পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর সহ ৭জনের বিরুদ্ধে পরিবেশের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানার বেলতলী ঘোনা এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের নামে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এমন অভিযোগ এনে মামলায় গেল এবার পরিবেশ অধিদপ্তর।

গত চারদিন আগে পাহাড় কাটার সময় ওই পাহাড় ধসে এক ব্যক্তি বা শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অননুমোদিতভাবে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) দুই প্রকৌশলী ও ৯ নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়।

মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাতে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ বাদী হয়ে আকবরশাহ থানায় এ মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন—চসিকের রাস্তা নির্মাণের উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়ব, একই প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন, চসিকের সিনিয়র সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) ওয়ালী আহমেদ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এবি-হক ব্রাদার্সের ওমর ফারুক ও মোসাঃ তাকিয়া বেগম, কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম এবং তার সহযোগী মোহাম্মদ ইসমাইল।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রকল্পের মাধ্যমে এবি হক ব্রাদার্সকে রাস্তা নির্মাণের অনুমতি দেয় এবং এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

এজাহার বলা হয়েছে,

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর রাস্তা নির্মাণ করার উদ্দেশ্যে আনুমানিক ১৩ হাজার ৩০০ ঘনফুট পাহাড় কাটার দায়ে চসিক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে শুনানির নোটিশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে পাহাড় কাটা বন্ধ করার জন্য অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড লিখিত অভিযোগ দিলে আবারও শুনানিতে হাজির থাকার নোটিশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।

ওইসময় কাউন্সিলর জসিম শুনানিতে উপস্থিত থাকলেও চসিকের প্রকল্প পরিচালক এবং সিডিএর কোনো কর্মকর্তাই শুনানিতে আসেননি। একই পাহাড় কাটার অভিযোগে এর আগেও একজনকে গ্রেপ্তার করে প্রশাসন।

অন্যদিকে, সিটি কর্পোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে রাস্তা নির্মাণের কথা বলে স্থানীয় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের নির্দেশে মোহাম্মদ ইসমাইল নামের এক সহযোগীসহ কয়েকজন মিলে পাহাড় কাটছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এদিকে, পাহাড়় ধসের সেই ঘটনার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরকেও মামলার অন্তর্ভূক্ত করা হবে বলে জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক সিভয়েসকে বলেন, ‘ওই এলাকায় প্রকল্প পরিচালনাকালে কোন টিলা বা পাহাড় কাটা হবে কিনা, কি পরিমাণ কাটা হবে, পাহাড় কাটা হলে ভূমিধ্বস রোধকল্পে কোন গাইড ওয়াল কিংবা রিটেনশন ওয়াল নির্মাণ করা হবে কিনা এ সম্পর্কে কোন ধরনের তথ্য আমাদেরকে জানানো হয় নি এবং অনুমোদনও নেওয়া হয় নি। অননুমোদিতভাবে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করায় বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ধারা ৬ (খ) লংঘন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে কারণে সেখানে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে এবং এর মাধ্যমে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতিসাধনসহ জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে এবং বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতিসাধনসহ জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতির আরো বেশি আশংকা করা হচ্ছে। যে কারণে সাত জনের বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানায় মামলা করা হয়েছে।’

এর আগেও একাধিকবার পাহাড় কাটার মামলার আসামি হয়েছেন চসিক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম। এমনকি একই মামলার আসামি তার স্ত্রীও রয়েছেন

স্থানীয়দের অভিযোগ, পাহাড় রক্ষার বদলে পাহাড়খেকো এই কাউন্সিলর উল্টো চসিকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্ট্যাডিং কমিটির সভাপতি কিভাবে হলো!

যদিও পাহাড় কাটার দায়ে এসকল মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হলেও কখনোই গ্রেফতার হননি এই কাউন্সিলর। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার পাহাড় কাটার সময় পাহাড় ধ্বসের সেই ঘটনায় আহত হয়েছে আরও চারজন ব্যক্তি। ঘটনাস্থলে আনুমানিক ৫০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটার সত্যতা পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অতঃপর মামলা হয়েছে ৭ জনের বিরুদ্ধে।