রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি :
বিভীষিকার দীর্ঘ ১৬ বছর পার হয়ে গেলেও একটি মুহূর্তের জন্যও সেই নারকীয় দিনটি স্মরণ থেকে বিস্তৃত হয়নি বলে জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের রাজনৈতিক জীবনে তিনি বারবার মৌলবাদী অপশক্তি ও স্বাধীনতাবিরোধীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার ও কয়েকবার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কোন রক্তচক্ষু তাকে সংগ্রামের পথ থেকে পিছু হটাতে পারেনি।
সেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিভীষিকা এখনও তাকে তাড়া করে বেড়ায়। এখনও শরীরে তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন ৪০টি গ্রেনেডের স্প্লিন্টার। গ্রেনেডের ক্ষত ও সেদিনের দুঃসহ দিনগুলো এখনও তিনি ভুলতে পারেননি। দুই শতাধিক স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে আহত অবস্থায় ফিরে আসেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচিত সাংসদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সহকারী। তিনি ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার একজন অন্যতম রাজসাক্ষীও।
২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মুহূর্তে তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য অস্থায়ীভাবে ট্রাকের ওপর তৈরিকৃত মঞ্চের পাশেই ছিলেন। ঘাতকদের গ্রেনেড হামলা শুরু হওয়ার সাথে সাথে তিনিসহ শেখ হাসিনার পাশে থাকা সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতারা মানবদেয়াল রচনা করে শেখ হাসিনাকে রক্ষার চেষ্টা করেন। এ সময় তার শরীরে গ্রেনেডের প্রায় ২০০ স্প্লিন্টার বিঁধে যায়।
ভয়াবহ ২১শে আগস্টের সেদিনের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিস্ফোরিত গ্রেনেডে গুরুতর আহত হলে আমাদের দলের দুই নারী নেত্রীর সহায়তায় কোনোভাবে একটি বাসে উঠেছিলাম। যখন আমি হাসপাতালের পথে তখন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মনে হচ্ছিল আমার সমস্ত শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। যদি আর এক ঘণ্টা দেরি হতো, তাহলে সেদিন অন্য কিছু হয়ে যেতে পারতো। ওইদিন বিস্ফোরিত আর্জেস গ্রেনেডের অসংখ্য স্প্লিন্টার শরীরে ঢুকে যায়। চিকিৎসকরা কিছু স্প্লিন্টার বের করলেও ৪০টির মতো স্প্লিন্টার এখনও শরীরে রয়ে গেছে। যেগুলো বের করতে গেলে নার্ভ কেটে বের করতে হবে। ফলে আমার মৃত্যুও হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাকি স্প্লিন্টার গুলো বের করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনও আমার শরীরের নিচের অংশে ৪০টি স্প্লিন্টার আছে। তবে এতগুলো স্প্লিন্টার শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছি তারপরও ভাল লাগচ্ছে যে, সেদিন নেত্রীর পাশে দাঁড়াতে পেরেছিলাম। ঘাতকদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে পেরেছিলাম। সেদিন আমাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের দলের দুই নারীনেত্রীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।’তথ্যমন্ত্রী জানান, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরবর্তীতে চার জাতীয় নেতা এবং সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা একইসূত্রে গাঁথা। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল। শুধু হত্যার চেষ্টাই করেনি, ঘটনার পর জজ মিয়া নাটকের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রমকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে। ন্যাক্কারজনক ওই ঘটনার জন্য জাতি তাদের ক্ষমা করেনি।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কোনোদিন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। বিপদের দিনে ভয়ে পিছিয়ে যায় না। সেটারই প্রমাণ আমার শরীরে বিঁধে থাকা চল্লিশটি স্প্লিন্টার। আমরা শোককে শক্তিতে পরিণত করে রাজনীতি করে গেছি। যারা রাজনীতির বদলে ষড়যন্ত্র করেছেন, যারা হত্যার রাজনীতি করেছে তারা কেউ আমাদের থামাতে পারেনি। বরং নিজেরা থেমে গেছেন।’