত্থাপিত প্রতিবন্ধী সংগঠন সমূহের ৭ দফা দাবিগুলো হলো: ১. ২০২২-২৩ জাতীয় বাজেটেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা ন্যুনতম ২০০০ (দুই হাজার) টাকা করতে হবে।

২. ২০২২-২৩ জাতীয় বাজেটেই শতভাগ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা, উভয়ই নিশ্চিত করতে হবে

৩. অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরিতে নিয়োগ এবং কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

৪. ২০২২-২৩ জাতীয় বাজেটেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহে ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী মানুষদের নিয়োগে ৫ শতাংশ কর ছাড়ের নিয়মটি সংশোধন করে আনুপাতিক হারে ৫-৩ শতাংশ প্রতিবন্ধী কর্মী নিয়োগ দিলে ৩-১ শতাংশ কর ছাড়ের বিধান করতে হবে।

৫. সরকারি-বেসরকারি সকল সেবার তথ্যভান্ডারে প্রতিবন্ধিতা বিভাজিত তথ্য চাই।

৬. অবিলম্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদফতর বাস্তবায়ন করতে হবে।

৭. প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেট বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বরাদ্দ দিতে হবে।

বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০০৫-০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভাতার প্রচলন করেন। সর্বশেষ নিবন্ধিত প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ২৫ লক্ষ ১৪ হাজার ৯৯০ জন হলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ২০ লক্ষ ৮ হাজার মানুষ মাসে ৭৫০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনায় ভাতা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ থাকলেও গত চার বছরে আমাদের ভাতা বৃদ্ধি করা হয়নি।

বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, কেবল আশ্বস্ত নয় আগামি বাজেটেই প্রতিবন্ধী মানুষদের ভাতা ন্যুনতম ২০০০ টাকা করতে হবে।বক্তারা আরো বলেন, সামাজিক সুরক্ষায় একজনকে একটির বেশি সুবিধা দেওয়া যাবে না এই নীতির কারণে ভাতা প্রাপ্ত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সহায়ক উপকরণ, ব্যক্তিগত যানবাহন, ব্যক্তিগত সহায়তাকারী, বিশেষ শিক্ষা উপকরণ, শ্রুতিলেখক, নিয়মিত ঔষধ সেবন, থেরাপি গ্রহণ, বিশেষ প্রশিক্ষণ ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। এই সকল আনুষাঙ্গিক বিষয় বেশীরভাগ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। বক্তারা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন সচল রাখা এবং তাদের দৈনন্দিন মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা দুটোই নিশ্চিত করার দাবি জানান।

সমাবেশের পরবর্তী কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল ৭ এপ্রিল দুপুর ১২টায় আয়োজকদের একটি প্রতিনিধিদল জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি পেশ করবেন।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, হাসান মনছুর কোস্টাল ডিপিও অ্যালায়েন্স-আনোয়ারা এর সাংগঠনিক সম্পাদক, শিউলি চক্রবর্তী চাঁদগাও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন সংগঠন এর সাধারণ সম্পাদক , চন্দনাইশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন সংগঠন এর সাধারণ সম্পাদক সেলিনা আক্তার রওশন চৌধুরী, বাংলাদেশ শ্রবন প্রতিবন্ধী ক্রিয়া ফেডারেশন এর সহ-সভাপতি ফিরোজ আহমেদ, রাইট একশন ফর ডিজেবিলিটি(র‍্যাড) এর সাধারণ সম্পাদক এ্যাড নুরজাহান, চট্টগ্রাম বধির উন্নয়ন সঙ্ঘ এর সাধারণ সম্পাদক নিমাই বনিক, অ্যালেয়েন্স অব আরবান ডিপিও (এইউডিসি)এর সহ সভাপতি আলী আহমেদ, চট্টগ্রাম বিভাগ শ্রবণ প্রতিবন্ধী ক্রিকেট এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরিদ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে আরো উপস্থিত বিভিন্ন সংগঠন সমূহ। তার মধ্যে প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের পরিষদ (পিএনএসপি), চট্টগ্রাম বধির সংঘ, ডিডিআরসি, বাকলিয়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তির স্ব-সহায়ক দল, বন্দরটিলা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির স্ব-সহায়ক দল, অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ এজেন্সিস (এডাব), সেন্টার ফর ডিজএ্যবলস কনসার্ন (সিডিসি), ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরাম, ইউনাট থিয়েটার ফর সোস্যাল অ্যাকশন-উৎস,সংশপ্তক, যুগান্তর,নওজোয়ান,পরশ,উপকূল সমাজ উন্নয়ন সংস্থা,মেন্টাল হেলথ এডভোকেসি এসোসিয়েশন,চট্টগ্রাম বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী শিক্ষা কেন্দ্র সহ আরো অনেক সংগঠন যোগদান করেন।