ডেস্ক রিপোর্ট :
না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলাদেশের স্পাই থ্রিলার জগতে জনপ্রিয়তম চরিত্র মাসুদ রানার স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন তাঁর পুত্রবধূ মাসুমা মায়মুরা। কাজী আনোয়ার হোসেনের বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
মায়মুরা লিখেছেন, একটা ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয়ে সব শেষ হয়ে গেল। ১০ জানুয়ারি থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। আজ চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে।
জানা যায়, গত বছরের অক্টোবরে কাজী আনোয়ার হোসেনের প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়লে কয়েক দফায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
এ দুঃসংবাদ মাসুদ রানার পাঠকদের শোকগ্রস্ত করেছে। তাঁর গড়া সেবা প্রকাশনীর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একজন লেখেন : যাঁর কাছ থেকে অপরিমেয় ভালোবাসা পেয়েছিলাম এবং যাঁকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে বাধ্য হয়েছিলাম, সেই মানুষটি আর নেই! কাজী আনোয়ার হোসেন আঙ্কেল আর আমাদের মাঝে নেই! মাসুদ রানার স্রষ্টা, এই নশ্বর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে, আমাদের সবাইকে ছেড়ে অনেক দূরে কোথাও চলে গেছেন। আপনারা সবাই তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করবেন।
কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাকনাম নবাব। তাঁর পিতা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মাতা সাজেদা খাতুন। তিনি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সনজীদা খাতুনের ভাই। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার : বাচসাস পুরস্কার, জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পের সাহিত্যধারাকে প্রায় একা হাতে জনপ্রিয় করে তুলেছেন কাজী আনোয়ার হোসেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমেই তৈরি হয়েছে এই সাহিত্যধারার বিশাল পাঠকশ্রেণি। তিনি বিদ্যুৎ রায় এবং শামসুদ্দিন নওয়াব ছদ্মনামে লিখেছেন অসংখ্য গল্প। অনেক পাঠকের কাছে তিনি পরিচিত কাজীদা নামেও।
পরিবারের সংগীতচর্চার ধারাবাহিকতায় প্রথমে সংগীতশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ১৯৬৩ সালে বাবার দেওয়া টাকায় সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু করেন। পরে সেই প্রেস থেকেই নিজের সম্পাদনায় পেপারব্যাকে সৃষ্টি করেছেন কুয়াশা, মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দার মতো চিরতরুণ চরিত্রগুলোর। কাজী আনোয়ার হোসেনের বই কুয়াশা সিরিজের মাধ্যমেই মূলত রহস্যধারার বই প্রকাশ শুরু সেবা প্রকাশনীর। এরপর এক বন্ধুর প্রকাশিত জেমস বন্ডের ডক্টর নো পড়ে ঠিক করেন বাংলাতেই লিখবেন এই মানের থ্রিলার।
জানা যায়, ১৯৬৫ সালে তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে চট্টগ্রাম, কাপ্তাই ও রাঙামাটি ভ্রমণ করেন। তারপর সাত মাস সময় নিয়ে লেখেন মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম গল্প ধ্বংস পাহাড়। এই সিরিজের কাজী আনোয়ার হোসেনের বইগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটি বাদ দিলে বাকি সবগুলোই লেখা হয়েছে বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে। তাঁর লেখার এত পাঠক তৈরি হয় যে তা মেটাতে সাড়ে চার শরও বেশি মাসুদ রানার বই প্রকাশ করতে হয়েছে সেবা প্রকাশনীকে।