নিজস্ব প্রতিবেদক:
রমজান মাসে জনভোগান্তি হ্রাসে যানজটমুক্ত সড়ক চান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোারেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
বুধবার (২২মার্চ) চসিকের নির্বাচিত ৬ষ্ঠ পরিষদের ২৬তম সাধারণ সভায় মেয়র বিভিন্ন সেবা সংস্থার সাথে এ বিষয়ে সমন্বয়ের জন্য দিক-নির্দেশনা দেন।
সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বলেন, পবিত্র রমজান মাসে মানুষ পরিবারের সাথে ইফতার করতে চায় আর ঈদের পোষাক কিনতে স্বচ্ছন্দে চলতে চায়। এজন্য রোজার মাস ও ঈদের সময় সড়কে যাতে যানজট না হয় সে বিষয়ে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য সেবা সংস্থার একযোগে কাজ করা প্রয়োজন। কাউন্সিলরবৃন্দ এবং প্রকৌশলীরা ওয়ার্ডের সড়কগুলোতে আলোকায়ন নিশ্চিত করবেন। আর হকারদের অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। রোজায় বাজারগুলোর রাস্তা যাতে ব্যবহারযোগ্য থাকে এবং নালাগুলো যাতে পরিস্কার থাকে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছি।
“বর্তমানে ব্যাটারি রিকশা জনভোগান্তির কারণ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে এ রিকশাগুলো বিপুল বিদ্যুৎ ব্যয় করছে। এ ব্যাটারি রিকশা কেবল বন্ধ করলে হবেনা, এর বিকল্পও আমাদের জনগণকে দিতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা সৌরবিদ্যুৎচালিত রিকশা চালুর বিষয়ে অনেকটা এগিয়েছি।
সৌরচালিত রিকশাগুলো বর্ষাকালে কিছুটা ধীরগতির হয়ে গেলেও সারা বছর বেশ ভালো সেবা দেয়। এধরনের বিকল্প হাজির না করে ব্যাটারি রিকশা বন্ধ করা কঠিন হয়ে যাবে।”
মেয়র নগরীর নিউমার্কেট, রেয়াজউদ্দিন বাজারসহ গুরুত্বপুর্ণ স্থানসমূহে হকারদের মাধ্যমে অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠা দোকান উচ্ছেদ, বহদ্দারহাট থেকে বারিকবিল্ডিং পর্যন্ত রিক্সা চলাচল বন্ধ, নগরীর ফøাইওভারের নীচে এবং অন্যান্য উপযুক্ত স্থানে সড়কসমূহে পে পার্কিং চালুকরণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন।
সভায় প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলরবৃন্দসহ চসিকের কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এসময় আলোচনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুরাদপুর রোড ও মূল সড়কের সংযোগ স্থলে রাস্তা কর্তনের ফলে সৃষ্ট জনদূর্ভোগ লাঘব করতে হবে।
মহেশ খালের মুখে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ী সুইচ গেইট নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় জোয়ারের পানি না আপাতত অস্থায়ী সুইচ গেইট এবং উক্ত খালের উপর নির্মিত সেতুতে নিরাপত্তার স্বার্থে রেলিং স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পূর্বে খালের ভিতর দিয়ে পানি চলাচলের সুবিধার্থে খালের ভিতরে স্তুপীকৃত মাটিগুলো দ্রুত অপসারণ করতে হবে।”
সেবা সংস্থগুলোর মধ্যে কার্যক্রমের সমন্বয়ের আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী চসিকের ইতিহাসের সর্বোচ্চ আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছেন। এই প্রকল্পসহ চলমান প্রকল্পগুলো শেষ হলে চট্টগ্রামের বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। তবে, সেবা সংস্থাগুলো যদি চসিকের সাথে সমন্বয় না করলে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের সুফল হুমকির মুখে পড়বে।
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে টানেল থেকে ফ্লাইওভার নির্মাণসহ ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করায় চট্টগ্রামের সন্তান এবং মেয়র হিসেবে চট্টগ্রামের জনগণের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে চাই। মেয়র জানান, গৃহকর নিয়ে কারো আপত্তি থাকলে আপিলের মাধ্যমে কর নেয়া হচ্ছে। জনগণ গৃহকর দিয়ে হাসিমুখে ঘরে ফিরছে।
সভায় বিগত সাধারণ সভার কার্যবিবরণী, দরপত্র কমিটির কার্যবিবরণী এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী অনুমোদিত হয়। স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতিগণ তাদের নিজ নিজ স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী পেশ করেন। সভায় চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলরবৃন্দ, সচিব খালেদ মাহমুদসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ এবং নগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।