মায়ের দুধের বিকল্পে ব্যবস্থাপত্রে গুঁড়ো দুধ লিখলে ব্যবস্থা: সিভিল সার্জন

চিকিৎসা ডেস্ক :

জন্মের পরে পরিপূর্ণ সুস্থ সবল শিশুর জন্য মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। জন্মের সাথে সাথে মায়ের শাল দুধই শিশুর প্রথম টিকা ও খাবার। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সংক্রামক থেকে শিশুকে দ্রুত রক্ষা করে। শিশুকে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখতে হলে জন্মের প্রথম ৬ মাস অবশ্যই বুকের দুধ দিতে হবে। দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি ঘরে তৈরি শিশুর উপযোগী তরল সুষম ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। তাহলে শারীরিক-মানসিক বিকাশ সাধনসহ শিশুটি বুদ্ধিমান হবে। কিন্তু মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে যে সব গুড়ো দুধ বাজারে বিক্রি হয় সেগুলো শিশু স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বুকের দুধের পরির্বতে এগুলো খাওয়ালে শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে ও বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়।

বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আয়োজিত মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ ও বিধি ২০১৭ এবং পুষ্টিখাতের অর্জন বিষয়ক অবহিতকরণ কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের বাস্তবায়নে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় কর্মশালার আয়োজন করে।

বক্তারা বলেন, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর খুব দ্রুত শাল দুধ খাওয়ালে মায়ের রক্তক্ষরণ কম হয় ও গর্ভফুল পড়তে সাহায্য করে। ফলে মা রক্তস্বল্পতা থেকে রক্ষা পায়। দেশি-বিদেশি কিছু অসাধু কোম্পানি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে শিশুদের জন্য মায়ের দুধের পরির্বতে গুঁড়ো দুধের প্রচার প্রচারণা চালায়। তারা এক শ্রেণির ডাক্তারদের চুক্তিতে শিশুদের জন্য মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে ব্যবস্থাপত্রে গুঁড়ো দুধ লেখানোর জন্য বাধ্য করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে গুঁড়ো দুধের প্রচারণা বন্ধে ডাক্তারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। মা ও শিশুকে সুস্থ রাখতে হলে গুঁড়ো দুধ বর্জন করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, সন্তান প্রসবের পর কোনো মা মারা গেলে শুধুমাত্র ওই শিশুর জন্য বুকের দুধের পরিবর্তে রেজিষ্ট্রার্ড শিশু চিকিৎসকেরা তাদের ব্যবস্থাপত্রে কারণ উল্লেখ করে বিকল্প হিসেবে ভালোমানের গুঁড়ো দুধ দিতে পারবে। মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে কোনো কোম্পানি তাদের উৎপাদিত গুঁড়ো দুধের প্রচার-প্রচারণা চালালে তাদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে। মাতৃদুগ্ধের বিকল্প গুঁড়ো দুধের বিরুদ্ধে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। তাদেরকে হাসপাতাল ও ডাক্তারের চেম্বার বা ক্লিনিক থেকে বয়কট করতে হবে।

কর্মশালায় উপস্থিত বিশেষ অতিথিরা এই আইনটি বাস্তবায়নে সর্বত্র প্রচার-প্রচারণা ও সচেতনতামুলক অনুষ্ঠানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির সভাপতিত্বে ও জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহাখালীস্থ জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ।

মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমের জাতীয় পুষ্টিখাতের অর্জন বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের পরিচালক ডা. তাহেরুল ইসলাম ও মাতৃদুগ্ধ বিকল্প আইন ২০১৩ ও বিধি ২০১৭ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ শোয়াইব। এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান।