চট্টগ্রামের ৮টি পণ্য সামগ্রী বিশ্ব রপ্তানিতে উচ্চ শিখরে : রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো

অর্থনীতি ডেস্ক :

দুই বছরের কাছাকাছি সময় ধরে করোনা মহামারির ধকল সামলে চট্টগ্রামের ৮টি পণ্য সামগ্রী বিশ্ব রপ্তানিতে উচ্চ শিখরে পৌঁছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে ১১টি পণ্য রপ্তানি হলেও রপ্তানি আয়ের শীর্ষ ভাগ আসছে ওভেন পোশাক, নীটওয়্যার, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চামড়া-চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা এবং প্রকৌশল দ্রব্যাদির মতো পণ্য থেকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট থেকে শুরু করে এসব পণ্য রপ্তানির তালিকায় পর্যায়ক্রমে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, কানাডা, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জাপান, চীন, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, রাশিয়া, পোল্যান্ডের অবস্থান।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ১১টি পণ্য থেকে ৫৭ হাজার ৫৯০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এরমধ্যে ওভেন পোশাক, নীটওয়্যার, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চামড়া-চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা এবং প্রকৌশল দ্রব্যাদি থেকেই আয় আসে ৫৪ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা।

বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে পোশাক খাতে চরম বিপর্যয়ে পড়ে ছিল। তবে বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর কার্যাদেশ আসছে। তবে চট্টগ্রামে কারখানা পরিচালনা করতে গিয়ে আমাদের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, ভূমির দাম বৃদ্ধি, কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের ভ্যাট আদায়ে কার্যক্রম সহজ করা, এলসিএল পণ্য রাখতে শেড বাড়ানো হলে ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি রপ্তানি আয় আরো বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, বর্তমানে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রপ্তানির হার আগের তুলনায় বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই চট্টগ্রাম থেকে পোশাকই বেশি রপ্তানি হয়। তাছাড়া শাক-সবজি, ওষুধ, বাই সাইকেল, প্লাস্টিক সামগ্রী, চামড়াজাত পণ্য, জুতা, সিরামিক পণ্য, রাবার ও ফার্নিচার জাতীয় পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মোট রপ্তানির ৯৪ ভাগ আয় আসে এই আটটি পণ্য থেকে।তাদের তথ্যমতে, গত মাসে উল্লেখযোগ্য আট পণ্যের মধ্যে নীট পোশাক থেকে ২৭ হাজার ৩৬৭ কোটি ২০ লাখ টাকা, ওভেন পোশাক থেকে ২০ হাজার ২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা, হোম টেক্সটাইল থেকে ১ হাজার ৪৭০ কোটি, চামড়া-চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা থেকে ১ হাজার ৪৬১ কোটি, হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ থেকে ৭৩০ কোটি, কৃষিজাত পণ্য থেকে ১ হাজার ৭৩৮ কোটি, কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য থেকে ১ হাজার ৬৬ কোটি, প্রকৌশল দ্রব্যাদি থেকে ৫৯৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা রপ্তানি আয় হয়েছে। তাছাড়া এই আট পণ্য বাদে ফার্মসিউটিক্যালস থেকে ৩০২ কোটি টাকা, প্লাস্টিক ও মেলামাইন পণ্য থেকে ১৬৮ কোটি, বাই সাইকেল থেকে ২০১ কোটি টাকা আয় হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরেও বিশ্বজুড়ে ব্যাপক চাহিদা ছিল এই আট পণ্যের।

ওই বছরের আগস্ট মাসে নীট পোশাক থেকে ২৬ হাজার ১৫৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ওভেন পোশাক থেকে ২১ হাজার ৮২৩ কোটি, হোম টেক্সটাইল থেকে ১ হাজার ৪১১ কোটি ২০ লাখ, চামড়া-চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা থেকে ১ হাজার ২৯৩ কোটি, হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ ৬২১ কোটি ৬০ লাখ, কৃষিজাত পণ্য থেকে ১ হাজার ৪৯৫ কোটি, কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য থেকে ১ হাজার ৬৩৮ কোটি ও প্রকৌশল দ্রব্য রপ্তানি করে ৬৮০ কোটি টাকা আয় হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর নীট পোশাক, হোম টেক্সটাইল, শাক-সবজি, টেরি টাওয়েলস, ক্যামিকেল পণ্য, ওষুধ, বাই সাইকেল, কপার ওয়্যার, প্লাস্টিক সামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জুতা, সিরামিক পণ্য, রাবার, কাঁচা পাট, ফার্নিচার জাতীয় পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। পাশাপাশি গত বছরের তুলনায় চা, গুঁড়া মশলা, শুকনো খাবার, তামাক, ইলেকট্রিক জাতীয় পণ্যের রপ্তানি কমেছে। তবে মোট রপ্তানির প্রায় ৪৭ ভাগেরও বেশি আয় আসছে নীট পোশাক থেকে। ৩৪ ভাগ আয় আসে ওভেন পোশাক থেকে।

দেশভিত্তিক রপ্তানির প্রথম তালিকায় আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও রপ্তানি তালিকাতে থাকা অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে পর্যায়ক্রমে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, কানাডা, বেলজিয়াম, নেদাল্যান্ডস, জাপান, চীন, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, রাশিয়া, পোল্যান্ডের অবস্থান।

যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ওভেন পোশাক, জার্মানিতে বাই সাইকেল, হোম টেক্সটাইল, ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়। এদিকে প্রতিবেশি দেশ ভারতে পাট ও পাটজাত পণ্য, নীটওয়্যার ও প্লাস্টিক পণ্য, যুক্তরাজ্যে ওভেন পোশাক, নীটওয়্যার জাতীয় পণ্য, ফ্রান্সে ফুটওয়্যার, হোম টেক্সটাইল পণ্য, স্পেনে পাদুকা, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ইতালিতে নীটওয়্যার, হোম টেক্সটাইল পণ্য, কানাডায় সবচেয়ে বেশি নীটওয়্যার ও ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়ে থাকে। তাছাড়া নেদারল্যান্ডসে ক্রাস্টেসিয়ানস, নীটওয়্যার, ওভেন পোশাক, জাপানে পাদুকা, চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, বর্তমানে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রপ্তানির হার আগের তুলনায় বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই চট্টগ্রাম থেকে পোশাকই বেশি রপ্তানি হয়। তাছাড়া শাক-সবজি, ওষুধ, বাই সাইকেল, প্লাস্টিক সামগ্রী, চামড়াজাত পণ্য, জুতা, সিরামিক পণ্য, রাবার ও ফার্নিচার জাতীয় পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব হবে।