সঠিক আবহাওয়া পূর্বাভাসে বাঁচাতে পারে হাজার কোটি টাকা: চসিক মেয়র

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আধুনিকায়নের মাধ্যমে সঠিক পূর্বাভাসপ্রাপ্তি দুর্যোগকালের হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস কর‍তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী৷

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিশ্ব আবহাওয়া দিবস উপলক্ষ্যে আবহাওয়া ও ভূ-প্রাকৃতিক কেন্দ্র কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় মেয়র এ মন্তব্য করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, প্রকৃতির কাছে আমাদের অসহায়ত্ব অনেকটাই কমিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস। সাধারণ মানুষ বিশেষত কৃষক এবং নদী-সমুদ্রকেন্দ্রীক ব্যবসা পরিচালনাকারীরা আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুসরণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি থেকে মুক্তি পাচ্ছে।”বিশ্বের পরিবর্তিত জলবায়ুর সবচেয়ে বড় শিকার বাংলাদেশসহ নিম্নভূমির দেশগুলি। আমাদের নদী ভাংছে, সমুদ্রের উচ্চতা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, লবণাক্ততা বাড়ছে। ফলে একদিকে কৃষিখাত হুমকির মুখে অন্যদিকে বাড়ছে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আধুনিকায়নের মাধ্যমে সঠিক পূর্বাভাস দুর্যোগকালের হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করতে পারে।”

বর্তমানে কৃষি খাতের উন্নয়ন আর দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাফল্যের অন্যতম নেপথ্যনায়ক আবহাওয়ার অধিদপ্তর বলে মন্তব্য করেন মেয়র।

সভাপতির বক্তব্যে আবহাওয়া ও ভূ-প্রাকৃতিক কেন্দ্র, চট্টগ্রামের উপপরিচালক ড. মোঃ ছাদেকুল আলম বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস,কৃষি, নগর পরিকল্পনা, জরুরী সেবা প্রতিটি ক্ষেত্রে আবহাওয়া উপাত্ত ও পূর্বাভাসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আধুনিক প্রযুক্তি যেমন-হাই পারফরমেন্স কম্পিউটার, স্যাটেলাইট এবং রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি, স্মার্ট মোবাইল ডিভাইসের কারণে এই পরিসেবাগুলোতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।

“উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও অধিক দক্ষতার সাথে আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানি সম্পর্কিত দুর্যোগের পূর্বাভাস প্রদান করছে, যা দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নকে বেগবান করেছে। বিভিন্ন ধরনের আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য বর্তমানে সারাদেশে ৬১টি প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার, ১৯টি কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার হতে দিবা-রাত্রি ২৪ ঘন্টা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ গ্রহণ করা হচ্ছে। এই ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে দুইশতাধিক স্থানে এবং আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরসমূহে স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপনের কাজ চলমান আছে।”অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের কার্যক্রমের উপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন আবহাওয়া ও ভূ-প্রাকৃতিক কেন্দ্র, চট্টগ্রামের কর্মকর্তাবৃন্দ। প্রতি বছর ২৩ মার্চ বিশ্ব আবহাওয়া দিবস পালিত হয়ে আসছে। ১৯৫০ সালের এদিনে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (World Meteorological Organization) প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ বছরে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল-“ The Future of Weather, Climate and Water across Generations”. (প্রজন্মব্যাপী আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানির প্রভাব)। এ প্রতিপাদ্যের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানির প্রভাব সম্পর্কে গুরুত্ব অনুধাবন। অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা-খরা, ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী, টর্ণেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে এদেশের মানুষের বসবাস। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা অথবা দুর্যোগকে থামিয়ে দেয়া অসম্ভব।

তবে সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়ার সঠিক ও সময়োপযোগী পূর্বাভাস এবং আগাম পদক্ষেপের কারণে বিভিন্ন দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের ক্ষতির পরিমান প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জাতীয় পর্যায়ে নিয়মিতভাবে আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদান করে থাকে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীগণ কৃষকদের জন্য কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য স্বয়ং সম্পূর্ণতা ধরে রাখতে প্রত্যক্ষভাবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

আবহাওয়া বিষয়ক হালনাগাদ তথ্য বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়বসাইটের মাধ্যমে সহজে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া নদী ও সমুদ্র বিষয়ক পূর্বাভাস, নিরাপদ বিমান চলাচলে বৈমানিকদের জন্য আলাদাভাবে নিয়মিত আবহাওয়া পূর্বাভাস ও সতর্কবাণী প্রদান করা হয়ে থাকে।