চট্টলা ডেস্ক : অবশেষে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছে বহুল প্রতীক্ষিত করোনা ভাইরাসের টিকা। প্রথম দফায় বরাদ্দের ৩৮ কার্টন (৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ) চট্টগ্রামে পৌঁছার পর সরাসরি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই স্টোরে রাখা হয়।
রবিবার সকাল ৭টার পর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভ্যানে করে বরাদ্দকৃত টিকা পৌঁছে দেয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যাল। চট্টগ্রামের জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির নেতৃত্বাধীন কমিটি এসব টিকা গ্রহণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরও।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি এ কমিটির নেতৃত্বে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, ইপিআই তত্ত্বাবধায়ক, ইপিআই কোল্ড চেইনের টেকনিশিয়ান, ওষুধ প্রশাসন এবং সিভিল সার্জন অফিসের একজন মেডিকেল অফিসারসহ মোট ৬ জনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা হয়।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, টিকা বহনকারী বেক্সিমকোর গাড়ি রবিবার সকাল ৭টার দিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছে। বুধবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর দেশে এরইমধ্যে করোনার টিকাদান শুরু হয়েছে। শুরুতে রাজধানী ঢাকায় এ টিকাদান কার্যক্রম চলছে। আর ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামসহ ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, প্রতি কার্টনে ১২০০ ভায়াল ভ্যাকসিন রয়েছে। ভ্যাকসিনের প্রতি ভায়ালে ১০টি ডোজ রয়েছে। সে হিসেবে প্রতি কার্টনে ১২ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন থাকছে। চট্টগ্রামের জন্য ৩৮ কার্টন ভ্যাকসিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে অতিরিক্ত আরো ৪ কার্টনসহ মোট বরাদ্দ উল্লেখ করা হয়েছে ৪২ কার্টন। ৪২ কার্টনে ৫০ হাজার ৪০০ ভায়াল হিসেবে মোট ৫ লাখ ৪ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পাচ্ছে চট্টগ্রাম। তবে প্রথম দফায় বরাদ্দের ৩৮ কার্টন (৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ) ভ্যাকসিন পাঠানো হয়। এসব টিকা মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলার উপজেলাগুলোতে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তদের মাঝে প্রদান করা হবে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরামর্শক্রমে ভ্যাকসিন পরবর্তী জটিলতা পর্যবেক্ষণে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে চট্টগ্রামে। বিভাগীয় পর্যায়ে পোস্ট ভ্যাকসিন ইনফেকশন কন্ট্রোল নামে এ কমিটির চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক। কো-চেয়ারম্যান হিসেবে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন সিভিল সার্জন। ইতোমধ্যে ডব্লিউএইচও এর আয়োজনে দুই দিনের একটি ওয়ার্কশপেও অংশ নিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।
টিকাদানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এলাকায় প্রাথমিকভাবে টিকাদান কেন্দ্র চূড়ান্ত করেছে চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটি। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নগরের ১৫টি কেন্দ্রে করোনার টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আর এসব কেন্দ্রে টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে ৪২টি টিম। টিকাদানকারী হিসেবে ২ জন মিড ওয়াইফ, স্টাফ নার্স বা সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং ৪ জন স্বেচ্ছা সেবকের সমন্বয়ে প্রতিটি টিমে মোট ৬ জন সদস্য থাকবেন।
সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লিখিত নির্দেশনা পেলেই টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা যাবে। চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হবে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। এর মধ্যে নগরীতে এ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং উপজেলায় ইউএনও।
নগরীর ১৫ কেন্দ্রে মোট ৪২টি টিম কাজ করবে। আর ১৪টি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে দেওয়া হবে করোনার টিকা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে দুটি করে টিম টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন।
রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ টিকা পাবেন না। তাই অগ্রাধিকারের জন্য ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ্লিকেশন অথবে ওয়েবসাইটে অনলাইন নিবন্ধন করতে হবে। মোবাইলে অ্যাপটি বিনামূল্যেই ডাউনলোড করা যাবে। (www.surokkha.gov.bd) মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন করতে পারবেন।
করোনা ভাইরাসসের টিকা দেওয়া হবে নগরীর যে ১৫টি কেন্দ্রে তা হলো- চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতাল, মা ও শিশু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম সেনানিবাস হাসপাতাল, চট্টগ্রাম পুলিশ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম নৌ-বাহিনী হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিমান বাহিনী হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতাল, চসিক বন্দরটিলা হাসপাতাল, চসিক মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল, চসিক ছাফা মোতালেব মাতৃসদন হাসপাতাল, ইউএসটিসি হাসপাতাল, সাউদার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং মেরিন সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।