কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজার জেলার উখিয়ায় অভিযানে ২৪ কেজি ২০০ গ্রাম যা ১২০ কোটি টাকা মূল্যের ক্রিস্টাল মেথ আইস জব্দ করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় ৪ মাদক চোরাকারবারিকে। এ কালের সবচেয়ে বড় চালান জব্দ হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাদের মধ্যে একজন পুলিশের সাবেক সদস্যও রয়েছেন বলে জানান এলিট বাহিনীটি।
রবিবার (৭ মে) দুপুর ১২টায় র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব সদর দপ্তরের পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তার মাদক ব্যবসায়িরা হলেন – মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে ইমরান প্রকাশ ইরান মাঝি (৩৩), মো. রুবেল প্রকাশ ডাকাত রুবেল (২৬), মৃত আলী আহাম্মদের ছেলে মো. আলাউদ্দিন (৩৫) ও মৃত আব্দুল করিমের ছেলে জয়নাল আবেদীন প্রকাশ কালা বদা (৩৭)। এদের মধ্যে আলাউদ্দিন সাবেক পুলিশ সদস্য।
র্যাব সদর দপ্তরের পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কক্সবাজারের উখিয়ায় অভিযান চালিয়ে ক্রিস্টাল মেথ আইসের সবচেয়ে বড় চালান জব্দ করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় ৪ মাদক চোরাকারবারিকে। যাদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের সাবেক এক সদস্যও। উদ্ধার ২৪ কেজি ২০০ গ্রাম আইসের আনুমানিক মূল্য ১২০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন র্যাব।
তিনি জানান, র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল (শনিবার রাতে) উখিয়ার পালংখালীর সফিউল্ল্যাহ কাটা এলাকার ইরান মাঝির আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে। সেখানে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় আনুমানিক ১২০ কোটি টাকা মূল্যের ২৪.২ কেজি আইসসহ কক্সবাজার কেন্দ্রীক আইস চোরাচালানের অন্যতম হোতাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা জানায়, মূলত গ্রেপ্তার ইরান মাঝি এই চক্রের মূলহোতা। তার নেতৃত্বে মাদক সিন্ডিকেটের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ইরান মাঝির নেতৃত্বে চক্রটির বেশ কয়েকজন সদস্য মিয়ানমার থেকে দুর্গম সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে মাদক এনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে আসছে। এই চক্রটি মূলত কক্সবাজার কেন্দ্রিক একটি মাদক চোরাকারবারী চক্র এবং রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের নির্ধারিত এজেন্ট রয়েছে। প্রথমে ইরান মাঝির নেতৃত্বে চক্রের সদস্যরা মিয়ানমারের মাদক চক্রের কাছ থেকে মাদক গ্রহণ করে। এসব মাদক অবৈধপথে ঘুমধুম সীমান্ত হয়ে তারা মাদকগুলো সীমান্তবর্তী এলাকার গোপন স্থানে জমা করে। পরবর্তীতে সেখান থেকে তারা দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল ও নৌপথ ব্যবহার করে বিভিন্ন কৌশলে মিয়ানমার থেকে আনা ক্রিস্টাল আইসসহ অন্যান্য মাদক কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখতো। এরপর সুবিধাজনক সময়ে চক্রটি মাদকের চালানগুলো ইরান মাঝির জামতলির সফিউল্লাহ কাটা সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকার বাড়িতে-আস্তানায় নিয়ে এসে নিজেদের মাঝে বণ্টন করতো। পর্যায়ক্রমে তারা বিভিন্ন উপায়ে ঢাকাসহ চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাতো। গতকাল শনিবার তারা আইসের এই বৃহৎ চালানটি উক্ত আস্তানায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে সেখান থেকে মাদকের চালানটি তারা চার ভাগে ভাগ করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের এজেন্টদের কাছ পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল।
র্যাব আরও জানান, গ্রেপ্তার ইমরান প্রকাশ ইরান মাঝি নলবুনিয়া ও পালংখালী এলাকার একজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। সে দীর্ঘ দিন ধরে মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত। সে মূলত মিয়ানমারের মাদক সিন্ডিকেটের সাথে সার্বিক সমন্বয় সাধন করত এবং তার নেতৃত্বে চক্রটি দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল ও নৌপথে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা নিয়ে আসতো। পরবর্তীতে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ক্রিস্টাল আইসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দুই বছর ধরে তারা মিয়ানমার থেকে ক্রিস্টাল মেথ (আইস) নিয়ে আসা শুরু করে। ইতোপূর্বে সমুদ্রপথে সে বেশ কয়েকটি আইসের চালান নিয়ে এসেছে।
ইরান মাঝি আরও জানায়- মিয়ানমার থেকে আনা এটিই তার সবচেয়ে বড় মাদকের চালান। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়াসহ বিভিন্ন থানায় মাদক, অস্ত্র, অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা সংক্রান্ত সাতটিরও বেশি মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে সে বিভিন্ন মামলায় ৪ বার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে এবং ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে। সে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।গ্রেপ্তারকৃত আরেক আসামি আলাউদ্দিন পুলিশের বহিষ্কৃত সদস্য। সে ২০১৭ সালে মাদক বহনের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেপ্তার হয়। তার নামে কক্সবাজারের উখিয়াসহ বিভিন্ন থানায় মাদক, দস্যুতা ও মারামারি সংক্রান্তে ৪টির অধিক মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে সে তিন বার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হয়েছে এবং কারাভোগ করেছে।