চট্টলা ডেস্কঃ ফাল্গুনের প্রথম দিনে আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। গাছে গাছে নতুন ফুল, সবুজ কচি পাতা, পাখির সুর, সব মিলিয়ে প্রকৃতি নতুন সাজে মুখরিত। শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার বর্ণিল আভা। গেল বছর থেকেই হাত ধরাধরি করে আসছে বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস।
বসন্তের রঙে ভালবাসা মিশেছে এসে। এতে উৎসবে এনেছে ভিন্ন আমেজ। বসন্ত মানে পূর্ণতা। বসন্ত মানে প্রাণচঞ্চলতা। বসন্ত মানেই গাছে গাছে নতুন ফুল। ফুল ফুটুক আর না ফুটুক, ফাল্গুনের প্রথম দিনে ঘরের বাইরে পা দিলেই বোঝা যায় প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন ঘটেছে।
মেয়েদের পরনে বাসন্তি শাড়ি, তার সঙ্গে মিলিয়ে হাতভর্তি চুড়ি, কপালে টিপ, আর খোঁপায় হলুদ ফুল। ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব নগরের ফুলের দোকানে রয়েছে বাড়তি আয়োজন। দোকানগুলোতে রয়েছে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদাসহ নানান রঙের দেশি-বিদেশি ফুলের বাহার।
বিভিন্ন বুটিক হাউজ সেজেছে বসন্তের নানা পোশাকে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। উৎসবে এসেছে বাড়তি রঙ। ফলে উৎসবে মেতে উঠবে নগরবাসী। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মেতে উঠবে। বাঙালির মনে চলছে বসন্ত আর ভালোবাসা নিয়ে উৎসব-উদ্দীপনা। বসন্ত উৎসব নিয়ে এক তরুণী বলেন, ‘২০১৯ সাল পর্যন্ত ফাল্গুন পালন করে এসেছি ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখে। গতবছর থেকে ভালোবাসা দিবসের সঙ্গে পালন করছি পহেলা ফাল্গুনটা। অনুভূতিটা আসলেই অন্যরকম। একটা নতুন শুরুর মতো মনে হয়। নতুন মাস, নতুন ঋতু কিন্তু পুরোনো ভালোবাসা।
সবকিছু মিলিয়ে পুরোটা এক অনন্য অনুভূতি।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার কাছে বসন্ত মানেই হলুদ রঙের শাড়ি পরে খোঁপায় ফুল গুজে বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিবছর ক্যাম্পাসে ঘুরতে বের হওয়া। ফেব্রুয়ারি মাস আসার আগেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ি- বসন্তে কি রঙের শাড়ি পরব তা নিয়ে।’ আরও বলেন, ‘বসন্তের দিন প্রথম কাজ যেটা করি- তা হলো শাটলে চড়ে ক্যাম্পাসে যাওয়া।
এরপর সারাদিন ক্যাম্পাসের এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ানো, ফুচকা খাওয়া, কলার ঝুপড়ি ভর্তা দিয়ে ভাত খাওয়া, বিকেলে সমাজবিজ্ঞানের ঝুপড়িতে চা খেতে খেতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। বন্ধ ক্যাম্পাসও তার বাসন্তি রূপ ধারণ করবে না এ বছর।
দিনটি খুব মিস করব এ বছর।’ আবার দায়িত্বকেই উৎসব মনে করছেন নগরবাসীকে নিরাপত্তার চাদরে রাখা পুলিশ সদস্যরা। তারা বলছেন, শুধু বসন্ত কেনো, যেকোনো উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে দায়িত্ব বর্তায় তাদের কাঁধে। ফলে ৮/১০ জনের মতো তাদের নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা থাকে না।
উৎসবে আসা মানুষদের সঙ্গে নিয়েই কাটে দিনটি। কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস একসঙ্গে পালন করতে মুখিয়ে আছে নগরবাসী। তাদের নিরাপত্তা দিতে সকালে নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম পরে বের হব। আলাদা করে কোনো পরিকল্পনা নেই।
নগরবাসীর উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পারাই আমাদের উৎসব।’ এদিকে করোনাকালেও অনেক সংগঠন আগের ঐতিহ্য মেনে বসন্তবরণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করছে। এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরের ফয়স লেক, সিআরবি, ডিসি হিল পার্ক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চারুকলা ইনস্টিটিউট, রেলওয়ে চত্ত্বর সেজেছে নতুন সাজে।
নগরের সিআরবি শিরীষ তলায় আবৃত্তি সংগঠন ‘প্রমা’র আয়োজনে চলবে দিনব্যাপী আবৃত্তি, গান, নৃত্য, ঢোলবাদন ও যন্ত্রসঙ্গীত। এদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে প্রমার আয়োজন। বিকাল ৪টায় এ উৎসবে যোগ দেবেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি।
আমবাগান (পাহাড়তলী) রেলওয়ে জাদুঘর সংলগ্ন শেখ রাসেল পার্কে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম। ‘নিবিড় অন্তরতর বসন্ত এলো প্রাণে’ শিরোনামে অনুষ্ঠান সকাল ৮ টা থেকে চলবে দিনব্যাপী।
সিনেমাপ্রেমীদের জন্য এদিনে নগরের সুগন্ধা সিনেমা হলে চলবে ‘বিশ্ব সুন্দরী’। জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শিল্পকলা প্রাঙ্গণে পালন করা হবে বসন্ত উৎসব। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম ‘নিবিড় অন্তরতর বসন্ত এল প্রাণে’ শিরোনামে থিয়েটার ইনস্টিটিউটে পালন করবে বসন্ত উৎসব। এছাড়াও নগরের অভিজাত হোটেল রেডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউ, দ্যা পেনিনসুলা, ওয়েল পার্ক রেসিডেন্স, হোটেল আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে করা হয়েছে বিশেষ আয়োজন।