নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রাম নগরীর জামাল খান এলাকায় টিসিবি’র বস্তায় পাওয়া ৭ বছরের সেই শিশুকন্যা মারজানা হক বর্ষা হত্যা রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত লক্ষণ দাশ (৩০) নামে এক দোকান কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়।
টিসিবির সীলযুক্ত বস্তার সূত্র ধরে ‘খুনি’ শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানান কোতোতালি থানার ওসি কবীর হোসেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) রাতে নগরের জামালখান এলাকা থেকে লক্ষণ দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। লক্ষণ দাশ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর পদুয়া গ্রামের মনি মিস্ত্রির বাড়ির ফেলোরাম দাশের ছেলে। শহরে সে থাকতো নগরের জামালখান গোপাল মুহুরীর গলির পাশে।
এর আগে গত ২৪ অক্টোবর বিকাল সাড়ে চারটায় ভিকটিম মারজানা হক বর্ষা (৭) জামালখান লিচু বাগান সিকদার হোটেলের পাশের গলির বাসা থেকে চিপস কিনতে গলির মুখে দোকানে যায়। এক পর্যায়ে বর্ষাকে ১০০ টাকার লোভ দেখিয়ে নিজের কর্মস্থল জামালখান এলাকায় “শ্যামল স্টোর” নামে দোকানের গোডাউনে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের পর হত্যা করে৷ এরপর লাশ বস্তায় ভরে নালায় ফেলে দেয় লক্ষণ দাশ।
এরও আগে সেদিন চিপস কিনতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ বাসায় ফিরে না আসায় বর্ষার পরিবার সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে। না পেয়ে পরদিন ২৫ অক্টোবর তার (বর্ষার) বড়বোন ছালেহা আক্তার রুবী কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে।
২৭ অক্টোবর জামালখান লিচু বাগান সিকদার হোটেলের পিছনে ড্রেনের উপর বস্তাবন্দি ভিকটিমের লাশ দেখতে পেয়ে থানায় সংবাদ দেন জনৈক বেলাল হোসেন।
পুলিশ সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ মৃতদেহের সুরতহাল সম্পন্ন করে বর্ষার লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় গত ২৮ অক্টোবর নিহত বর্ষার মা বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন।
দক্ষিণের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া জানান, শিশু কন্যা বর্ষার মৃতদেহ ড্রেনে পাওয়ার পর যখন বস্তা কেটে মৃতদেহটি বের করা হয় তখন পুলিশের নজরে আসে বস্তাটিতে টিসিবি’র সীল আছে। সীলযুক্ত বস্তায় মালামাল বিক্রয়ের দোকান ও আশেপাশের বিভিন্ন রেস্তোরার গোডাউনে টিসিবি’র সীলযুক্ত বস্তা খুঁজতে থাকে পুলিশ।
ভিকটিমকে ১০০ টাকার লোভ দেখিয়ে ২৪ অক্টোবর বিকাল ৪ টা ৪৩ মিনিটে দোকানের গোডাউনে নিয়ে যায়। গোডাউনে নেওয়ার পর মুখ এবং নাক চেপে ধরে বর্ষাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
ধর্ষণকালে বর্ষার যৌনাঙ্গ থেকে অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়ায় লক্ষণ দাশ ভয় পেয়ে ভিকটিমের মুখ এবং নাক চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে সে গোডাউনে রাখা টিসিবি’র সীলযুক্ত প্লাস্টিকের বস্তার ভেতরে ভিকটিমের মৃতদেহ ঢুকায়।
বস্তাবন্দি মৃতদেহটি সে বাহিরে এনে গোডাউনের ডান পাশে দেয়াল সংলগ্ন ড্রেনে দেয়ালের উপর দিয়ে ফেলে দেয়।এর কিছুক্ষণ পরে সে ভিকটিমের কাপড়চোপড় পেঁয়াজের খোসার বস্তার ভিতর খোসাসহ ঢুকিয়ে বস্তাটি একই জায়গায় তথা ড্রেনে ফেলে দেয়। এরপর পরে সে ভিকটিমের ব্যবহৃত স্যান্ডেলটি নিয়ে ড্রেনে ফেলে দেয়।