নিজস্ব প্রতিবেদক :
ব্রাজিল থেকে দুটি জাহাজে ৮১ হাজার ৫০০ টন র-সুগার আমদানি করে দেশবন্ধু সুগার মিল। কিন্তু ওই চালানের র-সুগার খালাস দিতে রাজি নয় কাস্টমস হাউস ও ঢাকার বন্ড কমিশনারেট।
কারণ দেশবন্ধু বারেবারেই শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করেছে। এসবের দায়ে ১৩টি মামলা চলমান আছে তাদের বিরুদ্ধে। গুরুতর আপত্তি থাকা ও মামলা সংক্রান্ত কারণে বন্ড লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ায় বন্ড সুবিধাও প্রাপ্য নয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি।
অথচ দেশের অন্যতম চিনি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান নরসিংদী জেলার এই দেশবন্ধু সুগার মিল।
সর্বশেষ রোববার (২২ আগস্ট) প্রধান বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ওই পণ্যের চালানের ওপর স্থিতি অবস্থা বজায় রাখাসহ আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে ফ্রেশ (নতুন) আবেদন করার আদেশ দেন। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চালান খালাসে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন হাইকোর্ট। এই আদেশের ফলে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত র-সুগারের ওই চালান আর খালাস করা যাবে না চট্টগ্রাম বন্দর থেকে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রমতে, গত ১৩ জুলাই ‘এমভি ডিএমসি নেপচুন’ ও ‘এমভি আইল্যান্ডার’ নামে দুটি জাহাজ ব্রাজিল থেকে চিনির কাঁচামাল র-সুগার নিয়ে আসে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে। এই দুই জাহাজের মধ্যে এমভি ডিএমসি নেপচুনে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন এবং এমভি আইল্যান্ডারে ২৬ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন র-সুগার রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সাড়ে ৮১ হাজার টন চিনির কাঁচামাল আনলেও সরকারি বন্ড কমিশনারেট থেকে প্রাপ্যতা না থাকায় বন্দর থেকে খালাস নিতে পারছে না আমদানি করা র-সুগার।
এদিকে কাস্টমস বন্ড সুবিধায় পণ্যের চালান খালাস না দেওয়ায় গত ২৬ জুলাই হাইকোটের ভার্চুয়াল আদালতে একটি আবেদন করে দেশবন্ধু সুগার মিল। এতে হাইকোর্ট ৮ কোটি টাকা নগদে আদায় করে ওই চালান সাত দিনের মধ্যে খালাসের আদেশ দেন।
জানা গেছে, মূলত প্রাপ্যতা না থাকা ও বার বার শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস ও ঢাকার বন্ড কমিশনারেট যৌথভাবে হাইকোর্টের আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করার জন্য গত ৫ আগস্ট আপিল করে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, দেশবন্ধু সুগার মিলের বন্ড সুবিধার প্রাপ্যতা না থাকায় পণ্যের চালান বন্ড সুবিধায় আমরা খালাস দিতে পারি না।
তিনি বলেন, লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে বন্ড গুদাম থেকে অবৈধভাবে কাঁচামাল অপসারণে গত পাঁচ বছরে অন্তত ৯৪৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে দেশবন্ধু সুগার মিলস লিমিটেড। শুল্ক ফাঁকি দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ১৩টি মামলা চলছে।
জানা গেছে, দেশবন্ধু সুগার মিলের কারখানার গুদামের ধারণক্ষমতা ৩৩ হাজার টন। নিয়ম অনুযায়ী, কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক মুক্ত বা বন্ড সুবিধা পায় এসব কারখানা। কিন্তু কী পরিমাণ কাঁচামাল আনা হবে, তার জন্য আগে থেকেই বন্ড কমিশনারেটের অনুমতি বা প্রাপ্যতাপত্র নিতে হয়। পণ্যের চালান বন্দর থেকে খালাস করে গুদামে সংরক্ষণ করা হয়। আবার গুদাম থেকে কারখানায় নিয়ে হওয়ার সময় শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হয় বন্ড সুবিধায় আনা চালানের। কিন্তু দেশবন্ধু সুগার মিল ওই অনুমতিপত্র দাখিল করতে পারেনি। কিন্তু বন্ড সুবিধার আড়ালে শুল্ক না দিয়েই পণ্যের চালান খালাস করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
কাস্টমস হাউস জানায়, ৮১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন র-সুগারের চালানের ক্রয়মূল্য এবং শুল্কের ওপর রেগুলারিটি ডিউটি ৩০ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম ট্যাক্স ৫ শতাংশ। সবমিলিয়ে ১০০ কোটি টাকার ওপরে শুল্কায়ন হবে। এ অবস্থায় বন্ড কমিশনারেট ১০০ কোটি টাকা ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে ওই চালান ছাড় দেওয়া যেতে পারে বলে মতপ্রকাশ করে।কিন্তু এটি না মেনে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয় দেশবন্ধু সুগার মিল কর্তৃপক্ষ।
কাস্টমস হাউস হাইকোর্টকে জানায়, গত সময়ে অন্তত ১৩ বার বন্ড সুবিধার আড়ালে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে র-সুগারের চালান খালাস নিয়েছিল নরসিংদীর দেশবন্ধু সুগার মিল। যার ফলে বন্ডের অনুমতি না থাকলেও পণ্যের চালান খালাস নিয়ে গুরুতর অপরাধ করেছে দেশবন্ধু সুগার মিল। এ সংক্রান্ত ১৩টি মামলাও চলমান রয়েছে দেশবন্ধুর বিরুদ্ধে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির কোনো চালান অগ্রিম শুল্ক পরিশোধ ছাড়া ছাড় দিতে রাজি নয় কাস্টমস হাউস।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশবন্ধু সুগার মিলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘আমাদের ওয়্যারহাউসের ধারণক্ষমতা প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিক টন। একটি ওয়্যারহাউস ছিল ৩৩ হাজারের। পরে আরেকটি করা হয়েছে ৬০ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন।’এই ৬০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার ওয়্যার হাউসের সরকারি অনুমোদন আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।