কুমিল্লায় স্বামীর পরকীয়ার জেরে দুই সন্তানের জননীর বিষপানে আত্মহত্যা

কুমিল্লা প্রতিনিধি :

অন্য নারীর সঙ্গে স্বামীর প্রেমের সম্পর্কের জেরে দাম্পত্য কলহে দুই সন্তানের মা এক গৃহবধূ বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শনিবার (৩ অক্টোবর) রাত ৩টায় কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মাধবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় পুলিশ গৃহবধূ খায়রুন নাহার ঝুনুর (৪০) লাশ উদ্ধার করে।

ঘটনার পর থেকে তার স্বামী মো. শাহ আলম পলাতক রয়েছেন। মৃত খায়রুন নাহার ঝুনুর দুই সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে (১৬) নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং ছেলে (১৪) ঢাকার একটি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী।

দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় লাশ উদ্ধার করি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়েরসহ অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

স্থানীয় মাতবর রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ‘খায়রুন নাহারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কয়েকবার সালিশে বসেছি। শাহ আলম দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা কখনও স্বীকার করেননি। তার স্ত্রী বেশ কয়েকবার পরবর্তীতে সম্পর্কে জড়ানো নারী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়।’

পরিবার সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মাধবপুর গ্রামের মো. শাহ আলম বীজের ব্যবসা করেন স্থানীয় নিমসার বাজারে। তার দোকানের কর্মচারীর বোনের পারিবারিক ঝামেলা মেটানোর সূত্রে তার সঙ্গে সখ্যতা হয় তার। সেই থেকে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

গত ১৪ জুন শহরের একটি বাসায় ওই নারীর সঙ্গে স্বামী শাহ আলমকে দেখতে পান খায়রুন নাহার। সেখানেই তাকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ স্বজনদের। এরপর সামাজিকভাবেও বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টাও ব্যর্থ হন স্বজনরা।

নিহত খায়রুন নাহারের নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে বলেছে, ‘গত তিন বছর আগে আমার বাবা এ নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে প্রায়ই আমার বাবা মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতো। এ ছাড়াও গত ১৪ জুন কুমিল্লা নগরীর মুন্সেফ কোয়ার্টার এলাকায় একটি বাসায় গিয়ে আমার মা ওই নারীসহ বাবাকে দেখতে পান। ওইদিন ওই নারীর স্বজনরা মাকে বেদম মারধর করে। এ ঘটনার তিন দিন পর আমার মা গত ১৭ জুন কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নারী ও শিশু নির্যাতন সেলে একটি অভিযোগ দায়ের করে।’

সে আরও বলে, ‘শনিবার রাতে মা বাবাকে বলে, ‘হয় আমার সঙ্গে না হয় ওই নারীর সঙ্গে থাকো।’ এ নিয়ে তর্কাতর্কির মাঝে মা রাত দেড়টায় গোপনে বিষপান করে। পরে আমি বিষয়টি টের পাই। তখন আমার মা বলে, ‘তোমরা আমাকে মাফ করে দিও।’ পরে বাবা অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়, অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে মা মারা যায়।’