কর্ণফুলী টানেল এপ্রিলে উন্মুক্ত করা হতে পারে- সেতুমন্ত্রী

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল যান চলাচলের জন্য আগামী এপ্রিলে বা মে মাসে খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।

শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে একথা জানান তিনি।

সেতু মন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে টানেল হচ্ছে। যেটি দক্ষিণের এশিয়ার কোথাও নেই। আমি প্রথম যখন এলাকাটি দেখতে যায় তখন দাঁড়িয়ে মনে হয়নি এরকম একটা কিছু হতে পারে। সাংহাইয়ের মতো চট্টগ্রাম হচ্ছে ওয়ান সিটি টু টাউন। এ টানেলে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। এখন হচ্ছে শেষ মূহুর্তের কিছু কাজ। কাজের অগ্রগতি ৯৫ দশমিক ৫ শতাংশ। কোনো দুর্ঘটনা যাতে না হয় সেজন্য টানেলে প্রবেশের পূর্বে যানবাহন স্ক্যান করা হবে। সেই স্ক্যানার বসানোর কাজ চলছে। এপ্রিলে বা মে মাসে আমরা সর্ব সাধারণের জন্য খুলে দিতে পারবে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম আরও এগিয়ে যাবে। চট্টগ্রাম আমাদের প্রাণের স্পন্দন, অর্থনীতির স্পন্দন। আমাদের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রামের অবদান আমরা স্বীকার করি। টানেল হয়ে গেলে চট্টগ্রামে জাদুকরী পরিবর্তন আসবে। টানেলের কারণে কক্সবাজার আরও কাছে চলে আসবে।’

২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর একনেক সভায় চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে টানেল নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে।

নির্মাণ কাজ করছে চীনা কোম্পানি- চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড (সিসিসি)। তখন ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বরের একনেক সভায় প্রায় ১ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা ব্যয় এবং বাস্তবায়ন সময় এক বছর ৬ মাস বাড়িয়ে প্রথমবার প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। তাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।

তখন প্রকল্পটি ২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার লক্ষ্য ধরা হলেও কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সরকার বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক বছর বাড়ানোর সুযোগ দেয়। সে হিসাবে প্রকল্পটি গত ডিসেম্বর মাসে শেষ করার কথা ছিল। আবার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় আরও ৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে সম্প্রতি। প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংশোধন প্রস্তাবটি আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপিত হতে পারে। দ্বিতীয়বার সংশোধন করার এই প্রস্তাব অনুমোদন পেলে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়াবে ১০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে প্রতিটি টিউব বা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে অন্য টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। প্রতিটি টিউবে দুইটি করে মোট চারটি লেইন তৈরি করা হয়েছে। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই টানেল কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে বের হবে।

৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দু’টি টিউব দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। টানেলের উত্তরে নগরীর দিকে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাটগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে। নদীর তলদেশে টানেলের দুটি টিউবের নির্মাণকাজ শেষ, ভেতরে অবকাঠামোগত কাজ চলছে।