ডেঙ্গু নাকি কোভিড জ্বর ! যেভাবে বুঝবেন

চিকিৎসা সেবা :

ভাদ্রমাসে গুমোট গরম আবার আচমকা ঝেঁপে বৃষ্টি। তাতে মাঝে মধ্যেই জ্বর। জ্বর হলেই আবার কোভিডের আতঙ্ক। কিন্তু সত্যিই কি কোভিড হয়েছে? না কি ডেঙ্গু হল? বুঝবেন কী ভাবে?


শরতের শুরুতে জ্বরের প্রকোপ কিছুটা বাড়ে। জ্বর কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। কোনো সংক্রমণ হলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে জীবাণু তাড়ানোর চেষ্টা করে। তাই জ্বর হয়।


ভারতের বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় জানালেন, ইদানীং কোভিডের পাশাপাশি মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার কারণে জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। অতিমারির ভয়ে জ্বর এলে অনেকেই কোভিড পরীক্ষা করাচ্ছেন। কিন্তু সকলের তো কোভিড হচ্ছে না। অন্য কোনও অসুখ হয়েছে কি না, কী করে বুঝবেন? ‘ডেঙ্গু ও কোভিডের জ্বরের কিছু তফাৎ আছে। একটু সচেতন হলেই দুই জ্বরকে আলাদা করা খুব কঠিন নয়,’ বললেন যোগীরাজ। ডেঙ্গু হলে বিভিন্ন গাঁট-সহ শরীর জুড়ে খুব ব্যথা হয়। তাই আগে ডেঙ্গুর প্রচলিত নাম ছিল হাড়ভাঙ্গা জ্বর। সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অংশের ত্বক লাল হয়ে প্রদাহ হতে পারে।


কোভিড জ্বরেও গা-হাত-পায়ে ব্যথা হতে পারে। তবে ডেঙ্গুর তুলনায় কম। করোনায় ত্বক লাল হয়ে প্রদাহও বিশেষ হয় না। যোগীরাজের কথায়, ‘অতিমারি শুরুর প্রথম দিকে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও গলা ব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে রোগীরা আসতেন। কিন্তু ডেঙ্গুতে এই ধরনের উপসর্গ খুব একটা দেখা যায় না। তবে দু’টি অসুখের ক্ষেত্রেই মৃদু উপসর্গে রোগ নির্ণয় করা মুশকিল।’ তার মতে, এখন আতঙ্ক এত বেড়ে গিয়েছে, চিকিৎসকরা অনেক সময়ই বাড়তি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।


‘ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ’-এর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ চৌধুরী জানালেন, ডেঙ্গু কিংবা কোভিডের কারণে জ্বর হলে প্রথম দিকে রোগ নির্ণয় করা বেশ মুশকিল। শিশুদের জ্বর হলে গোড়াতেই অ্যান্টিবায়োটিক বা আইব্রুফেন জাতীয় জ্বর কমানোর ওষুধ দেয়া অনুচিত। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, জ্বর কমানোর সেরা দাওয়াই রোগীকে হাল্কা গরম জলে স্নান করানো।


জয়দীপের কথায়, শিশুদের জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। বাড়িতে নিজেদের ইচ্ছা মতো চিকিৎসা করানো যাবে না। তার কথায়, ‘ডেঙ্গু বা কোভিডের ভয়ে অনেক অভিভাবক শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির জন্য দৌড়দৌড়ি শুরু করেন। কিন্তু তার প্রয়োজন নেই। আবহাওয়া পরিবর্তনে সাধারণ ভাইরাল জ্বর হতে পারে। শিশুদের যাবতীয় টিকা দিয়ে সাবধানে রাখতে হবে।’


কী কী লক্ষণ দেখলে করোনার আশঙ্কা করতে পারেন-
• গলা ব্যথা, সর্দি
• শুকনো কাশি
• জ্বর জ্বর ভাব
• দূর্বলতা, গা ম্যাজম্যাজ
• মাথা, গা-হাত-পা ব্যথা
• স্বাদ ও গন্ধের বোধ চলে যাওয়া
• চোখ লাল হয়ে জল পড়া
• ডায়রিয়া ও পেটে ব্যথা
• আঙুলের রং বদলে যাওয়া
• বুকে চাপ ধরা ভাব ও যন্ত্রণা
• নিঃশ্বাসের কষ্ট, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়া
এইসব উপসর্গ দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


/আনন্দ বাজার অবলম্বনে/