আবহাওয়া পূর্বাভাস :
বঙ্গোপসাগর ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ যেকোনো সময় গতি পরিবর্তন করে করে বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম।
সোমবার (৯ মে) সকালে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ আজ গতিপথ পরিবর্তন নাও করতে পারে।
আন্দামান সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ এখন বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। অন্যদিকে ভারত মহাসাগরে আরও একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটিও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর। আর নতুন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ‘অশনি’র গতিও নিতে পারে ভয়ঙ্কর রূপ।
জানা যায়, নিরক্ষরেখার উত্তরে ঘূর্ণিঝড় অশনি। আর নিরক্ষরেখার দক্ষিণে দ্বিতীয়টি এখন নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে, এটি দ্রুত আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে যে গতিপথে আছে তাতে মঙ্গলবার অশনি ভারতের উপকূলের আছড়ে পড়তে পারে। এ কারণে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় দেশের চার সমুদ্র বন্দরে আগের মতো ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নদীবন্দরগুলোতে ১ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করা হয়েছে। তবে যেকোনো সময় গতি পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের উপকূলে আঘাত হানার শঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, টুইন সাইক্লোন বা যমজ ঘূর্ণিঝড় অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে কোনটি বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে বা কোনটির প্রভাব কেমন হবে; সেটাই এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে।ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমগুলো বলছে, যমজ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রবল ঘূর্ণিঝড় অশনির গতি আরও বেশি হবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ সেটি নির্ভর করছে অন্য নিম্নচাপটির শক্তিশালী হওয়ার উপর।
আবহাওয়া বিদেরা এ বিষয়ে বলছেন, একদিকে যেমন অশনি জলীয় বাষ্প টানবে আন্দামান সাগর থেকে, অন্যদিকে নতুন নিম্নচাপটি জলীয় বাষ্প টানবে ভারত মহাসাগর থেকে। দুটির মধ্যে বিস্তর টানাটানি হবে। ফলে একদিকে যেমন বায়ুপ্রবাহ পাক খাবে ঘড়ির কাঁটার দিকে, তেমনি অন্যদিকে তা ঘুরবে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতেও। যে বেশি বাতাস টানবে তারই শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
এক গবেষণায় আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, যমজ ঘূর্ণিঝড় নতুন কোনও বিষয় নয়। তিন বছর আগেও ২০১৯ সালের ৩ মে যখন বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ফণী সৃষ্টি হয়, একই সময়ে ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় লর্না। তবে লর্না শক্তিশালী না হওয়ার কারণে চরম তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছিল ফণী। ‘ফণী’র তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল‘।
বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা এই বিষয়ে বেশি কিছু জানাতে পারেননি। আবহাওয়া অধিদফতরের উপ-পরিচালক সানাউল হক মন্ডল জানান, আপাতত তারা প্রবল ঘূর্ণিঝড় অশনি পর্যবেক্ষণ করছেন। ভারতে মহাসাগরের নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এবং উপকূলের দিকে এগিয়ে এলে তখন তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন। আর এত দূরের ঝড়ের প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার আশঙ্কাও প্রায় নেই।
কিন্তু চিন্তার বিষয় এটি যে, অশনি’ ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত দিয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ আন্দামান সাগরে ঘূর্ণাবর্তী ধীরে ধীরে ঘণীভূত হচ্ছে। গভীর থেকে গভীরতর নিম্নচাপের চেহারা নিচ্ছে জমজ ঘূর্ণিঝড়। আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প টেনে ফুলেফেঁপে উঠছে সে ঘূর্ণাবর্তী ঘূর্ণিঝড় দুটি। ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেবে আর কিছুদিনের মধ্যেই এমনটাই আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। । একে তো অশনি আরেকজনও ওঁৎ পেতে আছে। আরও এক ঘূর্ণাবর্তী ঘনিয়ে উঠেছে। সেটিও ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিতে চলেছে। একই সঙ্গে যমজ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বাংলাদেশে কতটা পড়বে সে নিয়েই চিন্তায় এখানকার আবহাওয়াবিদেরা।