চলে গেলেন এইচ টি ইমাম

চট্টলা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম মারা গেছেন। বুধবার দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো এইচ টি ইমামের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন-

এইচ টি ইমামের জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৫ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরে। বাবা তাফসির উদ্দীন আহমেদ বি এ বি এল ও মা তাহসিন খাতুন। বাবার চাকরি সূত্রে শৈশবে রাজশাহীতে অবস্থানের কারণে সেখানেই প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তিনি।

পরবর্তীতে লেখাপড়া করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া ও কলকাতায়। ১৯৫২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেছেন ঢাকা কলেজিয়েট হাইস্কুল থেকে। এরপর ভর্তি হন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। এখান থেকেই ১৯৫৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এর পর ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে এবং সেখান থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বি এ ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৫৬ সালে। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করার পর রাজশাহী সরকারি কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এ সময় তিনি পাকিস্তানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬১ ব্যাচের সিএসপিদের মধ্যে তিনি ৪র্থ স্থান লাভ করেন এবং পাকিস্তান সরকারের উচ্চ পদে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স থেকে ‘উন্নয়ন প্রশাসনে’ পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন।

পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে সদস্য হিসেবে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেন। শুরুতে তিনি রাজশাহী কালেক্টরেটে ১৯৬২-১৯৬৩ মেয়াদে অ্যসিন্ট্যান্ট কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

এরপর তিনি পদোন্নতি লাভ করেন এবং ১৯৬৩-১৯৬৪ মেয়াদে নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক বা এসডিও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তিনি নারায়ণগঞ্জ মহকুমার এসডিও হিসেবে বদলি হন এবং প্রায় এক বৎসর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৫ সালে তিনি ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ এর মার্চ মাসে তিনি রাঙ্গামাটি জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্বে পালন করেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৫ সালের ২৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সরকারের ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত সাভারস্থ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত তিনি সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত পরিকল্পনা সচিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া যমুনা মাল্টিপারপাজ ব্রিজ অথরিটির এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদায় জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। তিনি ২০০৯ থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন।