পরীর পাহাড়ে সৃষ্ট ঝুঁকি ও সম্ভাব্য যে কোন বিপর্যয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধকল্পে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ৫টি বহুতল ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনাসহ সকল অবৈধ স্থাপনা অপসারণ এবং এখানে যাতে আর কোন নতুন স্থাপনা নির্মিত না হয় সে বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে জরুরীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সচিব, আইন ও বিচার বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
গত ১৮ জুলাই ২০২২ তারিখে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে উপসচিব সাইফুল ইসলাম ভূইয়া স্বাক্ষরিত চিঠি সচিব, আইন ও বিচার বিভাগকে প্রদানপূর্বক উল্লিখিত অনুশাসন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক বাস্তবায়ন অগ্রগতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করার জন্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ ৭১টি আদালতের অবস্থান চট্টগ্রাম জেলা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পরীর পাহাড় নামক ১ নং খাস খতিয়ানভূক্ত ১১.৭২ একর পাহাড় / টিলা শ্রেণির জমির উপর । বর্তমানে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়টি অবস্থিত অপূর্ব নান্দনিকতায় কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং এর আদলে ১৮৯২-৯৪ সালে নির্মিত একটি দ্বিতল ভবনে । এছাড়াও, এখানে বিচার বিভাগের ৭১টি আদালত অবস্থি সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত ৩টি বহুতল ভবনে। তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের সময়ে ১৯৭৭ সালে মাত্র ০.১২৯০ একর তথা ১২.৯০ শতক জমি লীজ নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি দেশের সংশ্লিষ্ট সকল প্রকার আইন-কানুন ও বিধি বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তদস্থলে ১.৭৯ একর সরকারী খাস জমি জবর দখল করে গত ২০ বছরে একের পর এক গড়ে তুলেছে সর্বোচ্চ ১১/১২ তলা বিশিষ্ট ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ বহুতল ভবন । এ সকল ভবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছোট বড় দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা । বর্তমানে পরীর পাহাড়টিতে অপরিকল্পিতভাবে মাত্রাতিরিক্ত অবৈধ স্থাপনার কারণে পাহাড় ধ্বস, ভুমিধ্বস, অগ্নিঝুঁকি, নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ মারাত্নক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে । এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০২১ সালের আগষ্ট মাসের দ্বিতীয় পক্ষের পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের আলোকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরীর পাহাড়ে আইনজীবীদের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসহ সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং পরীর পাহাড়ে যাতে আর কোন স্থাপনা নির্মিত না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণার্থে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা প্রদান করেন।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ নির্দেশনা অদ্যাবধি বাস্তবায়িত হয়নি। উপরন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তন করে সম্পূর্ণ অনুমোদনবিহীন একটি বহুতল ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং জেলা প্রশাসনের আপত্তি ও বাধাকে উপেক্ষা করে বেলে মাটির এ পরীর পাহাড়ে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির এ সকল পরিবেশ বিধ্বংসী, অননুমোদিত, অনৈতিক, অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে মধ্য জুনের প্রবল বর্ষণে পরীর পাহাড়ের ২/৩টি স্থানে পাহাড় ধ্বস দেখা দিয়েছে । ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলীগণ পাহাড় ধ্বসের স্থান পরিদর্শন করে অনতিবিলম্বে এখানে মজবুত রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ এবং এ পাহাড়ের মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ স্থাপনাসমূহ অপসারণের জন্য পুনরায় তাগিদ দেন ।
ইতিপূর্বেও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং পরিবেশ অধিদপ্তর আইনজীবী সমিতির এ সকল ভবনসমূহকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তাদের রিপোর্টে মতামত দেন । পরীর পাহাড়ের এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা এখানে অবস্থিত অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যেমন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, বিচার বিভাগের ৩টি ভবন, পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ ব্যাংক, জেলা ও সাব রেজিস্টার অফিস, সিডিএ ভবন, নিউ মার্কেট ও জহুর হকার মার্কেট এর উপর মারাত্নক ধ্বস ও জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে ।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবন ও এর আশপাশের অবৈধ স্থাপনাসমূহের কারণে এ পাহাড়ে উঠানামার একমুখী রাস্তাটি অতি সংকুচিত হয়ে পড়েছে । কোন ভারী যানবাহন এমনকি ফায়ার সার্ভিসের কোন মাঝারি আকৃতির গাড়ী এ রাস্তায় প্রবেশ করতে পারেনা। ফলে এখানে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা দুর্ঘটনা ঘটলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে এবং কোন উদ্ধারকারী যানবাহন বা সরঞ্জাম এখানে পৌছাতে পারবেনা।
এর আগেও ২৫ টি সরকারী দপ্তর থেকে পরীর পাহাড় থেকে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা উচ্ছেদে বিভিন্ন নির্দেশনা জারী করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি