নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির কারণে গত দু’বছর বন্ধ থাকার পর এবার চট্টগ্রামেও বাংলা নববর্ষ বরণে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) কঠোর নিরাপত্তায় সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আখতারের নেতৃত্বে চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। শোভাযাত্রাটি চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ী হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে চারুকলায় গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে “মুছে যাক গ্লানি ঘুছে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা”-এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সকাল ৯টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির একাডেমির পক্ষ থেকে বাদ্যের তালে তালে বাংলা ঐতিহ্যের উপকরণ পালকি, পুতুল, ঘোড়ার গাড়ি, প্ল্যাকার্ড ও অন্যান্য উপকরণ নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি দামপাড়া ঘুরে পূনঃরায় শিল্পকলা একাডেমিতে এসে শেষ হয়।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির জেলা কালচারাল অফিসার মোসলেম উদ্দিন, একাডেমি কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু, সদস্য জেসমিন সুলতানা পারু, সদস্য সাংবাদিক রনজিত কুমার শীলসহ একাডেমির বিভিন্ন বিভাগের প্রশিক্ষক-প্রশিক্ষনার্থীরা মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন। এছাড়া বর্ষবরণ উপলক্ষে সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমির মুক্ত মঞ্চে দলীয় সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। শিল্পীরা ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানে গানে বরণ করে নেন বাংলা নববর্ষকে। নাচে-গানে জমজমাট ছিল পুরো শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গন।
এদিকে নগরের ডিসি হিল ও সিআরবিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হয়েছে। নববর্ষকে বরণ করে নিতে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বর্ষবরণের ১ম অধিবেশনে ‘সংগীত ভবন, জয়ন্তী, ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদ, গুরুকুল সংগীত একাডেমি, সুর-সাধনা সংগীতালয়, গীতধ্বনি, ইমন কল্যাণ সংগীত বিদ্যাপীঠ, সৃজামি সাংস্কৃতিক অংগন, নটরাজ নৃত্যাঙ্গন একাডেমি, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্স, ওডিসি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, গুরুকুল, নৃত্যম একাডেমি, ঘুঙুর নৃত্যকলা কেন্দ্র, সঞ্চারী নৃত্যকলা একাডেমি, নৃত্য নিকেতন, দি স্কুল অব ফোক ডান্স, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, স্বরনন্দন প্রমিত বাংলা চর্চা কেন্দ্র ও বিভাস আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র’ সংগঠনের শিল্পীরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেছে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে ‘রাজেশ্রী, সুন্দরম শিল্পী গোষ্ঠী, উপমা সাংস্কৃতিক অংগন, বংশী শিল্পকলা একাডেমি, ফতেয়াবাদ সংগীত নিকেতন, শহীদ মিলন সংগীত বিদ্যালয়, বাণী মঞ্জুরী ললিতকলা একাডেমি, সপ্তডিঙ্গা শিল্পাঙ্গন। সপ্তসুর বিদ্যানিকেতন, মনোরমা নৃত্যাঙ্গন, অপ্সরী ডান্স একাডেমি, উদিত নৃত্য একাডেমি ও নরেন আবৃত্তি একাডেমি’ সংগঠনের শিল্পীরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন।
অন্যদিকে সিআরবির শিরীষতলায় এসো হে বৈশাখ গানের সুরে শুরু হয় বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। সকাল সাড়ে ৮টায় বেহালার সুরে সুরে শুরু হয় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। এরপর দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেয় সংগীত ভবন, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ, বোধন আবৃত্তি স্কুল, অবকাশ ধারা শিল্পী সংস্থা, সুন্দরম শিল্পীগোষ্ঠী, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, চারুতা নৃত্যকলা একাডেমি, উচ্চারক আবৃত্তি কুঞ্জ, শ্যামা নৃত্যাঙ্গন, নৃত্যনন্দন, চট্টল কুঁড়ি, নির্মাণ আবৃত্তি অঙ্গন, শাশ্বত ললিতকলা একাডেমি, গোধুলী সংগীত একাডেমি, নিক্কন একাডেমি, নৃত্য নিকেতন, সাধনা সঙ্গীত একাডেমি, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, শব্দনোঙর, ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদ, সুর সাধনা সঙ্গীতালয়, স্লোগান সাংস্কৃতিক স্কোয়াড, সপ্তস্বর সঙ্গীত বিদ্যালয়, সৃজামি’।
এবার চট্টগ্রামের পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান দুপুর ২টার মধ্যে শেষ করা হয়। বর্ষবরণের জন্য সকাল থেকে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ভিড় করেন।অনুষ্ঠানে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল।