বাদী নিজেই জানেন না থানায় মামলা করেছেন ! আদালতে প্রত্যাহারের আবেদন !

নিউজ ডেস্ক:

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আকবর শাহ ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে আনিত চাঁদাবাজী মামলা মিথ্যা উল্লেখ করে ওই মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন বাদী পক্ষ অপু প্রধান নামক এক ব্যবসায়ী।

রোববার (২১ মে) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে এমন স্বীকারোক্তি দিয়ে আদালতে মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন মামলার বাদী অপু প্রধান।

বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন অপু প্রধানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান।

তিনি জানান, মামলার বাদী অপু প্রধান তার চেম্বারে এসে বলেন, তাকে বাদী করে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে আকবরশাহ থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। এমন খবর জেনে নিজেই অবাক হয়েছেন অপু প্রধান। কেননা মামলার বাদী অপু প্রধানকে পুলিশ ছেড়ে দেওয়ার সময় জিনিসপত্র বুঝে পাওয়ার মর্মে স্বাক্ষর নিয়েছিলেন তার কাছ থেকে। কোনো মামলার এজেহারে নয়। এ ধরনের মামলা সে করতে ইচ্ছুক ছিলো না এবং বিবাদীর বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই। যেহেতু মামলাটি রুজু হয়ে গেছে, তাই তিনি মামলাটি প্রত্যাহার করতে চান। ওই বাদীর অনুমতি নিয়ে আইনগতভাবে মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য যাবতীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে মাননীয় আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মামলা প্রত্যাহারের জন্য রোববার ২১ মে দুপুরে আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে বাদী অপু প্রধান জানিয়েছেন, পুলিশ তাকে ছেড়ে দেওয়ার সময় জিনিসপত্র বুঝে পাওয়ার মর্মে স্বাক্ষর নিয়েছিল তার কাছ থেকে। কোনো মামলার এজেহারে নয়। ওই মামলার বিষয়টি সম্পূর্ণ অদ্ভুত একটা ব্যাপার হয়ে গেছে।

অপু জানান, ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের সাথে তার সম্পূর্ণ ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে মাত্র। একজন হকার্স ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সে, বিভিন্ন ধরণের ক্রোকারিজ সামগ্রী নিয়ে ভ্যান গাড়িতে ফেরি করেন তিনি। গত ৩/৪ দিন পূর্বে আকবর শাহ্ থানাধীন পূর্ব ফিরোজ শাহ্ এলাকায় এইচ ব্লক মোড়ে লটারীর মাধ্যমে ব্যবসা করার সময় এলাকায় জনসাধারণের মাধ্যমে মারামারি ও ঝগড়া ঝাটি সহ বিভিন্ন ধরণের উশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তাই এলাকার জনগণ উক্ত লটারী ব্যবসা বন্ধ করার জন্য বললেও কর্ণপাত না করাতে এলাকার জনগণ স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে অভিযোগ করেন।

অপু জানান, পরে ঘটনাস্থলে কাউন্সিলর এসে লটারী ব্যবসা বন্ধ করে দেন। তখন এলাকার সাধারণ জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করার জন্য উদ্বুদ্ধ হলে কাউন্সিলর জনগণের মারধর হতে রক্ষা করার জন্য আমাকে চড় থাপ্পর দিয়ে এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের লটারী ব্যবসা না করার জন্য নির্দেশ দিয়ে তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি শান্তি করার জন্য আকবর শাহ্ থানায় ফোন করে পুলিশ এনে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে তাকে।

এদিকে, আদালতে জমা দেওয়া হলফনামায় অপু প্রধান দাবি করেন, ওই দিন এলাকার সাধারণ মানুষ তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করার চেষ্টা করলে কাউন্সিলর স্থানীয়দের মারধর থেকে রক্ষা করতে তাকে ধরে চড় থাপ্পর ও বকাঝকা করেন। কাউন্সিলর জসিম তৎক্ষণাৎ পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য স্থানীয় আকবরশাহ থানার টহল পুলিশ আসলে কাউন্সিলর তাকে থানা নিয়ে একটি মুছলেকা নিয়ে ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু তাকে থানায় নিয়ে ১৭মে বিকেল সোয়া পাঁচটার থেকে ১৮ মে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আটকে রাখে পুলিশ। পরে পুলিশ থানার তার মুছলেকা নিয়ে ব্যবসায়ীক জিনিসপত্র বুঝিয়ে দেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাকে কাগজপত্র গুলো পড়তে দেয় নি বলে অভিযোগ করেন ওই যুবক।

মামলার কথা কিছুই জানতেন না এই মর্মে স্বীকারোক্তি দিয়ে বাদী অপু প্রধান হলফনামা বলেন, ‘পরবর্তীতে সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল ফোনটি অন করলে কয়েকটি নাম্বার থেকে অপুর কাছে ফোন আসে এবং কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানায়। পরবর্তীতে, তিনি খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে বাদী দেখিয়ে কাউন্সিলর জহুরুল আলম সহ আরও অজ্ঞাতনামা ৫ থেকে ৬জনকে আসামি করে আকবরশাহ থানার মামলা রুজু করা হয়েছে।

এসময় তিনি হলফনামায় আরও দাবি করেন, পুলিশ বাদীকে মিথ্যা কথার আশ্রয় নিয়ে মুছলেকাতে স্বাক্ষরের কথা বলে এজাহারে স্বাক্ষর নিয়ে কাউন্সিলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার অজান্তেই।

এই মামলাটির বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান বলেছেন, জিআর মামলা তাই আদালতে প্রত্যাহারের আইনগত সুযোগ নেই। মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদনটি নথিতে রাখার আদেশ দিয়েছেন। বিনা মন্তব্যে তদন্তকারী কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণ করারও আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এদিকে এ বিষয়ে আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালি উদ্দিন আকবর মুঠোফোনে জানান, আদালতের এমন আদেশ তার থানায় এখনও আসেনি। আদেশ হাতে পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাদীর অজান্তে মামলা কেন জানতে চাইলে তিনি আগে আদেশ আসুক তারপর দেখে মন্তব্য করবেন বলে ফোন রেখে দেন।

উল্লেখ্য গত ১৭ মে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের একজন হকারকে মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায় স্থানীয় কাউন্সিলর জুয়ার বোর্ড ভেঙ্গে দিয়ে এক লোককে মারধর করে। মুহুর্তে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় সেই ভিডিও। এ ঘটনায় আকবর শাহ্ থানায় একটি চাঁদাবাজী মামলা রুজু হয় কাউন্সিলের বিরুদ্ধে। আর মামলাটির বাদী হলেন সেই হকার ব্যবসায়ী অপু বিশ্বাস। আর সেই বাদী মামলাটি ভুল ও মিথ্যা উল্লেখ করে আজ রবিবার (২১মে) চট্টগ্রাম চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে মামলাটি প্রত্যাহার করার আবেদনটি করেছেন।