নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাধারণ সভায় নাগরিকদের দুভোর্গ ও আসন্ন বর্ষায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ক্ষোভ জানিয়েছেন।
বুধবার (২৪মে) নির্বাচিত ৬ষ্ঠ পরিষদের ২৮তম সভায় নগরের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হলেও আলোচনার কেন্দ্রে ছিল খাবার পানির সংকট আর বৃষ্টির পানিতে জলজটের শঙ্কা।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) আর ওয়াসার সমন্বয়হীন কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ বলে মন্তব্য করে কাউন্সিলররা জানান, সরকারি সংস্থাগুলোর কাজে সমন্বয় না থাকলে জাতীয় নির্বাচনে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
জবাবে সিডিএ, ওয়াসাসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের গৃহিত উদ্যোগ ও পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
মেয়র এই সংকট সমাধানে সিডিএর প্রতিনিধি নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিব হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে সিডিএর প্রকল্পে সেনাবাহিনী কাজ করলেও প্রকল্পটির তত্ত্বাবধান করার দায়িত্ব সিডিএ’র। বারবার বলার পরও এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন খালে জমা মাটি উত্তোলন না করায় এবার বর্ষায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার হুমকি রয়েছে। জনঅসন্তোষের কথা মাথায় রেখে সিডিএ’র তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
এছাড়া ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে স্লুইচগেট সংস্কার না করায় বন্যায় শহরে সমুদ্রের পানি ঢোকার ঝুঁকি আছে। এ বিষয়ে তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে হবে।
ওয়াসার প্রতিনিধি মো. নুরুল আমিনের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে চট্টগ্রাম ওয়াসার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ওয়াসা নতুন তৈরি করা রাস্তা কেটে জনভোগান্তি তৈরি করছে, নষ্ট করছে সরকারের বাজেট আর সৃষ্টি করছে জনঅসন্তোষ।
কোরবানির ঈদের আগেই হাটহাজারী সড়কে ওয়াসার রাস্তা খোড়াখোড়ি বন্ধ করতে করতে হবে। এই পথটি দিয়ে একদিকে কোরবানির পশু বিবিরহাট বাজারসহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছায়। যার কারণে এই পথ দিয়ে কোরবানির বর্জ্য শহর থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। এছাড়া আতুরারডিপোর কারখানাগুলোতে এপথ দিয়ে চামড়া পরিবহন করতে না পারলে আর্থিক ক্ষতি ও শহরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।
সভায় একাধিক কাউন্সিলর আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মেয়র রেজাউল করিমকে আহ্বান জানান।
জবাবে চসিক মেয়র বলেন, একটি অনাকাঙিক্ষত ঘটনাকে কেন্দ্র করে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালক চসিকে আসছেন না। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে প্রকল্প পরিচালক না থাকায় এই বিশাল প্রকল্পের বিল প্রদান, কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে। এই প্রকল্পের এখনো মাত্র পাঁচশ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। অথচ এতদিনে এটি এক হাজার কোটি টাকা ছাড়ানোর কথা ছিল। আমি আজকেই মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিব।
যানজট কমাতে অযান্ত্রিক যানবাহন নিয়ন্ত্রণে গৃহিত পদক্ষেপ সম্পর্কে মেয়র রেজাউল বলেন, আমরা ৭০ হাজার অযান্ত্রিক যানবাহন তথা রিকশা, ভ্যান ইত্যাদিকে কিউআর কোড সম্বলিত ডিজিটাল লাইসেন্স প্লেট প্রদান করছি। এই লাইসেন্স প্লেট ছাড়া কেউ ইচ্ছামতো রিকশা-ভ্যান তৈরি করে পথে নামলে পুলিশ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।কোরবানির ঈদে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আরো গতিশীল করতে চসিকে ১০০ টি ভ্যানগাড়ি যুক্ত হচ্ছে বলে জানান মেয়র।
চসিকের কার্যক্রমে গতি আনতে যে কোন ফাইল গ্রহণ করার পাঁচ কর্মদিবসের বিষয়ে বিভাগীয় প্রধানদের নির্দেশনা দেন মেয়র। মেয়র বিদ্যুৎ বিভাগকে দুই কর্মদিবসের মধ্যে শহরের আলোকায়ন পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে বর্ষাকালে উন্নয়ন কাজ চলমান রাখার জন্য স্টোর নির্মাণ করে প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুদের নির্দেশ দেন মেয়র ।
সভায় গত সাধারণ সভার কার্যবিবরণী, দরপত্র কমিটির কার্যবিবরণী এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী অনুমোদিত হয়।
স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতিগণ তাদের নিজ নিজ স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী পেশ করেন।
সভায় প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব খালেদ মাহমুদসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধান এবং নগরের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।