পেলেকে ছুঁয়েও নেইমার জেতাতে পারেনি ব্রাজিলকে! ট্রাইব্রেকারে ৪-২ বিদায়

স্পোর্টস ডেস্ক:

একটি মাত্র গোল প্রয়োজন ছিল কিংবদন্তি পেলেকে ছুঁয়ে ফেলার। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ১০৫তম মিনিটে অসাধারণ একটি গোল করেই ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলে রেকর্ডে পেলেকে ছুঁয়ে ফেললেন নেইমার।

সাও পাওলোর হাসপাতালের বিছানায় বসে পেলে দেখলেন তার রেকর্ডটিকে ছুতে, নতুন প্রজন্মের আরেক কিংবদন্তি নেইমারকে।ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আজ গুরুত্বপূর্ণ গোলটি করেই ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চে গোলের রেকর্ডে পেলের পাশে বসে গেলেন নেইমার।

অতিরিক্ত সময়ে এসে গোল করে এসে গোল পেলো ব্রাজিল। ম্যাচের ১০৫তম মিনিটে গোল করে ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন নেইমার।

কিন্তু লিড ধরে রাখতে পারলো না ব্রাজিল। ম্যাচের ১১৬তম মিনিটে মিস্লাভ ওরসিকের পাস থেকে বল পেয়ে ব্রুনো পেটকোভিকের দুর্দান্ত এক শট জড়িয়ে যায় ব্রাজিলের জালে।

দ্বিতীয়ার্ধেও কোনো গোল হলো না। প্রথমার্ধের চেয়ে দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিয়ে খেলেছে ব্রাজিল। গোলের অসংখ্য সুযোগ তৈরিও করেছিলো। কিন্তু গোলটিই প্রবেশ করাতে পারেনি ক্রোশেয়ার জালে।ক্রোয়েশিয়ান গোলরক্ষক ডোমিনিট লিভাকোভিক যেন ব্রাজিলিয়ানদের সামনে হিমালয় পাহাড়ের ন্যায় দাঁড়িয়ে গেছেন। ব্রাজিলের অনেকগুলো আক্রমণ ডিফেন্ডারদের ফাঁক গলতে পারলেও গিয়ে থেমে যায় গোলরক্ষকের সামনে।

আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে ম্যাচটা উপভোগ্যই হয়ে উঠেছিল। কিন্তু গোলের খেলা ফুটবলে গোলই যদি না হয়, তাহলে সেখানে আর কোনো আনন্দ কিংবা মজা নেই। ব্রাজিল এবং ক্রোয়েশিয়া প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে দুর্দান্ত প্রথমার্ধ শেষ হলেও কেউ গোল করতে পারেনি। অথচ, দু’দলই গোলের অনেক সুযোগ পেয়েছিলো।প্রথমোর্ধে দুই দলই খেলেছে সমান সমান। বল দখলের লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়া কোনো অংশেই কম ছিল না ব্রাজিলের চেয়ে। বল দখলের লড়াইয়ে দু’দলই ছিল সমান ৫০ ভাগ করে। ব্রাজিল পাস দিয়েছে ২৭৯টি। ক্রোয়েশিয়া দিয়েছে ২৬৭টি। গোলমুখে ব্রাজিল শট নিয়েছে ৫টি। ক্রোয়েশিয়া নিয়েছে ৩টি। ১৩তম মিনিটেই গোলের দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলো ক্রোয়েশিয়া। দুর্দান্ত কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল পেয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। ডান পাশ থেকে জুরানোভিচ বল এগিয়ে দিলে ছোট বক্সের ভেতর দিয়ে বল যাওয়ার সময় তাতে পা লাগানোর চেষ্টা করেন প্যালাসিচ এবং পেরিসিচ। কিন্তু কেউ বলে পা লাগাতে পারেননি। গোলও হয়নি। বেঁচে যায় ব্রাজিল।

২০ মিনিটে বল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন ভিনিসিয়ুস। নেইমারের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান করে বল নিয়ে শট করেন ক্রোয়েশিয়ার জালে। কিন্তু ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে যায়। ফিরতি বলে আবারও নেইমার তিন-চারজনকে কাটিয়ে শট নেন। যদিও ছিল দুর্বল শট। গোলরক্ষকের কাছে বল।২২ মিনিটে ক্যাসেমিরোর দুর্দান্ত শট, কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা। ৩০ মিনিটে ব্রাজিলের বক্সের সামনে থেকে দুর পাল্লার শট নেন জুরানোভিচ। কিন্তু বলটি চলে যায় ব্রাজিলের পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে।

৪০ মিনিটে বক্সের বাম পাশে রিচার্লিসনকে ফাউল করা হলে ফ্রি-কিক দেয়া হয়। কিক নেন নেইমার। অসাধারণ এক কিক নেন নেইমার। কিন্তু বল ধরে ফেলেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক। ৪৭তম মিনিটে ডান পাশ থেকে রাফিনহা ক্রস করেছিলেন। কিন্তু নেইমার এবং ভিনিসিয়ুস জুনিয়র দুর্দান্ত সুযোগ পেয়েও পারেনি বলটি ক্রোয়েশিয়ার জালে জড়াতে। ফিরতি বলে আবারও ভিনিসিয়ুস থেকে নেইমার বল পেয়েছিলেন। কিন্তু রিচার্লিসন অফসাইড হয়ে যান।

৫৫তম মিনিটে বাম পাশে দানিলো বল এগিয়ে দেন নেইমারকে। কয়েকজনকে কাটিয়ে অসাধারণ এক শট নেন তিনি। কিন্তু গোলরক্ষক বলটি ধরে ফেলেন।

৫৬ মিনিটে মিডফিল্ড থেকে ডান পাশে পাস দেন অ্যান্টোনি। বক্সের শেষ প্রান্ত থেকে ক্রস করেন রিচার্লিসন। কিন্তু ডিফেন্ডাররা রক্ষা করায় গোল থেকে বেঁচে যায় ক্রোয়েশিয়া।

৬৬ তম মিনিটে রদ্রিগোর পাস থেকে পাকুয়েতা অসাধারণ এক শট নিয়েছিলেন। কিন্তু গোলরক্ষক অসাধারণ দক্ষতায় বলটি ফিরিয়ে দেন। ফিরতি বলেও গোলের চেষ্টা করেছিলো ব্রাজিল। কিন্তু ডিফেন্সে গিয়ে বল ফিরে আসে।

৭৬তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিলেন নেইমার। কিন্তু গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় এবারও বেঁচে যায় ক্রোয়েশিয়া।

৮০ তম মিনিটে রদ্রিগোর পাস থেকে বল পেয়ে লুকাস পাকুয়েতা বাম পায়ের দারুণ এক কিক নিয়েছিলেন। কিন্তু আবারও গোলরক্ষক বাঁচিয়ে দিলেন ক্রোয়েশিয়াকে।

৮২তম মিনিটে রদ্রিাগোর কাছ থেকে বল পেয়ে রিচার্লিসন হেড করেন। কিন্তু বল চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে।

৮৬তম মিনিটেও দারুণ এক সুযোগ নষ্ট হয় ব্রাজিলের। কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করে ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার।

১০০তম মিনিটে থিয়াগো সিলভার ক্রস থেকে বাইসাইকেল কিক দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন অ্যান্টোনি। কিন্তু শটটাও ঠিক হয়নি। তবুও গোলে বল গিয়েছিলো। কিন্তু গোলরক্ষক লিভাকোভিচের হাতে বল।

১০২ মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলো ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু ব্রোজোভিচের শটটি পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়।১০৫ মিনিটে নেইমারের গোল মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে ওয়ান-টু করে এগিয়ে যান। শেষ টাচটা দেন লুকাস পাকুয়েতা। সর্বশেষ গোলরক্ষ লিভাকোভিককে কাটিয়ে ক্রোয়েশিয়ার জালে বল জড়িয়ে দেন নেইমার।১০৮ মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিলো ক্রোয়েশিয়া। দারুণ একটি আক্রমণ করলেও ফিনিশারের অভাবে গোল হলো না।

কিন্তু ট্রাইবেকারে এসে হেরো গেলো ব্রাজিল। ক্রোয়েশিয়ার জালে দুটি বল প্রবেশ করাতে ব্যর্থ হলো ব্রাজিলিয়ানরা। টানা দুটি ম্যাচ টাইব্রেকারে জিতে সেমিফাইনালে নাম লিখলো ক্রোয়েশিয়া। ব্রাজিলের হয়ে টাইব্রেকারে শট মিস করেন রদ্রিগো এবং মার্কুইনহোস।

আবারও ইউরোপিয়ান দলের সামনে এসে থমকে দাঁড়াতে হলো ব্রাজিলকে। ২০০৬ বিশ্বকাপ থেকে শুরু, এ নিয়ে পঞ্চমবার নকআউটে এসে ইউরোপিয়ান দলের কাছে হারতে হলো লাতিন আমেরিকান পাওয়ার হাউজ ব্রাজিলকে। এর মধ্যে চারবারই কোয়ার্টার ফাইনালে। বিদায় নেইমার, বিদায় নেইমারের ব্রাজিল!