![](https://chattalatv.com/wp-content/uploads/2021/08/IMG_20210806_203251.jpg)
![](https://chattalatv.com/wp-content/uploads/2021/08/IMG_20210806_203251.jpg)
মিরসরাই প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে করুণ বিদায় দিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। মো. সাজেদ উল্লাহ নামে ওই মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করলে লাশ দাফনে বাধা দেয় গ্রামবাসী ও তার নিজের বাড়ির লোকজন। জানাজা পড়াতে রাজি হননি মসজিদের ইমামও।
তার গেজেট নং ৫০৮৩, লাল বই নং ০২০৩০৪১২০৯।
বুধবার (৪ আগস্ট) এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ারা গ্রামে।
দেশের জন্য প্রাণবাজি রেখে যুদ্ধ করা এ মুক্তিযোদ্ধাকে দেওয়া হয়নি প্রাপ্য শেষ সম্মানটুকুও। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার ছাড়াই তাঁকে দাফন করা হয়েছে। এমনকি তার জানাজায় উপস্থিত ছিলেন না প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাও। পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শেষ বিদায়ের বন্ধুরা লাশের গোসল ও দাফনের ব্যবস্থা করেন।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ারা গ্রামের আবদুর রশীদ মুহুরী বাড়ীর নুর মোহাম্মদের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্লাহ ৩০ জুলাই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দিবাগত রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
সাজেদ উল্লাহ’র স্ত্রী লুৎফুর নাহার (৬৫) ও তার পরিবারের ৫ সদস্যও বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। মৃত্যুর পর তার ২ ছেলে চট্টগ্রাম শহর থেকে লাশ দাফন কাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে গেলে বাড়ির লোকজন ও গ্রামবাসী বাধা দেয়।পরবর্তীতে তারা মিরসরাই সদর ইউনিয়নের শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের কার্যালয়ে লাশের গোসল শেষে অ্যাম্বুলেন্স করে কবরস্থানে লাশ নিয়ে যান। লাশ নেওয়ার পর গ্রামের মসজিদের ইমামও জানাযা দেওয়ার জন্য আসেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজেদ উল্লাহ কে গার্ড অব অনার দেওয়ার জন্য সকাল ১০টায় সময় নির্ধারণ করা হয়। উনার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় পরিবারের লোকজন তাড়াতাড়ি করে সকাল ৯টায় দাফন করে শহরে চলে যায়। সেজন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া যায়নি।তিনি আরো বলেন, লাশ দাফনে গ্রামবাসী বাধা দেওয়ার বিষয়টি আমি শুনিনি; এটি জানলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিতাম।
সাজেদ উল্লাহ’র ছেলে হোসেন মো. জাহাঙ্গীর বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাবার মৃত্যুর পর গ্রামের লোকজন লাশের গোসল করানো, কবরের মাটি খোঁড়া ও দাফন করতে পারবে না বলে জানান। আমাদের বাড়ির গালিব নামে একজন বাড়ির প্রবেশমুখে বাঁশ পুঁতে দেয়; যাতে অ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে প্রবেশ করতে না পারে।
পরবর্তীতে বিষয়টি করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়নকে জানালে তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শেষ বিদায়ের বন্ধু’র মাধ্যমে লাশ পরিবহন ও গোসলের ব্যবস্থা করেন। লাশ বাড়িতে নেওয়ার পর গ্রামের মসজিদের ইমাম জানাযার নামাজ পড়াতে অস্বীকৃতি জানালে শেষ বিদায়ের বন্ধু’র করেরহাট ইউনিয়ন টিম লিডার মাওলানা ইসমাঈল নামাজে ইমামতি করেন।
তিনি আরও বলেন, আমি বুধবার (৪ আগস্ট) সকাল ৬টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা’র বাসায় যায় বাবার মৃত্যুর খবরটি দেওয়ার জন্য। তিনি ঘুমে থাকায় দেখা করতে পারিনি। তবে নিরাপত্তা প্রহরীকে বাবার মৃত্যুর বিষয়টি অবহিত করে এসেছি। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহমেদকে মোবাইলে বাবার মৃত্যু ও জানাযার সময় সকাল ৯টায় নির্ধারণের বিষয়টি জানাই। তিনি গার্ড অব অনারের বিষয়ে ইউএনওকে জানাবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন।
শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের সমন্বয়ক (সেবা) মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্লাহ’র দাফন কাফনে এলাকাবাসী বাধা দেয়। পরবর্তীতে করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন ও তার ছেলে হোসেন মো. জাহাঙ্গীরের আবেদনের প্রেক্ষিতে লাশের গোসল, জানাযা ও দাফনের ব্যবস্থা করেন শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের সদস্যরা।
করেরহাট ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল আবছার বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজদ উল্লাহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার বিষয়টি শুনেছি। আমি নিজেও অসুস্থ হওয়ায় জানাযায় যেতে পারিনি। তার বাড়ি ও গ্রামবাসীর বিরোধিতার কারণে পরিবারের লোকজন তাড়াহুড়া করে দাফন করে চলে গেছে বলে শুনেছি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহমেদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সাজেদ উল্লাহর লাশ দাফনের জন্য সকাল ১০টায় সময় নির্ধারণ করার কথা বলা হলেও তার পরিবারের লোকজন সকাল ৯টায় তাড়াহুড়া করে দাফন করে ফেলে। ফলে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়নি।
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সাজেদ উল্লাহর লাশ গ্রামবাসী বাধা দিলে আমি, ইউপি সদস্য মো. শহীদ ও নাসিম উদ্দিন রুবেল কবর খোঁড়ার ব্যবস্থা করি।