কুমিল্লা প্রতিনিধি:
জেলার চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় চাঞ্চল্যকর নুরুল আমিন দম্পতিকে হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
শনিবার (২৩ অক্টোবর) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামিরা জানায়, চুরির করতে যাওয়ার পর আব্দুল মালেককে চিনে ফেলায় নুরুল আমিন দম্পতিকে হত্যা করা হয়।
পিবিআই জানান, চোরকে চিনে ফেলাতেই নুরুল আমিন (৬৫) এবং তার স্ত্রী কামরুন নাহারকে (৬০) লোহার শাবল দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি আব্দুল মালেকসহ (৩৪) তিন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।
আব্দুল মালেক শাহরাস্তি উপজেলার মেহের ঘুঘুশাল গ্রামের মোহাম্মদ আবদুর রহমানের ছেলে। আটক অপর দুই আসামি হলো– ঝালকাঠি জেলার গাবখান গ্রামের মৃত আজহার আলীর ছেলে ইলিয়াস হোসেন (৫৩) এবং বরিশাল জেলার কাউনিয়া থানার চরবাড়ীয়া গ্রামের কাঞ্চন হাওলাদারের ছেলে বশির হাওলাদার (৪৫)।আটক তিন আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে শনিবার বিকেলে চাঁদপুর শহরের বাবুরহাটে পিআইবি চাঁদপুর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই চাঁদপুরের পুলিশ সুপার খন্দকার নূর রেজওয়ানা পারভিন জানান, ২৯ জুন শাহরাস্তি উপজেলার নাওড়া রেলক্রসিং এলাকায় নিজ বাড়িতে খুন হন নুরুল আমিন দম্পতি। পরের দিন ১ জুলাই বাড়ির ছাদে নুরুল আমিন এবং ঘরের মেঝেতে তার স্ত্রী কামরুন নাহারের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় নিহতের একমাত্র ছেলে মোহাম্মদ জাকারিয়া বাবু শাহরাস্তি থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি শাহরাস্তি থানা পুলিশ প্রায় একমাস তদন্ত করে। পরবর্তী সময়ে তদন্তাধীন অবস্থায় বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের আদেশে অধিকতর তদন্তের জন্য পিআইবিকে মামলার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের তত্ত্বাবধায়নে পিবিআই চাঁদপুরের পুলিশ সুপারের সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কবির আহমেদ এ মামলার তদন্ত করেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয়, আটক আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ঘটনার রাত আনুমানিক ৭টার সময় প্রধান আসামি আব্দুল মালেক চুরি করার উদ্দেশ্যে নুরুল আমিনের বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর সে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠে অবস্থান করে। এদিকে রাত সোয়া ৯টার সময় নুরুল আমিন টর্চ লাইট হাতে ছাদে উঠলে চোর আব্দুল মালেক লোহার রড দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে ফেলে দেয়। এরপর ছাদে শুকাতে দেওয়া মৌজা দিয়ে গলা পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে। সেখান থেকে সে ভেতরে একটি রুমে প্রবেশ করে চুরির জন্যে কেবিনেটের ড্রয়ার টানাটানি করতে থাকে। নুরুল আমিনের স্ত্রী কামরুন নাহার শব্দ পেয়ে লাইট জ্বালিয়ে আসামি আবদুল মালেককে চিনে ফেলেন। আব্দুল মালেক একই রড দিয়ে কামরুন্নাহারের মাথায় আঘাত করে মেঝেতে ফেলে দেয়।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার খন্দকার নূর রেজওয়ানা পারভিন বলেন, ‘ঘটনার অধিকতর তদন্ত করা পিবিআইয়ের কাজ। আমরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রধান আসামি আব্দুল মালেককে আটক করতে সক্ষম হই। এরপর তার দেওয়া তথ্যমতে অপর দুই আসামিকে আটক করা হয়। যাদের কাছে হত্যার শিকার নুরুল আমিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসসহ অন্যান্য মালামাল পাওয়া যায়।’