কুমিল্লায় মাদক কারবারিদের গুলিতে সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার নাইম নিহত

কুমিল্লা প্রতিনিধি :

কুমিল্লার বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার সীমান্ত এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে ‘কুমিল্লার ডাক’ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার (সাংবাদিক) মহিউদ্দিন সরকার নাইমকে (২৮)।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) রাতে বুড়িচং উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী রাজাপুর ইউনিয়নের শংকুচাইল এলাকা সংলগ্ন হায়দ্রাবাদনগর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত সাংবাদিক ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোশারফ সরকারের ছেলে। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণপাড়া হলেও তারা সপরিবারে কুমিল্লার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বসবাস করতেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাদক ও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার বাড়ি জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় হলেও বুড়িচং উপজেলা পর্যায়েও মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ডে বেশ তৎপর ছিলেন।

পুলিশ, র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও উপজেলা প্রশাসনকেও মাদকবিরোধী অভিযানে সাহায্য করতেন। মাদকের চোরাচালান ধরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যরকম গুণ ছিল। সে কারণে তাকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে নিয়োগ করারও চেষ্টা ছিল বিভিন্ন সংস্থার।

জানা গেছে, বুড়িচং উপজেলার শীর্ষ মাদক কারবারি রাজুর বিরুদ্ধে যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরপর তিনটি স্ট্যাটাস দেওয়া এবং সীমান্ত এলাকায় বেশ কিছু মাদকের চালান ধরিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাহায্য করাই তার প্রাণনাশের মূল কারণ। সম্প্রতি মাদকের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রশাসন। সীমান্তে কড়া নজরদারি বাড়ায়। গেলো কয়েক মাসে ওই উপজেলায় মাদকের বেশ কিছু বড় চালান ধরা পড়ে। ওইসব অভিযানে মহিউদ্দিন অংশগ্রহণ করতেন। তাছাড়াও ওইসব অভিযানের অন্যতম সোর্স ছিলেন। বুড়িচং উপজেলার মাদক সংশ্লিষ্ট সব সংবাদও প্রচার করতেন। মাদক ব্যবসায়ী রাজুর সঙ্গে কয়েকদিন পূর্বেও বুড়িচং এলাকায় এই সাংবাদিকের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। রাজুর বাড়ি বাংলাদেশে হলেও ভারতে তার বহু আত্মীয়স্বজন রয়েছে।

অনেকেই ধারণা করছেন, তার দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে।ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের মাদক কারবারিরা সীমান্তে মাদক, চোরাচালান ও অস্ত্র চালানের বিষয়ে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছিল। সবমিলিয়ে মহিউদ্দিন দুই দেশের সীমান্ত সন্ত্রাসীদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠে। আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠা ও উপজেলা প্রশাসনের মাদকবিরোধী কড়া অবস্থানের কারণে পাল্টা চ্যালেঞ্জ হিসেবে মহিউদ্দিনকে হত্যা করা হতে পারে।

বুড়িচং থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, মহিউদ্দিনের শরীরে পাঁচটি আঘাতের চিহ্ন আছে। তার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও কোনও মামলা হয়নি। তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজু নামক এক মাদক কারবারির সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে আসছে। তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।’

মহিউদ্দিনের বাবা ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোশারফ সরকার বলেন, ‘আমার ছেলে মাদকের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থানে ছিল, তাই তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড করেছে। এখন আমরাও আতঙ্কিত। তারা কখন আমাদের মেরে ফেলে কে জানে।’

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা জানান, মাদকের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায় অভিযান আরও জোরালো করা হবে।