নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রামে গত বছরগুলোতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় চা উৎপাদন বেশি হলেও প্রতিবছর চায়ের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। তাই অভ্যন্তরীণ চায়ের চাহিদা মেটাতে গিয়ে কমেছে রপ্তানিও। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) গত বছরের তুলনায় চট্টগ্রামে বেড়েছে চা উৎপাদন।
চট্টগ্রাম চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ৭৭ হাজার ৭৮০ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সাত মাসে উৎপাদন করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৩১৩ কেজি চা। অপরদিকে ২০২০ সালের প্রথম সাত মাসে উৎপাদন হয়েছিল ৩৩ হাজার ৯৮৭ কেজি চা।
চলতি বছরের প্রতি মাসে পর্যায়ক্রমে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে। জানুয়ারি মাসে ২৮৬ কেজি, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৯ কেজি, মার্চ মাসে ১ হাজার ৬৮১ কেজি, এপ্রিল মাসে ৩ হাজার ৯৩২ কেজি, মে মাসে ৬ হাজার ২৮৩ কেজি, জুন মাসে ১৩ হাজার ৫৪৩ কেজি ও সর্বশেষ জুলাই মাসে ১২ হাজার ৫৬৯ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।
অপরদিকে গত বছরের জানুয়ারি মাসে ১৭৫ কেজি, ফেব্রুয়ারি মাসে ২৬ কেজি, মার্চ মাসে ১ হাজার ৬২৫ কেজি, এপ্রিল মাসে ২ হাজার ৩৬৫ কেজি, মে মাসে ৮ হাজার ৬৫৫ কেজি, জুন মাসে ৮ হাজার ৯৬৩ কেজি ও জুলাই মাসে ১২ হাজার ১৭৮ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। দুই বছরের প্রথম সাত মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় চলতি বছর পর্যায়ক্রমে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে।অভ্যন্তরীণ চাহিদা বিশ্লেষণে দেখা গছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চট্টগ্রামে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল ৭০ হাজার ৯৮০ কেজি, ২০১৭ -১৮ অর্থবছরে ৭৭ হাজার ৭৭২ কেজি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৮ হাজার ৮৬০ কেজি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৫ হাজার ৩৮২ কেজি ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৫ হাজার ৬৫ কেজি। বিগত পাঁচ বছরে সার্বিকভাবে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ছেই।
বিগত দুই বছরের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিগত বছরগুলোতে চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চা উৎপাদন করা হয়েছে। ২০২০ সালে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫ হাজার ৯৪০ কেজি, উৎপাদন হয়েছিল ৮৬ হাজার ৩৯৬ কেজি। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪ হাজার ১৪০ কেজি, উৎপাদন হয়েছিল ৯৬ হাজার ৬৯ কেজি। চলতি বছরও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চা উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে চা বোর্ড। এদিকে খোলা ও প্যাকেটজাত চা বিক্রি করে থাকে চা বোর্ড। তবে খোলা চায়ের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে ১৭৩ কেজি চা প্রতিকেজি ১৮২ টাকা ২৭ পয়সা দরে, ফ্রেব্রুয়ারি মাসে ১৫৬ কেজি চা প্রতি কেজি ১৮৪ টাকা ৭৫ পয়সা দরে, মার্চ মাসে ১৪৯ কেজি চা প্রতি কেজি ১৯৮ টাকা ৬৭ পয়সা দরে, এপ্রিল মাসে ১০৩ কেজি চা প্রতি কেজি ২১২ টাকা ৮ পয়সা দরে, মে মাসে ২২৯ কেজি চা প্রতি কেজি ২০৫ টাকা ৩ পয়সা ও জুন মাসে ৩৪০ কেজি চা প্রতি কেজি ২২০ টাকা ৩৯ পয়সা দরে বিক্রি করেছে চা বোর্ড। সার্বিক চিত্রে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে চায়ের উৎপাদন ও দাম দুটোই বেড়েছে।
২০১৯ ও ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে চলতি বছরের তুলনায় কম দামে চা পাতা বিক্রি করা হয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রতি কেজি চা ১৮৩ টাকা ৭৭ পয়সা, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৭৮ টাকা ৪১ পয়সা, মার্চ মাসে ১৮৪ টাকা ৯৬ পয়সা, এপ্রিল মাসে ১৮০ টাকা ১১ পয়সা, মে মাসে ১৭৯ টাকা ৯ পয়সা ও জুন মাসে ১৭২ টাকা ৬ পয়সা দরে বিক্রি হয়েছে। অপরদিকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রতি কেজি চা ২১৩ টাকা ৪০ পয়সা দরে, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৩৭ টাকা ৬২ পয়সা, মার্চ মাসে ১৬৮ টাকা ৭০ পয়সা, এপ্রিল মাসে ১৬৭ টাকা, মে মাসে ১৬৩ টাকা ৫৬ পয়সা ও জুন মাসে ১৫৫ টাকা ৮৮ পয়সা দরে চা পাতা বিক্রি করা হয়েছে।
বিগত দু’বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে চায়ের দাম তুলনামূলক বেড়েছে। অপরদিকে এক সময় প্রচুর চা বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়েছে। তবে দিন দিন চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিদেশে চা রপ্তানির প্রবণতা কমে গেছে। তবে চা বোর্ডের অনুমতি নিয়ে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এখনো চা রপ্তানি করছে, যার পরিমাণ অনেক কম।চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে পাকিস্তানে ১০ কেজি ও যুক্তরাষ্ট্রে ১০ কেজি চা রপ্তানি করা হয়েছে।
অপরদিকে ২০২০ সালের একই সময়ে ব্রণাইয়ে ১১৫ প্যাকেট, ফ্রান্সে ১ হাজার ১০১ প্যাকেট, জাপানে ২১৫ প্যাকেট, কাতারে ১ হাজার ৫৩২ প্যাকেট, থাইল্যান্ডে ৬৪৭ প্যাকেট ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৯ হাজার ৮৫২ প্যাকেট চা রপ্তানি করা হয়েছে।জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার গবেষণা মতে, ২০২৭ সালে বাংলাদেশে চায়ের উৎপাদন দাঁড়াবে ৯ কোটি ৬৮ লাখ কেজিতে। গত বছরই দেশে চায়ের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজিতে। এদিকে চা–বাগান না থাকলেও লাইসেন্স নিয়ে চা বিপণনে যুক্ত হয়েছে আবুল খায়ের, মেঘনা, পারটেক্স স্টার ও এসিআই গ্রুপ।
শুধু যুক্ত নয়, চা বিপণনে এখন আবুল খায়ের দ্বিতীয় এবং মেঘনা তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে।
চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৬৭টি বাগানের ২১টি চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত। সবচেয়ে বেশি চা বাগান সিলেট বিভাগে। বিভাগটির মৌলভীবাজার জেলায় ৯১টি, হবিগঞ্জ জেলায় ২৫টি এবং সিলেট জেলায় ১৯টি চা–বাগান রয়েছে। এছাড়া পঞ্চগড়ে আটটি, রাঙ্গামাটিতে একটি এবং ঠাকুরগাঁওতে একটি চা–বাগান রয়েছে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক (বাণিজ্য) (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ মদহুল কবীর চৌধুরীর সাথেযোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করেন নি।