নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাসের পাহাড় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার জন্য বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি শেখ মুজিব রোডে শেষ করার দাবি তুলেছে চট্টগ্রাম ঐতিহ্য রক্ষা পরিষদ।
রোববার (২২ আগস্ট) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের নেতারা আরও একটি বিকল্প হিসেবে টাইগারপাস-দেওয়ানহাট পুরোনো সড়কের ওপর এবং বিদ্যমান ওভারপাস ভেঙে দুটি ওভারপাস নির্মাণের প্রস্তাবও দিয়েছেন। নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা সংশোধন করে টাইগারপাসকে প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানান তারা।
সংগঠনের কো-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, প্রকল্প সংশোধন করা হলে টাইগারপাস রক্ষার পাশাপাশি এক হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
তিনি বলেন, দেওয়ানহাট মোড় থেকে নৌবাহিনী সিনেমা হলের পাশ দিয়ে একটি পুরোনো সড়ক আছে, যেটি দেওয়ানহাট ব্রিজ হওয়ার পর বন্ধ রাখা হয়েছে। সেটি আবার চালু করে সেখানে রেললাইনের ওপর ওভারপাস তৈরি করলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নেমে যানবাহন এই ওভারপাস হয়ে টাইগারপাস অতিক্রম করবে। রেলওয়ে ব্রিজটির যেহেতু মেয়াদ শেষ, সেটি ভেঙে সেখানেও নতুন করে আরেকটি ওভারপাস তৈরি করা হলে সেটি দিয়ে আগ্রাবাদমুখী যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টাইগারপাসে আনতে হলে ধনিয়ালাপাড়া থেকে মনসুরাবাদের দিকে যে ফ্লাইওভারটি গেছে তার ওপর দিয়ে আনতে হবে। এজন্য ৮০ ফুট উচ্চতায় এটি নির্মাণ করতে হবে। বন্দর থেকে পণ্যবাহী যানবাহন এত উঁচুতে উঠতে গিয়ে প্রতিনিয়িত দুর্ঘটনার শিকার হবে বলে আমাদের আশঙ্কা। সুতরাং ভারী যানবাহনই যদি চলতে না পারে, তাহলে ৮০ ফুট উঁচুতে এক্সপ্রেসওয়ে বানিয়ে লাভ কী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম ঐতিহ্য রক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব সাংবাদিক জসীম চৌধুরী সবুজ, কো-চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান।এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সমন্বয়কারী এইচ এম মুজিবুল হক শুক্কুর, যুগ্ম সদস্য সচিব স্থপতি আশরাফুল ইসলাম শোভন, সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, অধ্যাপক মুহম্মদ আমির উদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ নজরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, সাংবাদিক আবসার মাহফুজ, এ কে জাহেদ চৌধুরী ও হাসান মারুফ রুমী।
চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে সিডিএ। তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে পাস হয়। এক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এই সময়ে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫০ ভাগ।
চট্টগ্রাম শহরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকার চট্টগ্রামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। চট্টগ্রামের উন্নয়নে এটি একটি মাইলফলক হিসেবে সংযোজিত হবে। তবে পরিবেশ-প্রকৃতি এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষার একান্ত তাগিদ থেকে আমাদের দাবি, টাইগারপাসের অপরূপ নান্দনিক সৌন্দর্য যেন ইট-পাথরের জঞ্জালে ঢেকে না যায়।