নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত ১৪ই সেপ্টেম্বর অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল ৭ দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ১৪ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন দুই রিটকারী আইনজীবী জারিন রহমান ও রাশিদা চৌধুরী নীলু।
আদেশে বলা হয়, ৯২টি প্রতিষ্ঠান ব্যতিত অননুমোদিত ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন সব নিউজ পোর্টাল বন্ধ করতে হবে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
এদিকে, রবিবার (১০ অক্টোবর) অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধের নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন জমা দিয়েছে বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক)।
বনেকের পক্ষে এই আপিল আবেদন করেন সংগঠনটির সাংগাঠনিক সম্পাদক সোহেল রেজা ও সাধারণ সদস্য কাজি শরিফুল ইসলাম শাকিল। আপিল আবেদনে হাইকোর্টের রায়কে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক অনিবন্ধিত ও চলমান নিবন্ধন প্রকিয়ায় যেসকল অনলাইন রয়েছে সেগুলোকে নিবন্ধনের সুযোগ প্রদানের কথা উল্লেখ করা হয়। বনেকের এই আপিল আবেদন করা দুই সদস্যের পক্ষে উচ্চ আদালতে ফাইল জমা দিয়েছেন ব্যারিষ্টার এইচ এম সানজিদ সিদ্দিক।
তিনি আপিল আবেদনের ফাইল জমার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।এবিষয় কথা হয় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, দেশে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের।
অনলাইন ভিত্তিক নিউজ পোর্টালগুলোর অন্যতম আয়ের উৎস হচ্ছে ফেসবুক ও গুগুল বিজ্ঞাপন, যা রেমিট্যান্স হিসেবে বাংলাদেশে আসে। প্রতিমাসে ফেসবুক ও গুগুল বিজ্ঞাপন থেকে আনুমানিক প্রায় ১০ লাখ মার্কিন ডলার আয় করে এসব নিউজ পোর্টাল। যা দেশে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীতে যখন দেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত বন্ধ ছিল এবং প্রবাসীরা কর্মহীন হয়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছিলনা তখনও রেমিট্যান্স আয় অব্যাহত রাখে এসব অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
দেশের বিরুদ্ধে যেসব নিউজ পোর্টাল বিভিন্ন প্রপগান্ডা ছড়ানো সহ মিথ্যা, অসত্য, গুজব, বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করছে এবং যেসব নিউজ পোর্টালের নিজস্ব কোন অস্থিত্ব নাই। অথ্যাৎ জনবল নেই, অফিস নেই সেসব ভুঁইফোর অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হোক বলেও জানান তিনি।
আপিল আবেদনের বিষয় কথা হয় সংগঠনটির সভাপতি খায়রুল আলম রফিকের সাথে। তিনি বলেন, তথ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে জানিয়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টালের রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। অনিবন্ধিত অনেকগুলো নিউজপোর্টাল ৩ ধাপে যাচাই বাছাই শেষ হয়েছে। যেগুলোতে ইতিমধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং বিনিয়োগও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধন একটি চলমান প্রক্রিয়া সে ক্ষেত্রে যেগুলো যাচাই বাছাই হয়েছে সেগুলো যাতে বন্ধ না হয় এবং দ্রুত নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া নতুন করে যাতে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা যায় সেই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য আমাদের এই আপিল আবেদন।
বনেকের পক্ষে আপিল আবেদনকারীদের মধ্যে কাজী শরিফুল ইসলাম শাকিল। তিনি জানান, অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দিলে বেকার হবে অসংখ্য তরুণ উদ্যোক্তা, জীবনযাত্রার উপর প্রভাব পড়বে ও তাদের উপর নির্ভরশীল পরিবারের লোকজন এবং এর সাথে জড়িত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ক্ষতিগ্রস্থ রেমিট্যান্স খাত।
তাই অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল একেবারে বন্ধ না করে দিয়ে একটি নীতিমালার মাধ্যমে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল পরিচালনার সুযোগ দিলে বেকারত্ব দূর, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধি তথা দেশের অর্থনিতিতে সহায়ক ভুমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতেও বলে উচ্চ আদালত। বাংলাদেশে গণমাধ্যম চালু করতে হলে সরকারের পূর্বানুমতি নিতে হলেও অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি উপেক্ষিত হয়ে আসছিল।
ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের পর ২০০৯ সাল থেকে এই ধরনের নিউজপোর্টাল চালু হতে থাকে। শত শত নিউজপোর্টাল চালু হওয়ার পর বিষয়টি গণমাধ্যম খাতে বিশৃঙ্খলাও তৈরি করে। কারণ, বহু পোর্টাল সাংবাদিকতার নীতিমালায় গুরুত্ব না দিয়ে যা ইচ্ছা তাই প্রচার করেছে এবং নানা সময় বিশৃঙ্খলারও কারণ হয়েছে সেগুলো।
নানা অভিযোগে বিটিআরসি এর আগেও নানা সময় এক শরও বেশি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করেছে। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ২০১৯ সালে ১০টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১৮ সালে বন্ধ করে দেয়া হয় ৫৮টি। পরে এগুলোর বেশ কিছু আবার চালু করা হয়। এরও আগে ২০১৬ সালের আগস্টে একসঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হয় ৩৫টি পোর্টাল।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষে অনলাইনভিত্তিক নিউজপোর্টালগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৫ সাল থেকে অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে নীতিমালার আওতায় আনার উদ্যোগ শুরু করে। আর নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয় বর্তমান সরকারের আমলে। নিবন্ধনের জন্য ছয় হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। আবেদনের বাইরেও রয়েছে বহু পোর্টাল।