চট্টলা ডেস্কঃ দালালের খপ্পরে পড়বেন না,বিদেশগামীদের সর্তক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সোনার হরিণের আশায় কেউ দয়া করে অন্ধের মতো ছুটবেন না। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। বুধবার (৬ জানুয়ারি) বেলা সোয়া ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ২০২১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ অনেক সময় নানা কথা চিন্তা করে, ভাবে বিদেশে গেলে অনেক অর্থ উপার্জন করবে, কিছু দালালের খপ্পরে অনেকে পড়ে অন্ধকারের পথে পা বাড়ায়, আমি তাদের বলবো, আপনারা এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হবেন না। দালালের খপ্পরে পড়বেন না।
আমাদের এখন দেশে কাজেরও যেমন অভাব নেই, খাবারেরও অভাব নেই আল্লাহর রহমতে। কাজেই সোনার হরিণের আশায় কেউ দয়া করে অন্ধের মতো ছুটবেন না। আপনারা নিবন্ধন করে তার মাধ্যমে যান, সেটাই আমরা চাই।
আপনারা কারো প্ররোচনায় বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়লে সেটা নিজেদের জন্য, পরিবারের জন্য খুবই কষ্টকর, খুবই ক্ষতিকর। আপনারা জানেন কিছুদিন আগে লিবিয়ায় কতজনকে জীবন দিতে হলো। এমন পরিস্থিতির শিকার যেন আমার দেশের মানুষকে হতে না হয়।
অনেক সময় যারা বিদেশে যাবে, তারা ধোকায় পড়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে, এজন্য ভিটেমাটি, জমি বিক্রি করে অথবা বন্ধক রাখে। কিন্তু সোনার হরিণ ধরবার জন্য বিদেশে ছোটে, সেখানে গিয়ে বেতনও পাচ্ছে না। মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। একদিকে নিজেদের সম্পত্তি হারানো, অন্য দিকে উপযুক্ত কাজের অভাব। এ ধরনের অবস্থাও আমরা দেখেছি।
বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিটেমাটি বিক্রি বা বন্ধক না রেখে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বিদেশ যাবেন, তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যেতে পারবেন, খুব স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়। এ টাকা ব্যাংকে পাঠিয়ে ঋণ শোধ করতে পারবেন। জমিজমা বিক্রি বা বন্ধক রাখতে হবে না।
বিদেশে যাওয়ার আগে নিবন্ধন করার করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে যেসব ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি, তারই মাধ্যমে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করার সুযোগ আছে। আর নিবন্ধিত যারা যেখানেই কাজের সুযোগ পায়, তাদের সেখানে পাঠানো হয়। কাজেই সেজন্য ধৈর্য্য ধরতে হবে।
এবার আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসসের প্রতিপাদ্য ‘মুজিববর্ষের আহ্বান দক্ষ হয়ে বিদেশ যান’ এর প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো যারা বিদেশে যাবেন, তাদের কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা। তাদের বিভিন্ন ট্রেনিং দেওয়া, তাদের শিক্ষা দীক্ষা থেকে শুরু করে কে কি কাজ করবেন, সে কাজে একটা যোগ্যতা অর্জন করা। যাতে করে বাইরে গিয়ে তাদের কোনো বিপদে পড়তে না হয়। সেদিকে আমরা বিশেষভাবে পদক্ষেপ নিয়েছি।
সরকার প্রধান বলেন, যে-ই যখন বিদেশ যাবেন, কি কাজ করতে যাচ্ছেন, তার ওপর ট্রেনিং নিতে হবে। নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। দক্ষ করে গড়ে তুলতে যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমরা ট্রেনিং সেন্টার করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি একটা অনুরোধ করবো, আমাদের এ শ্রমিক অভিবাসনের সঙ্গে যারা জড়িত, বিশেষ করে রিক্রুটিং এজেন্ট থেকে শুরু করে আমাদের মন্ত্রণালয়, তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, এদেশের মানুষও কিন্তু মানুষ, সেভাবে তাদের মর্যাদা দিতে হবে।
সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের নির্দেশ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, যারা বিদেশে যেতে চান, তাদের কর্মসংস্থান ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, তাদের নিরাপত্তা ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, বিশেষ করে মেয়েরা, তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত যারা এবং বিদেশে কর্মী পাঠানোর যেসব সংগঠন আছে, তাদের আমি দায়িত্বশীলভাবে ভূমিকা পালন করার অনুরোধ করবো। কারণ, দায়িত্বটা আপনাদের ওপরই বর্তায়।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।