ফটিকছড়িতে নিখোঁজ মেয়েকে খুঁজতে গিয়ে প্রতারণার শিকার মা !

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি:

অপহরণের পর নিখোঁজ মেয়ের খোঁজ করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার মা মনোয়ারা বেগম, খোয়ালেন টাকাও! অবশেষে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে পেরে ফোরকান ও আমির হোসেন এ দুই জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে আদালতে করেছেন মামলা।

ঘটনাটি ঘটেছে ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানাধীন ১১নং সোয়াবিল ইউনিয়নের পশ্চিম সোয়াবিল, শোভনছড়ি ৬নং ওয়ার্ড এলাকায়।

এর আগে ভুজপুর থানায় অপহরণ মামলা করতে গিয়ে থানা মামলা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই ভুক্তভোগী মামলার বাদী মনোয়ারা বেগমের কাছ থেকে।

জানা গেছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় বাদীনি মনোয়ারা বেগম তার ছোট মেয়ে নিশু আক্তারকে নিয়ে স্কুলে দিয়ে আসতে গেলে ঘরে তার বড় মেয়ে শান্তনা ইসলাম সীমা ওরফে আঁখিকে ঘরের গৃহস্থালি কাজে রেখে যান। একঘন্টা পরে এসে বড় মেয়ে আঁখিকে ঘরে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করেন। আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি সহ অন্যান্য আরো জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে চলতি মাসের অক্টোবরের ২ তারিখ ভুজপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন মামলার বাদী মনোয়ারা বেগমের ছেলে মোহাম্মদ এমরান।

আদালতের মামলায় ঘটনার বিবরণে আরো জানা যায়, এরপর ৩ অক্টোবর বিকেল ৫ টার পর বাদী অর্থাৎ নিখোঁজ আঁখির মায়ের মোবাইলে ফোন করে এক ব্যক্তি। নিজেকে দাউদকান্দি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিচয় দিয়ে মেয়ে আঁখিকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেন এবং আঁখিকে দ্রুত চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হবে জানিয়ে বাদীর কাছ থেকে ০১৯৯৮১৩২০১৫ নম্বরের একটি নগদ নাম্বারে ৮০০০/-(আট হাজার টাকা) দাবি করেন। পরে আঁখির মা এতে বিশ্বাস করে নগদ একাউন্টে নাম্বারে ২০০০/-(দুই হাজার টাকা) পাঠান। কিন্তু ওই টাকা পাঠানোর পর পরই নগদ একাউন্ট নাম্বার ও পুলিশ পরিচয় দিয়ে ফোন করা ওই নাম্বার দুটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, পরবর্তীতে ৬ অক্টোবর মামলায় উল্লেখিত ২নং আসামি আমির হোসেন এলাকায় বলাবলি করতে শোনা যায়, বাদী মনোয়ারা বেগমের বড় মেয়ে আঁখিকে মামলার ১নং আসামি একই ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মিজ্জির বাড়ীর মোহাম্মদ ওসমানের ছেলে ফোরকান ও ৬নং ওয়ার্ডের নয়াহাট এলাকার মোহাম্মদ সোলায়মানের ছেলে আমির হোসেন ও কয়েকজন মিলে অপহরণ করে নিয়ে গেছে ঘর থেকে।

মামলায় উল্লেখিত আসামিরা দীর্ঘ দিন ধরে ভিকটিম আঁখিকে প্রেমের সম্পর্ক করার জন্য প্রস্তাব দিয়ে আসছিল আসামি ফোরকান। কিন্তু আঁখি এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এই অপহরণ করা হয়েছে বলে দাবি মামলার বাদী মনোয়ারা বেগমের।

বিষয়টি নিয়ে ওই মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী রফিকুল হক জানান, ভুজপুর থানায় মামলা না নেয়ায় ভুক্তভোগী আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল -৭ এ গত ১৩ অক্টোবর ফৌজদারি অপরাধের দায়ে মামলা দায়ের করেন। এতে ২ জনকে আসামি করে আরো ২/৩জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি গ্রহণ করে ভুজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলাটি থানায় এজাহারভুক্ত করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে ভুজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন জানান, নিখোঁজের ভাই এমরান থানায় শুধুমাত্র আঁখিকে পাওয়া না যাওয়ায় নিখোঁজ ডায়রি করেছেন। এরপর তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ আর মামলা করতে থানায় আসেন নি। থানায় মামলা না নেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং তদন্ত করলে সেটার প্রমাণ মিলবে।

আদালতের মামলার বিষয়ে ওসি জানান, আদালতে করা মামলাটি ১৭ অক্টোবর থানায় এসে পৌঁছেছে। মামলা রুজু করার প্রস্তুতি চলছে। যার মামলা নাম্বার হবে -৫। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, নিখোঁজের ২০ দিন পার হতে চললেও আঁখিকে ফিরে না পাওয়ায় পাগল প্রায় মা মনোয়ারা বেগম বলে জানান আঁখির ভাই এমরান। তাদের দাবি পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিলেই তার বোনকে অপহরণ থেকে উদ্ধার সহ অপহরণকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব।