নগর প্রতিবেদক :
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) চকবাজার ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে কারাগারে থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন অস্ত্র মামলার আসামি নুর মোস্তফা টিনু।
গত ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২০ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হারিয়ে মিষ্টিকুমড়া প্রতীকে ৭৮৯ ভোট পেয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন।
শিগগিরই নির্বাচিত প্রার্থীর শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আর এই শপথ অনুষ্ঠানে নির্বাচিত প্রার্থী নুর মোস্তফা টিনু হাজির হতে না পারলে নির্বাচন বাতিল হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কামরুল আলম।
নির্বাচন কর্মকর্তা কামরুল আলম জানান, ‘গেজেট প্রকাশ হওয়ার এক মাসের মধ্যে শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আছে। নির্ধারিত শপথ অনুষ্ঠানে যদি বিজয়ী প্রার্থী উপস্থিত না থাকেন, সে ক্ষেত্রে নির্বাচনটি বাতিল হয়ে যায়। তখন নতুন করে ওই ওয়ার্ডে আবার নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।’
গণমাধ্যমের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শপথ অনুষ্ঠান কবে হবে এটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ঠিক করবে। আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন পরিচালনা করা। নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর গেজেট প্রকাশ করার পরেই আমাদের কাজ শেষ।’
কবে নাগাদ গেজেট প্রকাশ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণত নির্বাচন শেষ হওয়ার ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হয়। আশা করছি, চলতি সপ্তাহে নির্বাচিত প্রার্থীর নাম-ঠিকানা সংবলিত গেজেট প্রকাশিত হবে। এরপর এক মাসের মধ্যে যেকোনও একদিন শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।’
কারাগারে থাকায় শপথ অনুষ্ঠানে তার অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের পর নির্ধারিত শপথ অনুষ্ঠানের দিনে বিজয়ী প্রার্থীকে সশরীরে উপস্থিত থেকে শপথ গ্রহণ করতে হয়। ওই দিন কোনও বিজয়ী প্রার্থী অনুপস্থিত থাকলে সেই নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। ওই ওয়ার্ডে তখন পুনরায় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
তবে শপথ অনুষ্ঠানের আগেই যদি নুর মোস্তফা টিনু জামিন পেয়ে যান, সেই ক্ষেত্রে নির্বাচন বাতিল হওয়ার অনিশ্চয়তা কেটে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব (চলতি দায়িত্ব) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ করার পর আমাদের দায়িত্ব শেষ। শপথ অনুষ্ঠান করে স্থানীয় মন্ত্রণালয়। সে ক্ষেত্রে শপথ অনুষ্ঠানে বিজয়ী প্রার্থী অংশ নিতে না পারলে কী হবে সেটি তাদের ওপর নির্ভর করছে। তবে যতদূর জানি, নিয়ম অনুযায়ী বিজয়ী প্রার্থী শপথ অনুষ্ঠানে অংশ না নিলে ওই ওয়ার্ড শূন্য ঘোষণা করা হয়।’
স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দীপক চক্রবর্তী বলেন, ‘গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে শপথ অনুষ্ঠানের একটি বাধ্যবাধকতা আছে। শপথ অনুষ্ঠানে বিজয়ী প্রার্থীকে সশরীরে অংশ নিতে হবে। এখনও তো সময় আছে, গেজেট প্রকাশ হয়নি। তাই হয়তো ওই প্রার্থী জামিন পেয়েও যেতে পারেন। আবার তিনি শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য প্যারোলে মুক্তির আবেদনও করতে পারেন। শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে না পারলে তখন নিয়ম অনুযায়ী যা করা দরকার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সেই ব্যবস্থা করা হবে।’
উল্লেখ্য, কাউন্সিলর সাইয়্যেদ গোলাম হায়দার মিন্টু মৃত্যু বরণ করায় গত ৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চকবাজার ওয়ার্ডে উপনির্বাচনের আয়োজন করা হয়।
এই উপ নির্বাচনে অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার হওয়া নুর মোস্তফা টিনুসহ ২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে ৭৮৯ ভোট পেয়ে টিনু মিষ্টিকুমড়া প্রতীকে নির্বাচিত হন। টিনুর বিরুদ্ধে চকবাজার এলাকায় সন্ত্রাস, ছিনতাই, চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে চকবাজার ও পাঁচলাইশ থানায় অন্তত চারটি মামলা আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এরমধ্যে অস্ত্রসহ আটকের ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলায় টিনু বর্তমানে চট্টগ্রাম কারাগারে রয়েছেন।
২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর রাতে র্যাব তাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতারের পর চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়। ওই মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে কারাগার থেকে বের হওয়া পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ২০ জুন চট্টগ্রামের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টিনু। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তখন থেকে এখন পর্যন্ত টিনু কারাগারে রয়েছেন।
কারাগারে থেকেই চকবাজার ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে অংশ নেন। এর আগে ২০০৩ সালে একে-৪৭ রাইফেলসহ পুলিশ টিনুকে গ্রেফতার করে। ওই বছরের ২৯ এপ্রিল নগরীর গোলপাহাড় এলাকা থেকে নগর গোয়েন্দা পুলিশ আরও এক সহযোগীসহ তাকে একে-৪৭ রাইফেলসহ আটক করে।