বিএনপি নেতা এ্যাড: খন্দকার মাহবুব হোসেন মারা গেছেন

রাজনীতি ডেস্ক:

প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান, প্রবীণ আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের একাধিকবারের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী খন্দকার মাহবুব হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ১৯৩৮ সালের ২০ মার্চ বরগুনার বামনায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা খন্দকার আবুল হাসান ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ। প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয় সেখানেই। পরবর্তীতে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। ভর্তি হন নারায়ণগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ সময় তিনি খান সাহেব ওসমান আলীর পরিবারে অবস্থান করেন। উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় খন্দকার মাহবুব হোসেন ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন। নারায়ণগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিক পাস করেন। পরবর্তীতে ভর্তি হন ঐতিহ্যবাহী নটর ডেম কলেজে। ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল অ্যাসোসিয়েশনের ভিপি নির্বাচিত হন।

তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খানের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করায় কয়েকজন সহযোগীসহ তিনি পুনরায় গ্রেপ্তার হন। সামরিক আদালতে তাদের বিচার শুরু হয়। সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে তিনি নিজেই নিজের মামলা পরিচালনা করেন এবং মামলা থেকে অব্যাহতি লাভ করেন। তবে সামরিক শাসক তাকে এমএ পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়নি।

১৯৬৪ সালে আইন পাস করে তিনি আইন পেশায় যুক্ত হন।মুক্তিযুদ্ধের সময় নেপথ্যে থেকে সহায়তা করেন মুক্তিযোদ্ধাদের। ১৯৭১ সালের মার্চের মাঝামাঝিতে হাইকোর্টে আইনজীবীদের একটি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হলো বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন দেওয়ার। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানসহ আইনজীবীদের নিয়ে জেলা কোর্টে একটি সমাবেশের আয়োজন করেন। ওই সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বক্তব্য দেন তিনি। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা তার বাসাকে অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহার করতেন। আলমারিতে রাখা মোটা আইনি বইয়ের পেছনে লুকিয়ে রাখতেন গ্রেনেড।

১৯৬৭ সালে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আদালতের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে তিনি নিয়োগ পান। ১৯৮৮ সালের ১৭ জুলাই তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে চারবার নির্বাচিত হন এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইবার ( ২০০৭-২০০৮ ও ২০১২-২০১৫ সাল) দায়িত্ব পালন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে করেছেন অধ্যাপক ফারহাত হোসেনকে। দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক তিনি।সমাজসেবায় বহুমুখী অবদান রেখেছেন।

অন্ধ ও পঙ্গুদের জন্য ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (ভিটিসিবি)-এর ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি তিনি। শিশু সংগঠন কচিকাঁচার উপদেষ্টা এবং জসীমউদ্দীন পরিষদের সম্মানিত পৃষ্ঠপোষক। ওয়ার্ল্ড ব্লাইন্ড ইউনিয়ন, এশিয়ান ব্লাইন্ড ইউনিয়ন ও ঢাকা রোটারি ক্লাবের সদস্য।

এসব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ নানা পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন তিনি। জসীমউদ্দীন স্বর্ণপদক (২০০৬), কবি নজরুল স্বর্ণপদক (২০০৭), ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্বর্ণপদকসহ (২০০৮) বিভিন্ন পদকে ভূষিত হন তিনি।আইনজীবী হিসেবে তিনি অসংখ্য যুগান্তকারী মামলা পরিচালনা করেছেন। তার মধ্যে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সম্পর্কিত মামলা ( আতাউর মৃধা বনাম রাষ্ট্র, ৭৩ ডিএলআর (এডি) ২৯৮), শাজনীন হত্যা মামলা (সৈয়দ সাজ্জাদ মাইনুদ্দিন হাসান বনাম রাষ্ট্র, ৭০ ডিএলআর (এডি) ৭০), চাপা হত্যা মামলা (রাষ্ট্র বনাম খন্দকার জিল্লুর বারী, ৭০ ডিএলআর (এডি) ৭০) সালেহা খুকি হত্যা মামলা (এহতেশামুদ্দিন বনাম বাংলাদেশ, ৩৩ ডিএলআর (এডি) ১৫৪), আজম রেজা মামলা (রাষ্ট্র বনাম আজম রেজা, ৬২ ডিএলআর ৩৯৯), এরশাদ শিকদার বনাম রাষ্ট্র, ভিডিও ক্যাসেট মামলা (খালেদা আকতার বনাম রাষ্ট্র, ৩৭ ডিএলআর ২৭৫), অন্যতম।