আজ, রবিবার | ১৬ মার্চ, ২০২৫ | ২ চৈত্র, ১৪৩১ । ১৫ রমজান, ১৪৪৬
লোহাগাড়ার ব্যবসায়ী হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার
প্রকাশ : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ৩:৩৫ : অপরাহ্ণ |
বিভাগ : বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা
প্রেস বিজ্ঞপ্তি :
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার ব্যবসায়ী জানে আলমকে হত্যা করে ২০ বছর লুকিয়ে ছিলেন মামলার প্রধান আসামি মো. জসিম উদ্দিন (৫০)।
হত্যার পর নিজের পরিচয় লুকিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চালকের বেশে চালিয়েছে বাস-ট্রাক। একই স্থানে ছিল না বেশিদিন।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানার নিমতলা বিশ্বরোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে লাইসেন্স ও অন্যান্য কাগজ পত্র তৈরির সময় ব্যবহার করেছে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র। এতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন ২০টি বছর। তবে শেষ রক্ষা হয়নি; ধরা পড়তে হয়েছে র্যাবের হাতে।
র্যাব জানায়, আদালতে সাক্ষী দেয়ায় ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ২০০২ সালের ৩০ মার্চ সকাল ৯টায় স্থানীয় লোকেরা ব্যবসায়ী জানে আলমকে (৪৮) নির্মম ও নৃশংসভাবে লাঠি সোটা, দেশিয় ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে এবং গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে নিহতের বড় ছেলে মো. তজবিরুল আলম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মধ্যে জসিম উদ্দিন ছিলেন মামলার প্রধান আসামি ছিলেন। হত্যা মামলায় ঘটনায় ২০০৭ সালের ২৪ জুলাই ১২ জনকে ফাঁসি এবং ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে রায় দেন আদালত। পরে সুপ্রীম কোর্টে আপিল করলেও আদালত জসিম উদ্দিনসহ মোট ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাকীদের খালাস দেন।এর আগে, ২০০১ সালের ৯ নভেম্বর নিহতের (জানে আলম) আপন ছোট ভাইকেও নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তার আপন ছোট ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন নিহত জানে আলম। জানে আলম পরিবারের বড় ছেলে এবং আর্থিকভাবেও কিছুটা স্বচ্ছল ছিলেন। তাই মামলা-মোকদ্দমার ব্যয়ভার তিনি বহন করতেন। এতে প্রতিপক্ষের আক্রোশ তার উপর দিন দিন বেড়ে যায়। খুনিরা ভাবতো ব্যবসায়ী জানে আলকে হত্যা করলে ওই পরিবারের মামলা-মোকদ্দমা চালাবার মত কোন লোক থাকবে না এবং প্রত্যক্ষভাবে আর কোন সাক্ষীও থাকবে না। এছাড়া তার সকল সম্পত্তি সহজে তারা গ্রাস করতে পারবে। এই কারণে খুনিরা প্রকাশ্যে দিবালোকে ব্যবসায়ী জানে আলমকেও নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করে।
র্যাব আরও জানায়, প্রথম হত্যার পরপরই গ্রেপ্তার মো. জসিম উদ্দিন (৫০) চট্টগ্রাম নগরের ডাবলমুড়িং থানার ফকিরহাট এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে ট্রাক চালাতেন। সেখান থেকে গিয়ে দ্বিতীয় হত্যার আলোচিত জানে আলম হত্যায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর কালুরঘাট এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বোয়ালখালীতে বিয়ে করে এবং লোহাগাড়ায় নিজের পৈত্রিক ভিটা-বাড়ী ফেলে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। পরে কালুরঘাট এলাকায় চালকের পেশায় তিন বছরের মত অবস্থান করে। এরপর আগ্রাবাদ ডেবারপাড় বাসা নিয়ে থাকতেন। পরে সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন করে ফকির হাটে বাসা ভাড়া নিয়ে সাত বছর মতো ছিলেন। আবার সেখান থেকেও বাসা পরিবর্তন করে বন্দর থানায় নিমতলা বাসা ভাড়া নিয়ে ছিলেন; সেখানেও বাস-ট্রাক চালাতেন। তবে ড্রাইভারের লাইসেন্স ও অন্যান্য কাগজ পত্র তৈরিতে সে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে আসছিল। এতে তার আসল পরিচয় উল্লেখ না থাকায় তাকে খুঁজে বের করতে আইনশৃংলাবাহিনীর বেগ পেতে হয়েছে।
২০ বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের সদস্যরা।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানে আলম হত্যা মামলার প্রধান আসামির অবস্থান জানতে পেরে সেখানে অভিযান চালানো হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নগরের বন্দর থানার নিমতলা বিশ্বরোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে ওই মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। গত ২০ বছর ধরে নিজের পরিচয় লুকিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করে আসছে।