চট্টলা ডেস্ক :
আজ ৯ অক্টোবর, বিশ্ব ডাক দিবস। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ডাক অধিদফতর এ দিবসটি পালন করছে।
এই দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ইনোভেট টু রিকভার’।
১৮৭৪ সালের ৯ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের বের্ন শহরে ২২টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গঠিত হয় ‘ইউনির্ভাসেল পোস্টাল ইউনিয়ন’।
পরবর্তীতে এ সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে উত্থাপিত একটি প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে ৯ অক্টোবরকে বিশ্ব ডাক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ইউনিভার্সেল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপিইউ) এবং আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্য পদ লাভ করে।
এরপর থেকে দেশে প্রতিবছর বিশ্ব ডাক দিবস পালিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশ ডাক অধিদফতরের উদ্যোগে বিশ্ব ডাক দিবস উপলক্ষে শনিবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর গুলিস্তানস্থ ডাক ভবনের তিন তলায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক হাতের লেখা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভকারী সিলেটের একজন মেয়েকে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে।
জার্মান ডাক বিভাগের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জে. হাইনরিখ ফন স্টিফেন ১৮৬৮ সালে একটি পোস্টাল ইউনিয়ন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং প্রস্তাব আকারে জার্মান সরকারের কাছে পেশ করেন। প্রস্তাবের সূত্র ধরে জার্মান সরকারের উৎসাহে সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে ১৮৭৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ২২টি দেশের ডাক বিভাগ একত্রিত হয়ে একটি সম্মেলন করে। সম্মেলনের শেষ দিন ৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় জেনারেল ইউনিয়ন অব পোস্ট।
১৮৭৮ সালে জেনারেল ইউনিয়ন অব পোস্ট পরিবর্তন করে বিশ্ব ডাক সংস্থা করা হয়। বিশ্ব ডাক সংস্থা গঠনের পর যে কোনো রাষ্ট্র থেকে পাঠানো চিঠি অন্য রাষ্ট্র বিনা মাশুলে গ্রহণ করে। এর আগে একটি চিঠি এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাঠানো হলে যতগুলো দেশের ভেতর দিয়ে যেত, সেসব দেশের ডাকটিকিট খামে লাগাতে হতো।
এতে করে ডাক বিভাগকে পোহাতে হতো অনেক ঝামেলা। ১৯৬৯ সালে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডাক সংস্থার ১৬তম অধিবেশনে ৯ অক্টোবরকে বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১৯৮৪ সালে জার্মানির হামবুর্গে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডাক সংস্থার ১৯তম অধিবেশনে বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন দিবসকে করা হয় বিশ্ব ডাক দিবস। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সাল ইউনিয়ন অর্থাৎ বিশ্ব ডাক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে।
এরপর থেকে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রতি বছর ৯ অক্টোবরকে বিশ্ব ডাক দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে। এ বছরও বিশ্ব ডাক দিবস উদযাপিত হচ্ছে।
ডাক বিভাগের কাছে বিশ্ব ডাক দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। আর তাই এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ৮টি বিশেষ খাম ও ৮টি সিলমোহর, ১৪টি বিশেষ সীলমোহর, ১০টি স্মারক ডাকটিকিট, দুটি সুভেনির শিট ও চারটি উদ্বোধনী খাম প্রকাশ করেছে।
প্রথম ১৯৭৪ সালের ৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক সংস্থার শতবার্ষিক উপলক্ষ্যে ২৫ পয়সা, ১ টাকা ২৫ পয়সা, ১ টাকা ৭৫ পয়সা ও ৫ টাকা মূল্যমানের চারটি স্মারক ডাকটিকিট ও ৮ টাকা ২৫ পয়সা মূল্যমানের একটি সুভেনির শিট প্রকাশ করে। এটি বাংলাদেশের প্রথম সুভেনির শিট। ডাকটিকিট ও সুভেনির শীটের নকশা করেন কে জি মুস্তাফা এবং মুদ্রাকর ইংল্যান্ডের মেসার্স ব্রাডবুরি উইলকিনসন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড।
১৯৯৯ সালের ৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক সংস্থার ১২৫তম বার্ষিক উপলক্ষ্যে ৪ টাকা মূল্যমানের দুটি ও ৬ টাকা মূল্যমানের দুটি মোট চারটি স্মারক ডাকটিকিট এবং ২৫ টাকা মূল্যমানের একটি সুভেনির শিট প্রকাশিত হয়।
ডাকটিকিটগুলোর নকশাকার হলেন আনোয়ার হোসেন, মতিওর রহমান ও মো. সামসুজ্জোহা।
এই ডাকটিকিটের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেটি হলো ডাকটিকিটের ডিজাইন বিশ্ব ডাক সংস্থা থেকে পাঠানো হয় এবং একই নকশায় বিশ্ব ডাক সংস্থার সমস্ত সদস্য দেশ থেকে ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়।
বর্তমানে ইমেইল ও ইন্টারনেটের যুগে জনগণ দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য সেবা আশা করে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ হয়তো আশানুরূপ সেবা দিতে পারছে না। অথচ কুরিয়ার সার্ভিসের চেয়ে অনেক কম মূল্যে ডাক বিভাগ সেবা দিয়ে আসছে।