চট্টলা ডেস্ক :
বাংলাদেশের সকল বয়সী নাগরিকদের জনতাত্ত্বিক ও বায়োমেট্রিকসহ ২৯ ধরনের তথ্য নিয়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ তথ্যভাণ্ডার তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
এই তথ্য ভাণ্ডারে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একটি স্বতন্ত্র শনাক্তকরণ নম্বর থাকবে, যা দিয়ে প্রত্যেককে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যাবে। এই তথ্য ভাণ্ডারের মাধ্যমে দেশের জনমিতিক পরিসংখ্যান, আগমন-বহির্গমন, পেশা, ধর্ম, বর্ণ, জন্ম- মৃত্যু, বিবাহ-তালাকসহ সব ধরনের তথ্য উপাত্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
সেজন্য বিবিএস এর ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার অনুবিভাগ একটি উদ্যোগ নিয়েছে।
এর ধারাবহিকতায় রোববার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একটি কর্মশালা ও মতবিনিময় সভা হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল আলমও উপস্থিত ছিলেন এই উদ্যোগটিতে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশে এই রকম তথ্য ভাণ্ডার থাকলেও বাংলাদেশে এবারই প্রথম এত বিস্তৃত পরিসরে তথ্যভাণ্ডার করার উদ্যোগ নেওয়া হল।
জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডার থাকার পরও কেন পরিসংখ্যান ব্যুরো এ প্রকল্প হাতে নিল, তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘দেশে বর্তমানে নাগরিকদের অনেক তথ্য সম্বলিত তথ্য ভাণ্ডার রয়েছে। কিন্তু সেখানে দেশের সকল বয়সীদের কিম্বা সকল তথ্য নেই। প্রস্তাবিত প্রকল্পে দেশের শতভাগ নাগরিকের তথ্য নিয়ে এই তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করা হবে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রস্তাবিত প্রকল্পে যেন তথ্য সংগ্রহে কোনো ওভারল্যাপিং (দ্বৈততা) না হয়ে, সমন্বিত একটি কাজ হয়। কারণ ওভারল্যাপিংয়ে সময়, শক্তি এবং রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় হয়।’
পাশাপাশি তথ্যের সুরক্ষার ওপর জোর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রতিটি মানুষের তথ্যের প্রাইভেসি একটি ভয়ঙ্কর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা নিয়ে অনেক দেশে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এবং এটা নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিতর্ক রয়েছে। তাই বিষয়টা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’
‘এমনও কোম্পানি গড়ে ওঠেছে, যারা আমার ঘরের সব খবর জানে। এর একটা প্রচণ্ড বাণিজ্যিক মূল্য আছে। তারা প্রযুক্তি দিয়ে টাকা আয় করছে। আমাদের মতো পিছিয়ে পড়া দেশগুলো এই সুযোগ হারাচ্ছে। আমাদের রাজস্ব কম বলে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করতে না পারায় আমরা পিছিয়ে পড়ছি।’
মন্ত্রী বলেন, বিবিএসের তথ্যভাণ্ডারে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের তথ্য থাকবে। সুতরাং সেসব তথ্য বেহাত হয়ে মানুষ যেন বেকায়দায় না পড়ে, সেদিকে সচেতন থাকতে হবে।পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, প্রস্তাবিত এই তথ্য ভাণ্ডার জনশুমারির চেয়ে আরো বিস্তৃত হবে। এখানে নাগরিকের ২৯ ধরনের তথ্য থাকবে। সরকার তার নিজের প্রয়োজনে এসব তথ্য ব্যবহার করবে। তবে অন্য কারো জন্য এই তথ্য উন্মুক্ত থাকবে না।‘বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে এটা অনেক আগেই শুরু হয়েছে। তারা মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যকে অনেক সম্মান করে।
আমাদের দেশেও যেন এই তথ্য ভাণ্ডার থেকে যে কেউ তথ্য ব্যবহার করতে না পারে, সে দিকে সজাগ থাকতে হবে।’
কর্মশালার মূল প্রবন্ধে বিবিএসের পরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, নাগরিকদের প্রয়োজনীয় জনতাত্ত্বিক উপাত্তসহ সব ধরনের তথ্য নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে এই তথ্য ভাণ্ডার সৃষ্টি করা হবে। যে কোনো নীতি প্রণয়ন এবং যে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা শ্রেণীর জন্য কোনো পদক্ষেপ নিতে সরকার এই তথ্য ভাণ্ডার ব্যবহার করতে পারবে।
বিবিএস পরিচালক বলেন, বর্তমানে দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও এর কম বয়সীদের তথ্য কোথাও সঞ্চিত নেই। প্রস্তাবিত তথ্য ভাণ্ডারে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুসহ সকল বয়সের মানুষের জনতাত্ত্বিক ও বায়োমেট্রিক তথ্য থাকবে।‘এই তথ্য ভাণ্ডারে প্রত্যেকের জন্য একটি শনাক্তকরণ নম্বর থাকবে, যেটা দিয়ে ওই ব্যক্তির, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, পেশা, আগমন-বহির্গমন, জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ-তালাক ইত্যাদির রিয়েল টাইম তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে।’
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. ইয়ামিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিবিএস এর ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার (এনপিআর) এর পরিচালক ড. মো. শাহাদাত হোসাইন।