কেরোসিন আমদানি বন্ধ দীর্ঘ নয় বছর ধরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের

অর্থনীতি ডেস্ক:

দুই দশক আগেও দেশের অভ্যন্তরে বছরে পাঁচ-ছয় লাখ টন কেরোসিন বিক্রি হতো। কিন্তু ক্রমান্বয়ে তা কমে ২০১১ সালে দেড় লাখ টনে এসে ঠেকেছে। এরপর নতুন নতুন এলাকা বিদ্যুতায়িত হওয়া, প্রযুক্তির সুবাধে ডিজেলচালিত যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় গত নয় বছর ধরে কেরোসিন আমদানি বন্ধ রেখেছে বিপিসি। শুধু তাই নয়, ১১ বছর আগে সাড়ে ৬ লাখেরও বেশি মেট্রিকটন ফার্নেস অয়েল আমদানি হলেও বর্তমানে জ্বালানিটির আমদানি এসে ঠেকেছে দেড় লাখ মেট্রিকটনে।

এগারো থেকে বারো বছর আগেও জ্বালানির অন্যতম উৎস ছিল কেরোসিন। বাসাবাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কারখানায় পণ্য উৎপাদনের জন্য জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হতো কেরোসিন। গ্যাস, বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ায় গত নয় বছর ধরে এই জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমেছে সাধারণ মানুষের।

ফলে চাহিদা না থাকায় বর্তমানে কেরোসিনের আমদানি এসে ঠেকেছে শুন্যের কোটায়। যদিও দেশিয় তেল পরিশোধনাগার থেকে পাওয়া কেরোসিন দিয়ে চাহিদা মেটানোর কথা বলছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন কর্তৃপক্ষ (বিপিসি)। পাশাপাশি ফার্নেস অয়েল ও মবিলের আমদানিও নেমেছে তলানিতে।

পাশাপাশি ২০১৪ সাল থেকে মোবিলের (লুব অয়েল) আমদানিও বন্ধ হয়ে গেছে।বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদা কমে মজুদ বাড়তে থাকায় কেরোসিন আমদানি বন্ধ করা হয়েছে। চাহিদার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত কেরোসিনের আমদানি বন্ধ থাকবে। পাশপাশি চাহিদা কমায় এবং ইস্টার্ন রিফাইনারিতে (ইআরএল) উৎপাদিত ও বিভিন্ন ফ্রাকশনেসন প্ল্যান্ট হতে সংগ্রহ করে বাকি জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটানো হচ্ছে।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে ১ লাখ ৪১ হাজার ১০৩ টন কেরোসিন আমদানি হয়েছিল। ২০১০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৭ হাজার ৭৫৮ টনে। তবে ২০১১ সালে কেরোসিন আমদানি কিছুটা বেড়ে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৯৮ টনে উন্নীত হয়। ২০১২ সালে পণ্যটির আমদানি আবার কমে ২০ হাজার ৩৮০ টনে পৌঁছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে বিপিসি ২৮ হাজার ৩৭৬ টন কেরোসিন আমদানি করেছিল। চাহিদা না থাকায় ২০১৪ সালেই কেরোসিন আমদানি বন্ধ করে দেয় বিপিসি।

তাছাড়া ২০১০ সালে আমদানি করা ৩ লাখ ৯৭ হাজার ২০৯ টন কেরোসিন বিক্রি করেছিল বিপিসি। ২০১৪ সালে মজুদ ও স্থানীয় রিফাইনারি থেকে সংগৃহীত ২ লাখ ১৪ হাজার ৩৬০ টন কেরোসিন বিক্রি হয়েছিল। কেরোসিন মূলত গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার হয় বিধায় ধীরে ধীরে এর ব্যবহারও কমে এসেছে। ২০১৪ সালে বিক্রি হওয়া ২ লাখ ৬৩ হাজার টন কেরোসিনের মধ্যে ৯৭ ভাগ ব্যবহার হয়েছে গৃহস্থালি কাজে। বাকি কেরোসিনের মধ্যে ৬ হাজার ২৯১ টন শিল্পে, ১শ টন রেল চলাচলে এবং নৌ-যানবাহন ও ৯৫ টন আনুষাঙ্গিক কাজে ব্যবহার হয়েছে।

শুধু করোসিন নয়, মবিলের আমদানিও বন্ধ রেখেছে বিপিসি। ২০১২ সালে ৪ হাজার ৮৫২ মেট্রিকটন লুব অয়েল (মবিল) আমদানির পর এখন আমদানি বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি ফার্নেস তেলের (মোগাস) আমদানিও কমেছে। ২০১১ সালে ৬ লাখ ৬৫ হাজার ২৬০ মেট্রিকটন ফার্সেন অয়েল আমদানি হলেও গতবছর মাত্র ১ লাখ ৪১ হাজার ২৫ মেট্রিকটন পণ্য আমদানি হয়। তবে জ্বালানি তেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় ডিজেল। ২০১১ সালে ২৯ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯৮ মেট্রিকটন ডিজেল আমদানি হলেও গতবছর আমদানি হয়েছিল ৩৬ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫৮ মেট্রিকটন।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মুস্তফা কুদরুত-ই-ইলাহী বলেন, একসময় দেশে বছরে পাঁচ-ছয় লাখ টন কেরোসিন বিক্রি হতো। এক দশক আগেও প্রতিবছর চার লাখেরও বেশি টন কেরোসিন বিক্রি হয়েছিল। চাহিদা কমতে থাকায় গতবছরও আমরা কেরোসিন আমদানি করিনি। একই অবস্থা লুব অয়েলেও।

ইআরএল-এ উৎপাদিত ও বিভিন্ন ফ্রাকশনেসন প্ল্যান্ট হতে পাওয়া বিভিন্ন জ্বালানি পণ্য দ্বারা দেশের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। চাহিদা বাড়লে তখন আমদানি বাড়ানোর চিন্তা করা যেতে পারে।