চট্টগ্রাম চেম্বার জ্বালানী খাতে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের থাই বিনিয়োগ চায়

অর্থনীতি ডেস্ক :

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সমুদ্র পথে থাইল্যান্ডের সরাসরি জাহাজ যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়। তাই থাই কতৃর্পক্ষের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অপেক্ষায় রয়েছি আমরা । এছাড়া ব্যাংককে সরাসরি বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালুর প্রত্যাশা করেছেন চট্টগ্রাম চেম্বার । একই সাথে জ্বালানী খাতে প্রস্তাবিত ২৫০ মিলিয়ন ডলারের থাই বিনিয়োগ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি মাহবুবুল আলম।

বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মিসেস মাকাওয়াদী সুমিতমোর ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র পরিচালকমন্ডলীর সাথে মতবিনিময় সভায় এই প্রত্যাশা করেন তিনি।

এ সময় চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও থাই অনারারী কনসাল আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, চেম্বার পরিচালকবৃন্দ অঞ্জন শেখর দাশ, ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন ও সাজির আহমেদ এবং বাংলাদেশ সেন্টার অব এক্সিলেন্স (বিসিই) এর প্রধান নির্বাহী ওয়াসফি তামিম বক্তব্য রাখেন।দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সুসস্পর্ক ও সহযোগিতার ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ মূল লক্ষ্য উল্লেখ করে থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মাকাওয়াদী সুমিতমোর বলেন, বাংলাদেশে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে তাই অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে বাণিজ্য বৃদ্ধি সম্ভব হবে। থাই সরকারের প্রস্তাবিত এফটিএ বাস্তবায়নে চিটাগাং চেম্বারের সহযোগিতা কামনা করছি । সমুদ্র পথে সরাসরি জাহাজ যোগাযোগ স্থাপনে চট্টগ্রাম বন্দর কতৃর্পক্ষের সাথে থাই কতৃর্পক্ষের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অপেক্ষায় রয়েছি। চুক্তিটি সম্পাদন হলে দু’দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে ।চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০১৮ সালে অনেক ভালো অবস্থানে থাকলেও পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের কারণে তা হ্রাস পায়। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ হতে ৭৪.৮ মিলিয়ন ডলার রপ্তানির বিপরীতে ৯৭৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়। তিনি এ বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে সে দেশে বিভিন্ন প্রদর্শনী, ট্রেড শো ইত্যাদি আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশি পণ্যের পরিচিতি বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে র‌্যানং বন্দরের সরাসরি সমুদ্র পথে জাহাজ চলাচল শুরুর মাধ্যমে আমদানি—রপ্তানি বাণিজ্যে সময় ৩—৪ দিনে এবং পরিবহন ব্যয় অর্ধেকে নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া থাইল্যান্ডের মৎস্য খাতে ৫০ হাজার বাংলাদেশি জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া পুণরায় চালু করা, সে দেশের শ্রম বাজারের উপযোগী দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রত্যাশা করেন।চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন,-দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চিটাগাং চেম্বার, ব্যাংকক চেম্বার বা থাই বিজনেস কাউন্সিলের সাথে সহযোগিতা সম্প্রসারণ করতে পারে। তিনি থাইল্যান্ডে বাংলাদেশি পণ্যের প্রদর্শনী আয়োজন ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে পারমানেন্ট এক্সিবিশন হলে থাই রপ্তানি পণ্য প্রদর্শনের অনুরোধ জানান এবং বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বৃদ্ধিতে থাইল্যান্ডের পণ্য মান সম্পর্কে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের উপর গুরুত্বারোপ করেন। বাণিজ্য বৃদ্ধিতে এফটিএ’র পরিবর্তে পিটিএ’র মাধ্যমে বা ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দেন সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর।থাই অনারারী কনসাল আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন,-র‌্যানং বন্দরে পণ্য পরিবহন সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে থাই সরকার রেলপথ ও সড়ক পথ উন্নয়ন করছে। তিনি কক্সবাজারের সাথে থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের বিমান যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে পর্যটন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করেন। এছাড়া যৌথ উদ্যোগে শিল্প স্থাপনে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদেরকে থাই ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের পরামর্শ প্রদান করেন।চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশ থেকে প্রচুর সংখ্যক দর্শনার্থী চিকিৎসা ও হলিডে উদযাপনে থাইল্যান্ড ভ্রমণ করে থাকেন। বাংলাদেশে উৎপাদিত অনেক মাছ যা এদেশে খাদ্য হিসেবে অপ্রচলিত হলেও থাইল্যান্ডে প্রচলিত। তিনি এক্ষেত্রে সামুদ্রিক অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে থাই সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।চেম্বার পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন বলেন-দু’দেশের মধ্য অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। পর্যটন খাতে হসপিটালিটি ইন্ডাষ্ট্রিতে থাইল্যান্ডকে মডেল হিসেবে অনুসরণ করা এবং থাইল্যান্ড থেকে ইকুইপমেন্ট ও মেশিনারীজ আমদানির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। চেম্বার পরিচালক সাজির আহমেদ থাইল্যান্ডে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি উন্নত স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করে উল্লেখ করে বলেন, এ খাতে একযোগে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। তিনি বাংলাদেশে একটি অটোমোবাইল কারখানা স্থাপনে রাষ্ট্রদূতের উদ্যোগ কামনা করেন। মতবিনিময়ের পূর্বে রাষ্ট্রদূত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের পারমানেন্ট এক্সিবিশন হল পরিদর্শন করেন।মত বিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে চেম্বার পরিচালকবৃন্দ এ. কে. এম. আক্তার হোসেন, মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), মো. ওমর ফারুক, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, শাহজাদা মো. ফৌজুল আলেফ খান, মো. ইফতেখার ফয়সাল, এস. এম. তাহসিন জোনায়েদ, মোহাম্মদ আদনানুল ইসলাম, তানভীর মোস্তফা চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিরুল আলম (ফাহিম), দূতাবাসের মিনিস্টার কাউন্সেলর পানম থংপ্রায়ুন (Mr. Panom Thongprayoon), মিনিস্টার কাউন্সেলর (কমার্শিয়াল) খেমাথেট আর্চাওয়াথামরং (Mr. Khemathat Archawathamrong), কাউন্সেলর ডুয়ানসিব পাদ্মসুন্দারা কূলেন (Mrs. Duansib Padmasundara Cullen), সেকেন্ড সেক্রেটারী কুসুমা সারীবুনিয়ারিত (Ms. Kusuma Sareebunyarit), থার্ড সেক্রেটারী বুদসারা সাদাএনগ্রিত(Ms. Budsara Sadaengrit), রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত সচিব ওয়ারাসান বিনতে ইসরাইল (Ms. Warasan Binte Israil), প্রশাসনিক কর্মকর্তা সানভিরাজ হাসান নিলয় (Mr. Sunviraz Hassan Niloy) ও চেম্বার সেক্রেটারী ইনচার্জ প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারুকসহ সচিবালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।