চট্টলা ডেস্ক :
মাঝ আকাশে হার্ট অ্যাটাকের শিকার পরবর্তী সময়ে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলট নওশাদ আতাউল কাইউমের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
ভারতের নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) ভ্যাল্টিনেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে বিমানের একটি সূত্রসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমেও খবর এসেছিল।
তবে তিনি এখনও জীবিত আছেন বলে জানিয়ে এ নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে নওশাদের পরিবার।
রবিবার (২৯ আগস্ট) দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (এমডি ও সিইও) আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে মৃত্যুর খবর শোনা গেলেও যতদূর জানি তিনি এখনো জীবিত আছেন। ভেন্টিলেশনে আছেন। তার চিকিৎসায় হাসপাতালে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত জানার পর আমরা তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দেবো।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ক্যাপ্টেন নওশাদের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে ছড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান দুপুর আড়াইটায় বলেন, ‘ক্যাপ্টেন নওশাদ এখনো মারা যাননি। তার ভেন্টিলেশনও খোলা হয়নি। নওশাদের দুই বোন হাসপাতালে যাবেন। চিকিৎসক বোর্ড নওশাদের দুই বোনের সঙ্গে মিটিং করে ভেন্টিলেশন খোলার বিষয়ে মতামত জানাবেন। তবে তিনি এখনো জীবিত।’
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ‘রবিবার সকাল থেকে ক্যাপ্টেন নওশাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তার দেহের বেশ কয়েকটি অর্গান (অঙ্গ) কাজ করছে না। এক কথায় ক্লিনিক্যাল ডেথ বলা যেতে পারে। বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ ভেন্টিলেশন নির্ভর। ভেন্টিলেশন খুলে দেওয়ার বিষয়ে পরিবার সিদ্ধান্ত জানালে পরবর্তী আপডেট জানা যাবে।’
এর আগে সকালে দেশের একজন খ্যাতিমান নির্মাতা এবং পাইলট নওশাদের বাল্যবন্ধু পরিচয় দিয়ে শামীম আহমদ নামে আরেকজন ফেসবুকে পোস্ট করে জানান আতাউল কাইউম নওশাদের মৃত্যুর।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকালে ওমানের মাস্কাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে বিজি-০২২ ফ্লাইটটি নিয়ে ঢাকা আসার পথে ভারতের আকাশে থাকা অবস্থায় ক্যাপ্টেন নওশাদ অসুস্থ বোধ করেন। পরে ফ্লাইটটিকে মহারাষ্ট্রের নাগপুরের ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করানো হয়।আকাশে অসুস্থ হয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাপ্টেন নওশাদ ফ্লাইটটিকে কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) কাছে জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানান। একই সময় তিনি কো-পাইলটের কাছে ফ্লাইটের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেন।
কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ফ্লাইটটিকে নিকটস্থ নাগপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করার নির্দেশ দিলে ফার্স্ট অফিসার মুস্তাকিম ফ্লাইটটি অবতরণ করান।বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের ওই ফ্লাইটে ১২৪ জন যাত্রী ছিলেন। তারা সবাই নিরাপদে ছিলেন। শুক্রবারই আরেকটি ফ্লাইটে করে আট সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল নাগপুরে যায়। মধ্যরাতের পর বিমানটিকে যাত্রীসহ ঢাকার বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়।
পাইলটের শারীরিক যেসব সমস্যা ধরা পরে হাসপাতালে : নাগপুরের কিংগসওয়ে হাসপাতালের মেডিকেল সার্ভিসেস ডিরেক্টর ডা. সুভরজিৎ দাশগুপ্ত, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ফিজিশিয়ান ডা. রঞ্জন বারোকার এবং ডা. বীরেন্দ্র বেলেকারের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন পাইলট নওশাদ।ভারতের নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালের হাসপাতালের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রোশান ফুলবান্ধে জানান, প্রথমে ক্যাপ্টেন নওশাদের হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। ক্যাপ্টেন নওশাদের হার্টের এনজিওগ্রাম করা হলে দুটি রক্তনালীতে ব্লক পাওয়া যায়। তবে মাত্র ৬০-৭০ ভাগ। এটি প্রায় স্বাভাবিক। এরপর তার মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তিনি আনরেসপনসিভ ও আনকনশাস (কোন সাড়া দিচ্ছেন না, সম্পূর্ণ অচেতন) অবস্থায় আছেন।
শনিবার দুপুরে তাকে প্রায় আধা ঘণ্টা সিপিআর (বুকে চাপ দেওয়াসহ নানা কৌশলে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা) দেওয়া হয়েছে। তবে চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রটোকল অনুযায়ী এ ধরনের রোগীকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। তাকে এসআইসিইউতে পাঠিয়ে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।