শিশুতোষ চলচ্চিত্র “পঞ্চসঙ্গী” প্রিমিয়ার শো প্রদর্শন থিয়েটার ইনস্টিটিউটে

পঞ্চসঙ্গী চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার প্রদর্শনী শো’তে ডঃ অনুপম সেন বলেছেন, শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ বর্তমান সময়ে সাহসী প্রয়াস অমর কথাশিল্পী শওকত ওসমান একজন সমাজ সচেতন বহুমাত্রিক লেখক এবং সমাজ বীক্ষণ সুতীক্ষ্ণ, তার সৃষ্টিতে যাপিত জীবনের ছবি ফুটে উঠেছে, তাঁর রচিত শিশুতোষ গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ একটি সাহসী প্রয়াস।

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত পঞ্চসঙ্গী চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার প্রদর্শনীতে ডঃ অনুপম সেন উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

পঞ্চসঙ্গী চলচ্চিত্রের পরিচালক বিশিষ্ট নির্মাতা জাঁ নেসার ওসমানের সভাপতিত্বে পঞ্চসঙ্গী চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শোতে আরো বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি সাহিত্যিক লেখক সাংবাদিক আবুল মোমেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, সুপ্রভাত বাংলাদেশের সম্পাদক রুশো মাহমুদ, স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর নাট্যজন শেখ শওকত ইকবাল চৌধুরী।

একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য শিক্ষাবিদ ডঃ অনুপম সেন আরও

বলেন, আমরা আশা করি নির্মাতা জাঁ নেসার ওসমান পঞ্চসঙ্গী নির্মাণে সফল হয়েছেন এবং ভবিষ্যতে আরো ভালো ছবি আমাদের উপহার দেবেন।

ডঃ অনুপম সেন বলেন, শওকত ওসমানের মতো এত বড় মাপের একজন পুরুষের কাহিনী নিয়ে ভালো মানের একটি চলচ্চিত্র আমাদের জ্ঞান ওশিক্ষা ভান্ডার কে সমৃদ্ধ করবে, জাঁ নেসার ওসমান এই ছবিটি অত্যন্ত সুনিপুণতার সাথে নির্মাণ করেছে এবং বাংলা চলচ্চিত্রে একটি নতুন দিক উন্মোচন করলেন শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে, আমরা এই চলচ্চিত্রে সার্বিক সফলতা কামনা করি।

কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, শওকত ওসমান যখন চট্টগ্রামের কমার্স কলেজে বাংলা ভাষার শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবী ছিলেন তখন থেকে তাঁর সাথে আমার এবং চট্টগ্রামবাসীর পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা ছিল।

তিনি আরো বলেন, শওকত ওসমানের উপন্যাস নিয়ে শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ খুবই কঠিন কাজ, একটি ভালো মানের শিশুতোষ চলচ্চিত্র সব বয়সী মানুষের চিত্ত জয় করতে পারে, আমরা জানি গুপিগাইন বাঘাবাইন ও হিরক রাজার দেশ শিশুতোষ চলচ্চিত্র হলেও বড়দের কাছেও ছবি দুটি ভীষণ জনপ্রিয় ছিল, তিনি বলেন জাঁ নেসার ওসমান যে ছবিটা আমাদের দেখালেন আমরা আশান্বিত হই বাংলা চলচ্চিত্রের নবধারা যাত্রায়।

নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন, শওকত ওসমানের সৃজন কর্মের মধ্যে ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ উপযোগী ভালো আলো উপাদান রয়েছে, তাঁর ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাস নিয়ে আমিও নাটক বানিয়েছিলাম তবে কতটুকু সফল হয়েছি জানিনা, তাঁর কাহিনী নিয়ে জাঁ নেসার ওসমান পঞ্চসঙ্গী চলচ্চিত্র নির্মাণ করে সফল হয়েছেন, পঞ্চসঙ্গীর নির্মাণ কুশলতা আমাদের অভিভূত করেছে, সারাদেশে এই ছবি প্রদর্শন হলে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সবাই উপকৃত হবে।

দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ সম্পাদক রুশো মাহমুদ এই চলচ্চিত্র সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে এক সময় আকাল চলেছে কিন্তু এখন দর্শকরা অনেকটা সুস্থ চলচ্চিত্র পেয়ে সিনেমা হলমুখী, ভালো গল্প ও কন্টেন্ট নিয়ে যে ক’টি ভালো ছবি হচ্ছে সেগুলো দর্শক টেনে নিয়েছে এবং হল গুলোতে দর্শক উপচে পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক কালে যে সব ছবি নির্মাণ হয়েছে আমরা দেখেছি সে সব ছবি দর্শক গ্রহণযোগ্য হয়েছে, বাংলা চলচ্চিত্র তার হারানো গৌরব ফিরে পাচ্ছে, তিনি বলেন বিশিষ্ট কথাশিল্পী শওকত ওসমানের নন্দিত কিশোর গল্প পঞ্চসঙ্গী অবলম্বনে জাঁ নেসার ওসমান সরকারি অনুদানে যে ছবি বানিয়েছে তা এক কথায় অসাধারণ আমি এই ছবির সাফল্য কামনা করি, ছবির গল্প, নির্মাণ এবং কাহিনী সব কিছুর অসাধারণ সমন্বয় হয়েছে।

পঞ্চসঙ্গীর পরিচালক চলচ্চিত্র নির্মাতা জাঁ নেসার ওসমান তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, সরকারি অনুদান নিয়ে পঞ্চসঙ্গী নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক হোঁচট খেতে হয়েছে, ছবিটি নির্মাণ করে দর্শকের সামনে পৌঁছে দেয়াই ছিলো বড় চ্যালেঞ্জ, এই চ্যালেঞ্জ সম্পন্ন করতে গলদঘর্ম হতে হয়েছে তবুও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি একটা ভালো চলচ্চিত্র দর্শকদের কাছে হাজির করতে, কতটুকু পেরেছি তা দর্শক বিচার করবে, আশা করি ছবিটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।

তিনি বলেন, আমার সাথে যারা এই ছবি নির্মাণে সহযোগিতা করেছে আমি সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই, সবার প্রতি আমার অশেষ ধন্যবাদ। তিনি আরও বলেন, পঞ্চসঙ্গী নির্মাণে একটু সময় নিলেও চেষ্টা করেছি কথাশিল্পী শওকত ওসমানের এই গল্প নিয়ে ভালো মানের একটি চলচ্চিত্র দর্শকদের উপহার দেয়ার জন্য, আপনারা দর্শকরা সাথে থাকলেই আমাদের দীর্ঘ কষ্টের সফলতা বয়ে আনবে।

ক্রিটিভ ডিরেক্টর নাট্যজন শেখ শওকত ইকবাল বলেন, একটি ভালো মানের ছবি বানাতে হলে দক্ষ কারিগরি কুশলতার বিষয়টি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য,এখন ভালো মানের ছবির খুবই অভাব, ভালো মানের যে কটা ছবি হয়েছে সে কটা ছবি দর্শক লুফে নিয়েছে, পঞ্চসঙ্গী ছবিটি দক্ষ কারিগরি কুশলতার মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে, দর্শকরাও ছবিটা গ্রহণ করবে লুফে নেবে, আমরা ছবির সফলতা কামনা করি এবং ছবির পরিচালককে ধন্যবাদ জানাই মানসম্মত একটি ছবি উপহার দেয়ার জন্য।

পঞ্চসঙ্গী : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় তৎকালীন পাঁচজন শিশুর কাণ্ড কারখানা নিয়ে পঞ্চসঙ্গীর নির্মাণ, পূর্ব-পাকিস্তানের পাঁচটি পথশিশু ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের মনে পাকিস্তানীদের প্রতি ধীরে ধীরে অসন্তোষ জমতে থাকে, গণঅভ্যুত্থানের সময় ৫টি শিশু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে এবং ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ এর কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে করতে শিশুরা মারা যায়।

অমর কথাশিল্পী শওকত ওসমান রচিত কিশোর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচিত্রে পঞ্চসঙ্গীর সাহায্যে অতীতের সাথে বর্তমানের একটি মেলবন্ধন করার চেষ্টা হয়েছে। হলভর্তি দর্শকের উপস্থিতিতে পঞ্চসঙ্গী পরপর চারটি প্রদর্শনী টিআইসি মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয়।