হাইদগাঁওতে গাছের সঙ্গে বেঁধে আ: লীগ নেতাকে পিটিয়েছে চেয়ারম্যান জসিমের সর্মথকরা

পটিয়া প্রতিনিধি :

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিতেন কান্তি গুনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়েছে প্রতিপক্ষ বিদ্রোহীর সর্মথকরা।

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর তিনটার দিকে হাইদগাঁও ইউনিয়নের একটি কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।

পটিয়ার হাইদগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিলের ব্যানারে নাম দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ সময় দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

জানা গেছে, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি’র।

এদিকে আহত আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন কান্তি গুহকে তার অনুসারীরা উদ্ধার করে প্রথমে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ওই এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিলের ব্যানারে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএম জসিমের নাম দেয়নি আয়োজকরা।

এই ক্ষোভ থেকে দুপুরে অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে চেয়ারম্যান জসিম গালিগালাজ করে ব্যানার টেনে ছিড়ে ফেলেন। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন কান্তি গুহের সঙ্গে তার তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

একপর্যায়ে চেয়ারম্যান বিএম জসিমের লোকজন জিতেন কান্তি গুহকে টেনেহিঁচড়ে কমিউনিটি সেন্টারের বাইরে এনে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক পেটায়। এতে তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান রক্তাক্ত হয়।

এ বিষয়ে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায় নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। এখনো পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।’

উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হাসনাত মো. ফয়সাল বলেন, ‘বিএম জসিম তো আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়া লোক। তাকে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার কারণে বহিষ্কার করেছেন জেলা আওয়ামী লীগ। সে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল। তাকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিলে দাওয়াত দেওয়া কিংবা ব্যানারে নাম দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুপুরে আমাদের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিল শুরুর মুহূর্তে বিএম জসিমসহ তার ক্যাডার বাহিনীর লোকজন এসে হামলা চালিয়ে অনুষ্ঠানটি পন্ড করে। আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন কান্তি গুহকে মেরে গুরুতর আহত করেছেন। এ ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে তিনি নাটক সাজিয়েছেন দেনা পাওনার হিসেবের।’

হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম জুলু বলেন, ‘বর্তমান চেয়ারম্যান জসিম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ওনাকে ইফতার মাহফিলে দাওয়াত দেয়নি। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ৩০-৪০জন লোকজন নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে এসে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মাহমুদুল হক হাফেজকেসহ বিভিন্ন জনকে গালাগালি করতে থাকেন। একপর্যায়ে ইন্দ্রজিৎ লিও নামের সাবেক একজন ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন কান্তি গুহকে ঘুষি মারেন। এসময় ওনার সঙ্গে থাকা বাকি লোকজন জিতেন গুহকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করে।’

হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক মাহফুজুল হক হাফেজ বলেন, ‘এ ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত। ইফতার মাহফিল শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে বিছিন্ন এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না।’

হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএম জসিম এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার সমর্থকরা পিছিয়েছে কথাটি অস্বীকার করে বলেন, ‘জিতেন গুহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকার সময় সরকারি ঘর, টিউবওয়েল ও চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমাকে গতবারের আগের বার চেয়ারম্যান নমিনেশন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ২৫ লাখ টাকা নিয়েছে। ওই লোকগুলো তাকে পেয়ে টাকা ফেরত দিতে বলে মারধর করে। আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকায় জিতেনকে বাঁচাতে পেরেছি। আমি না থাকলে অবস্থা খারাপ হয়ে যেতো।’