নিজস্ব প্রতিবেদক
অভিনব কায়দায় চট্টগ্রামে এওয়ার্ড শো এর নামে প্রতারণা ! নামীদামী ব্যক্তিদের সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে চলছে রিয়াদ খানের প্রতারণার মহোৎসব।
২৭টি ক্যাটাগরিতে গেলো ফেব্রুয়ারী মাসে চট্টগ্রামের নাম ব্যবহার করে ‘বেস্ট অব চট্টগ্রাম” এওয়ার্ড এর আয়োজন করেছিলো হ্যালো চিটাগং নামের একটি নামসর্বস্ব ফেসবুক পেইজ।
যেখানে একটি ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপ এর মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অনলাইন ভোটিং সিস্টেমেরও আয়োজন করা হয়, যেখানে ২০ শতাংশ বিচারের রায় দিবেন জনগণ আর ৮০ শতাংশ রাখা হয়েছিলো বিচারক মন্ডলীর জন্য।
উৎসাহ নিয়ে অনেকে সেসময় অংশ নিলেও সমালোচনা আর নানা অভিযোগের কারণে মুখ ফিরিয়ে নেয় আয়োজন থেকে,বিচারকও করেন পদত্যাগ।
তবে সেসময় আয়োজকের আয়োজন সম্পর্কিত যোগ্যতা আছে কি না সে বিষয়ে যেমন প্রশ্ন ওঠে তেমনি নেতিবাচক মন্তব্যের ঝড় উঠতে থাকে অনলাইনে ভোটিং সিস্টেম সহ আয়োজনে স্বজনপ্রীতি, চট্টগ্রামের নাম ব্যবহার করে অননুমোদিত আয়োজন ও অসংগতির নানা বিষয় নিয়ে।
কোন প্রকার অনুমতিপত্র না নিয়ে ফেসবুক ভোটিং আয়োজনে একটি অভিজাত “রেস্টুরেন্টের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় রেস্টুরেন্ট পরিচালক সিএমপি কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন গত ২ই ফেব্রুয়ারী ।
রেস্টুরেন্টটির পরিচালক বলেন, আমি আমার প্রতিষ্ঠানের নাম হ্যালো চিটাগং আয়োজিত “বেস্ট অব চিটাগং” এর ভোটিং পোল এ দেই নি এবং এ নিয়ে আামাদের কাছ থেকে কোন প্রকার লিখিত বা মৌখিক অনুমতি পর্যন্ত নেয় নি আয়োজক সংশ্লিষ্টরা। তাই পুলিশ কমিশনার বরাবর ব্যবসায়িক ক্ষতি এবং মানহানীর অভিযোগ করতে বাধ্য হই।
এছাড়া আয়োজক রিয়াদ খানের বিরুদ্ধে এ আয়োজনের অনুমতি পেতে পুলিশ কমিশনার অফিসেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদনের মাধ্যমে প্রতারণার অভিযোগ ও রয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে বিতর্কের সম্মুখীন করতে আবেদন করা হয় “হ্যালো চিটাগং কালচারাল সেন্টার ” নামীয় প্যাড ব্যবহার করে।
যে কালচারাল সেন্টার এর ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এমন কোন প্রতিষ্ঠানের কোন অস্তিত্ব কিংবা ঠিকানা উক্ত স্থানে নেই, বরং এটি একটি আবাসিক ভবন (নাহার ম্যানসন-১২১৯) হলেও সেখানে আছে মানসিক হাসপাতাল।
এছাড়া স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় “হ্যালো চিটাগং কালচারাল সেন্টার ” নামে কোন প্রতিষ্ঠান ঐ ভবনে নেই। অনুমতি পত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় অনুষ্ঠানের কোন বিস্তারিত তথ্য দেওয়া নেই সে সময়কার আবেদনে।
পর্যবেক্ষণে আরো দেখা যায়, হ্যালো চিটাগং কালচারাল সেন্টার এর প্যাডে অনুমতি চাইলেও আবেদন পত্রের নিচের অংশে কালচারাল সেন্টারের নাম বাদে হ্যালো চিটাগং এর সিল স্বাক্ষরেই আবেদন করেন রিয়াদ খান।
গোপন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের নাম ব্যবহার করে “বেস্ট অব চট্টগ্রাম” নামে আয়োজন করায় জেলা প্রশাসন থেকেও তাকে মৌখিক ভাবে এ ধরনের আয়োজন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়, এতে করে স্থিমিত হয়ে পড়ে আয়োজন।
বিতর্কের তোপে বিচারক প্যানেল থেকে অব্যাহতি নেয় বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা মানজুমা মোরশেদ, এওয়ার্ডের অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরাও সরে যেতে থাকে আয়োজন থেকে।
নানামুখী বিতর্কের চাপে পড়ে একপর্যায়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারী আয়োজন স্থগিতের ঘোষণা দেয় আয়োজক রিয়াদ খান।
কিন্তু জুন মাসে এসে বদলে যেতে থাকে চিত্র, অনেকটা গোপন রেখেই পুনরায় নতুন কৌশলের আশ্রয় নেয় রিয়াদ খান, ফেসবুকে নতুন পেইজ খুলে নাম পরিবর্তন করে পুনরায় চট্টগ্রামের পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসনে আগামী ১৮ জুন আয়োজন করতে যাচ্ছে নামসর্বস্ব এওয়ার্ড শো।আয়োজন নিয়ে ইতিমধ্যে আবারও উঠেছে নিন্দা সমালোচনার ঝড়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায় আগে ভোটিং নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এবার নিয়মকানুন না মেনেই কোনরকম স্বচ্ছতা না রেখেই বিতর্কিত ভাবে এ এওয়ার্ড শো এর আয়োজন,অনেকে প্রশ্ন করেন কে এই রিয়াদ খান তার কি এমন যোগ্যতা আছে কাওকে এওয়ার্ড দেয়ার?
অনেকে প্রশ্ন তোলেন উপদেষ্টা কিংবা বিচারক হিসেবে যারা আছেন তারাই বা তার সাথে কিবুঝে কোন যোগ্যতার মাপকাঠিতে যুক্ত হলেন?হ্যালো চিটাগং আসলে কি যার কোন নিজস্ব বৈধতাই নেই।জানা যায় এ আয়োজনে শুরু থেকেই যুক্ত আছেন বারকোড রেস্টুরেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, পিএইচপি অটোমোবাইল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকতার পারভেজ হিরু, সিপিডিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখার আহমেদ সোহাগ, মেকাপ আর্টিস্ট শায়লা ইসলাম ফ্লোরা এবং ক্রীড়াব্যক্তিত্ব শাকিল আবেদিন।
মূলত তাদের নাম ভাংগিয়েই রিয়াদের এমন দৌরাত্ম এমন গুঞ্জনও রয়েছে সচেতন মহলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবিষয়ে উঠে আসা নেতিবাচক মন্তব্য বিশ্লেষণে অনেকেই এ আয়োজনকে বাণিজ্যিক ঘরানার আখ্যায়িত করে আয়োজনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
টাকার বিনিময়ে এওয়ার্ড কেনা বেচার অভিযোগ ও উঠে আসে। অনুমতি না নিয়ে নাম ব্যবহার করা ওই রেস্টুরেন্ট পরিচালক জানান পুলিশ কমিশনার অফিসে অভিযোগের সুরাহা কিংবা নিষ্পত্তি না হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে এ আয়োজন পুনরায় করতে পারে?
১৮ জুনের এওয়ার্ড শো এর পুলিশি অনুমতি নেই বলেও জানা যায়। এতো সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে আয়োজক রিয়াদ খানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।