চট্টলা ডেস্ক :
মাঝ আকাশে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়ার পরও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১২৪ যাত্রীদের জীবন বাঁচানো সেই পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউম হেরে গেলেন নিজ জীবনের কাছে।
২৯ আগষ্ট রোববার ভারতের নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
‘ ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমডি ড. আবু সালেহ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
এই পাইলটের এক স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে দ্রুত মৃতদেহ দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গত শুক্রবার মাসকাট-ঢাকা রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের শিডিউল ফ্লাইট বিজি ০২২ মোট ১২৪ যাত্রী নিয়ে ঢাকা আসার পথে পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরে ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরের ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণ করে। এরপর নাগপুরের ওই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তাকে ভর্তি করা হয়। দুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর না ফেরার দেশে চলে গেলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ।
এর আগে শনিবার ওই হাসপাতালের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রোশান ফুলবান্ধে জানিয়েছিলেন, ক্যাপ্টেন নওশাদ ‘কোমায়’ আছেন। মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে সম্পূর্ণ ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ বিমান সূত্র জানায়, শুক্রবার (২৭ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৬টায় ওমানের মাস্কাট মাস্কাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে উড্ডয়ন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২২ ফ্লাইট। মাঝ আকাশে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন পাইলট ক্যাপটেন নওশাদ আতাউল কাইউম। বিষয়টি তিনি ফার্স্ট অফিসারকে জানিয়ে ফ্লাইটটি আশপাশে কোথাও জরুরি অবতরণ করতে বলেন।
কোলকাতা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) নিকটতম মহারাষ্ট্রের নাগপুরের ড. বাবা সাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার পরামর্শ দেয়। বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়ার পরও ক্যাপ্টেন নওশাদের দিক নির্দেশনায় ফ্লাইটটিকে দক্ষতার সঙ্গে নিরাপদে নাগপুর জরুরী অবতরণ করে । যাত্রীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। নওশাদ ও তার ফার্স্ট অফিসারের বুদ্ধিমত্তায় জীবন রক্ষা পেয়েছে ওমান থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসা ১২৪ যাত্রীর।
ভারতের নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউম মারা যান যান।
এর আগে, ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর ওমানের মাস্কাট থেকে চট্টগ্রামগামী বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১২২ ফ্লাইটে পাইলটের ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউম নিজের বুদ্ধি ও কৌশল প্রয়োগ করে আরও ২ পাইলট, ১৪৯ যাত্রী ও ৭ ক্রু’র জীবন বাঁচিয়েছিলেন। মাস্কাট বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) থেকে ক্যাপ্টেন নওশাদকে জানানো হয়, রানওয়েতে টায়ারের কিছু অংশ পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত বিমান এয়ার ক্রাফটের হতে পারে। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নওশাদ বিমানটি চট্টগ্রাম অবতরণ না করে ঢাকা বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। অবতরণের আগে ক্যাপ্টেন ফ্লাইটটি নিয়ে রানওয়ের উপরে দুইবার লো-লেভেলে ফ্লাই করেন। তখন দেখা যায়, উড়োজাহাজের পেছনের দুই নম্বর টায়ারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে ক্যাপ্টেন নওশাদ দক্ষতার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত টায়ার ও ল্যান্ডিং গিয়ারসহই নিরাপদে ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করাতে সক্ষম হন।
এই ঘটনার পর ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ক্যাপ্টেন নওশাদকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রশংসাপত্র পাঠিয়েছিল।