নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে আগামী ৩১ জানুয়ারি। এদিন মেট্রোরেলের ফিজিবিলিটি শেষে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে চট্টগ্রামে বৈঠক করবেন বলেও জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সেতুমন্ত্রী একথা জানান।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বন্দরনগরীতে মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ প্রায় শেষ। ঢাকায় মেট্রোরেল কতটুকু আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে সেটা আপনারা দেখেছেন। চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল হচ্ছে, ফিজিবিলিটি টেস্ট প্রায় শেষ।
আগামী ৩১ জানুয়ারী আমি আসব, মেট্রোরেলের ফিজিবিলিটি শেষে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব সেদিন। এখানকার নেতারা থাকবেন, সরকারের তথ্যমন্ত্রীও থাকবেন।’ গত ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেকে) সভায় ঢাকার পর চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল নির্মাণের নির্দেশ দেন। পরে চায়না রেলওয়ে কন্সট্রাকশন কোম্পানি (সিআরসিসি)-১৯ ও ডব্লিউআইইটিসি জেভি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে।চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এরিয়ার জন্য ট্রান্সপোর্ট মাস্টার প্ল্যানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ‘ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান অ্যান্ড প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর আরবান মেট্রোরেল ট্রানজিট কন্সট্রাকশন অব চিটাগাং মেট্রোপলিটন’ এরিয়া শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেকে)।
এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা থেকে ৫৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যানজট হ্রাস ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য পরিবেশবান্ধব মেট্রোসিস্টেম চালু করা হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ডিটিসিএ, সিডিএ, সিসিসি ও সিএএ’র প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৪০ লাখ মানুষ বসবাস করে। শিল্প কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান প্রসারের মাধ্যমে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দ্রুত নগরায়ন ঘটেছে। ফলে চট্টগ্রামে মহনগরীর পরিবহন ব্যবস্থার উপরে চাপ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্রাফিক জ্যাম, দূর্ঘটনা, বায়ুদূষণ ইত্যাদি সমস্যা বেড়ে চলছে।
চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম বন্দর বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামের ট্রাফিক ও পরিবহনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন কৌশল একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এমআরটি লাইন স্থাপনের জন্য একটি প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর যানজট পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সংস্থা নানা পদক্ষেপ নিলেও সমন্বিত পরিকল্পনা না থাকায় বিচ্ছিন্নভাবে নেওয়া প্রকল্প জনদুর্ভোগে লাঘবে ফলপ্রসূ হয়নি।
এজন্য চট্টগ্রাম মহানগরী ও পাশ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে একটি পরিবহন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। মেট্রোরেলের জন্য প্রাক-সম্ভব্যতা সমীক্ষা পরিচালনায় এই কারিগরি সহায়তা (টিএপিপি) প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।প্রকল্পটি একনেকে পাস হওয়ার পর গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি চসিকের অস্থায়ী কার্যালয় নগরীর টাইগারপাস ভবনে বৈঠকে বসেন চসিক মেয়র রেজাউল ও দক্ষিণ কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত লি জেং কিউনের।
ওই সময়ে জানানো হয়, ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান কোইকা। এতে কোরিয়া সরকারের অনুদান থাকছে ৫১ কোটি টাকা আর ২৬ কোটি টাকা দিবে বাংলাদেশ সরকার।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কোইকা’র সহযোগিতায় চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্পে নগরীর উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে মতবিনিময় ও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। এই সমীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন হতে প্রায় ১৮ মাস সময় প্রয়োজন হবে।