চট্টলা নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনিকে আটকের পর তার নামে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা করেছে র্যাব। এতে আসামি করা হয়েছে আরও তিনজনকে। অভিযোগ প্রমাণ হলে এসব মামলায় পরীমনির সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এখন পর্যন্ত আলোচিত এ নায়িকার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে দুটি। দুই মামলাতেই সর্বোচ্চ সাজার উল্লেখ আছে পাঁচ বছর। তার আইনজীবীরা অবশ্য মামলা দুটিকে ভিত্তিহীন বলছেন। তাদের বিশ্বাস কোনো সাজাই হবে না তার।
আদালতে তোলার পর পরীমনিকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। তবে এটিই শেষ নয়; তদন্ত করে পুলিশ প্রতিবেদন দিলে তার গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি হবে। আর অভিযোগ গঠন হলে চলবে বিচারকাজ।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. বশির উল্লাহ জানান, ‘নায়িকা পরীমনি এবং পরিচালক রাজের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে যে মামলা হয়েছে, সেটি একটি আমলযোগ্য অপরাধ। এটি অজামিনযোগ্য অপরাধ।’
বাসা থেকে বুধবার রাতে আটকের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানী থানায় পরীমনি ও প্রযোজক-পরিচালক নজরুল ইসলাম রাজের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬ এর ১০ (ক) ও ২৪ (খ) ধারায়।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬ (১) এর সারণি ২৪ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ১০ কেজি বা লিটারের বেশি এবং ১০০ কেজি বা লিটারের কম হলে কমপক্ষে তিন বছর ও সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হবে।
৩৬ (১) এর সারণি ১০ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্যের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২০০ গ্রাম বা মিলিলিটার হইলে কমপক্ষে এক বছর ও সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হবে।
আইনের ৪২ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি এ আইন অথবা বিধির কোনো বিধান লঙ্ঘন করে যাতে স্বতন্ত্র কোনো দণ্ড নেই, তাহলে তিনি ওই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ওই আইনের ৪১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো মাদকদ্রব্য অপরাধ সংঘটনে কাউকে প্ররোচনা দিলে অথবা সাহায্য করলে অথবা কারও সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে অথবা এ উদ্দেশ্যে কোনো উদ্যোগ অথবা চেষ্টা করলে মাদকদ্রব্য অপরাধ সংঘটিত হোক বা না হোক, তিনি সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মতো দণ্ড পাবেন।
‘এখানে পরীমনি হোক কিংবা যে কেউ হোক, এসব অপরাধের জন্য আসামির শাস্তি ভোগ করতেই হবে। আইন সকলের জন্য সমান। আইনে অপরাধ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার শাস্তি পেতে হবে।’
চিত্রনায়িকা পরীমনি ও প্রযোজক-পরিচালক নজরুল ইসলাম রাজকে আটকের বিষয়ে ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানানোর পর বিকেলে বনানী থানায় নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়।বনানী থানা থেকেই পরীমনি ও রাজকে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।এর আগে র্যাব কার্যালয়ে পরীমনি ও রাজকে আটকের বিষয়ে বিস্তারিত গণমাধ্যমে তুলে ধরে র্যাব।বাহিনীটি জানায়, অ্যালকোহলের চাহিদা মেটাতে পরীমনি নিজের বাসায় ‘মিনি বার’ স্থাপন করেছিলেন।ব্রিফিংয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘পরীমনির বাসার মিনি বারে বিভিন্ন বিদেশি মদ, ইয়াবা, এলএসডি ও আইস পাওয়া গেছে। পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা এ তথ্য জেনেছি।
‘আমরা জেনেছি, ২০১৬ সালে অ্যালকোহলে আসক্ত হন তিনি। চাহিদা মেটাতেই এই মিনি বার স্থাপন করেন। বিভিন্ন সময় তার বাসায় ডিজে পার্টি আয়োজন করতেন। এই মিনি বারে অ্যালকোহল সরবরাহ করত নজরুল ইসলাম রাজ।’পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান শেষে বুধবার রাতে তাকে র্যাবের সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ অভিনেত্রীর বাসায় অভিযান শেষ হতেই বনানীতেই অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় প্রযোজক-পরিচালক রাজকে।র্যাব জানায়, পরীর বাসা থেকে জব্দ করা হয়েছে আট বোতল প্লাটিনাম লেভেল, তিনটি ব্ল্যাক লেভেল, দুটি সিভাস সিগ্যাল, দুটি ফক্স গ্রোভ, একটি ব্লু লেভেল, দুটি গ্ল্যানলিভেট ও একটি গ্ল্যানফিডিচ বোতল।সংস্থাটি জানায়, এ অভিনেত্রীর বাসা থেকে জব্দ হয়েছে চার গ্রাম আইস ও এক স্লট ভয়ংকর মাদক এলএসডি। জব্দ তালিকায় একটি বং পাইপের কথাও বলা হয়েছে।চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক নজরুল ইসলাম রাজের অফিস থেকেও বিপুল মদ জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।জব্দ তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, তার বাসায় মিলেছে সাত বোতল গ্ল্যানলিভেট, দুটি গ্ল্যানফিডিচ, চারটি ফক্স গ্রোভ ও একটি প্লাটিনাম লেভেল।এ ছাড়া সিসা সেবনে ব্যবহৃত চার কোলের একটি প্যাকেট, দুই সেট সিসার সরঞ্জাম, দুই ধরনের সিসা তামাক, সিসা সেবনের জন্য ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের একটি রোল ও ৯৭০টি ইয়াবা ট্যাবলেটের কথাও বলা হয়েছে জব্দ তালিকায়।এ ছাড়া যৌনাচারের জন্য ব্যবহৃত ১৪টি বেআইনি সরঞ্জাম, একটি সাউন্ড বক্স ও দুটি মোবাইল ফোন সেট এবং একটি মেমোরি কার্ড জব্দ করা হয়েছে রাজের বাসা থেকে।